তারাপীঠের লজে ঘটে যাওয়া খুন, শ্লীলতাহানির মতো একাধিক ঘটনার পরেও টনক নড়েনি বাঁকুড়ার লজ মালিকদের। মঙ্গলবার গোবিন্দনগরের লজে পরিচয়হীন বধূর দেহ উদ্ধারের ঘটনা তারই প্রমাণ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মাস খানেক আগেই বাঁকুড়া সদর থানায় লজ মালিকদের ডেকে আগন্তুকদের পরিচয়পত্র রাখার বিষয়ে সচেতন করা হয়েছিল। লজগুলিতে সিসিটিভি লাগানোরও নির্দেশ দেওয়া হয় ওই বৈঠকে। কিন্তু তারপরেও দায় সারা ভাবে কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। কারণ, গোবিন্দনগরের লজে খুন হওয়া বধূটিরও কোনও পরিচয়পত্র রাখেনি লজ কর্তৃপক্ষ। লজ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় ন’বছরের একটি বাচ্চা-সহ এক ব্যক্তির সঙ্গে লজে ওঠেন ওই বধূ। নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েই লজে উঠেছিলেন। ওই লজের ম্যানেজার স্বপন চট্টোপাধ্যায়ের সাফাই, “সব ক্ষেত্রেই লজের অতিথিদের পরিচয়পত্র রাখা হয়। যে দিন ওই দম্পতি লজে উঠেছিলেন, সে দিন লজে একটি অনুষ্ঠানে কর্মীরা ব্যস্ত ছিল। সেই কারণেই এই ভুল হয়ে গিয়েছে।” এই ভুলের খেসারত দিতে হল বধূটিকে। মঙ্গলবার লজের ওই ঘর থেকে রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। ঘরে কেউ ছিল না। লজের রেজিস্টারে যে ফোন নম্বর উল্লেখ ছিল, তাও ভুল।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের তারাপীঠে একটি লজ থেকে এক বধূর গলা কাটা দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সে ক্ষেত্রেও ভুয়ো স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বধূটি এক ব্যক্তির সঙ্গে লজে উঠেছিলেন। পুলিশের নির্দেশ থাকার পরেও কেন আগন্তুকদের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে রাখার ব্যাপারে সচেতন হচ্ছে না লজ কর্তৃপক্ষ? বাঁকুড়া হোটেল অ্যান্ড লজ ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তথা গোবিন্দনগরের ওই লজটির মালিক উদয় নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, “আগন্তুকদের পরিচয়পত্র রাখার বিষয়ে জেলার লজ কর্তৃপক্ষগুলি সচেতন রয়েছে।” যদি সচেতন থাকে, তা হলে এই ঘটনা ঘটল কী করে? তাঁর দাবি, “কর্মীরা পরিচয়পত্র চেয়েছিলেন। কিন্তু ওনারা তা দিতে পারেননি।” তা ছাড়া, দম্পতি পরিচয়ে লজে ওঠা ওই বধূ ও তাঁর সঙ্গীর বয়স প্রায় ৪৫ বছরের বেশি। তাঁদের একটি ছেলেও ছিল। এই সব দেখেই কর্মীরা তাঁদের উপর বিশ্বাস করেই পরিচয়পত্র না দেখেই লজে থাকতে দিলেন কী করে? তাঁর আক্ষেপ, “ওই দম্পতিই যে এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে তা কেউ কল্পনাও করেনি।” পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “পরিচয়পত্র না নিয়ে লজে কাউকে থাকতে দেওয়া উচিৎ হয়নি। আমরা ওই লজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।”
এ দিকে, বুধবার দুপুর পর্যন্ত বধূটির পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি বাঁকুড়া পুলিশ। বধূটির ছবি জেলার প্রায় সব কটি থানাতেই পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। রেজিস্টারে ওই বধূর সঙ্গী তাঁর নিজের নাম লিখেছিলেন চিন্ময় সরকার এবং ঠিকানা দিয়েছিলেন সোদপুর, কলকাতা। ঠিকানাটি খতিয়ে দেখতে কলকাতা পুলিশের সব কটি থানার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে বাঁকুড়া পুলিশ। লজের কর্মীদের কাছ থেকে পুলিশ খবর পায় ঘটনার আগের দিন, ওই বধূটি তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে শুশুনিয়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানেও তদন্তে যায় বাঁকুড়া পুলিশের একটি দল। |