দশ বছরেও সংস্কার হয়নি, সেচের অভাবে
মার খাচ্ছে ৩০০ একরের চাষ
ল সংরক্ষণের জন্য ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পের ঢক্কানিনাদ চলছে রাজ্য জুড়ে। অথচ বাঁকুড়ার মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলে জল সংরক্ষণের জন্য তৈরি মাটির বাঁধের একটি মিনি চেকড্যাম পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর জন্য প্রশাসনিক উদাসীনতা দায়ী করেছেন বাসিন্দারা। রাইপুর ব্লকের মেলেড়া পঞ্চায়েত এলাকায় একটি খালের উপর বাঁধ দেওয়া ওই মিনি চেকড্যাম গত ১০ বছর আগে ভেঙে গিয়েছে। এর ফলে সেচের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার চাষিরা। এলাকার কৃষকদের ক্ষোভ, ওই খালে নতুন করে পাকা বাঁধ দেওয়ার জন্য প্রশাসনের সবস্তরে বারবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও কাজ হয়নি।
খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” একই সঙ্গে মহকুমাশাসকের আশ্বাস, “এলাকার মানুষের সেচের সঙ্গে জড়িত বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারিকুল থানার ফুলকুসমার ধাও এলাকা থেকে ওই খাল চামটাবাদের পাশ দিয়ে মেলেড়া, বেনাগেড়িয়ার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বড়কোলা গ্রামের শেষে তারাফেনি নদীতে মিশেছে। মেলেড়া পঞ্চায়েতের বেনাগেড়িয়া মৌজায় একটি খালের উপরে বাঁধ দিয়ে ১৯৮০-৮১ সালে ওই মিনি চেকড্যাম তৈরি হয়েছিল। দু’টি পর্যায়ে কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল। রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির তরফে এ জন্য খরচ করা হয়েছিল প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। ওই চেকড্যামে বসানো লকগেট থেকে সরু দাঁড়ার মধ্য দিয়ে জল পৌঁছত লাগোয়া জমিতে। ওই চেকড্যাম থেকে ধাতকীডাঙা, বেনাগেড়িয়া, ঝিঝিরডাঙা, সাতখুলিয়া, বড়কোলা, মেলেড়া-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৩০০ একর জমিতে সেচের জল মিলত। এ ছাড়া, ওই চেকড্যামের জলে এলাকার মানুষ গ্রীষ্মকালে ভীষণভাবে উপকৃত হতেন।
ভগ্নপ্রায় মেলেড়া চেকড্যাম। —নিজস্ব চিত্র।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, খালের জল আটকানোর জন্য পাথর সিমেন্টের প্রায় ৪০ ফুটের যে কংক্রিটের বাঁধ দেওয়া হয়েছিল তার আর অবশিষ্ট নেই। সিমেন্টের একখণ্ড চাঁই শুধু পড়ে রয়েছে খালের একপাশে। জলের তোড়ে শুধু ওই বাঁধই ভাঙেনি, পাড়ও ধসে পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বাঁধ ভেঙে পড়ায় খালের জল সব সময় বইয়ে চলেছে। জল আর ধরে রাখা যাচ্ছে না। ফলে খালের জল ধরে রেখে যে সেচের সুবিধা আগে পাওয়া যেত, তা পুরোপুরি বন্ধ। বড়কোলা গ্রামের চুনারাম হেমব্রম, ধরম সর্দার, সাতখুলিয়া গ্রামের সনৎ সিংহদের মতো এলাকার কৃষকদের বক্তব্য, “স্নান করা থেকে শুরু করে জমিতে সেচের জল মিলছিল ওই মিনি চেকড্যাম থেকে। ১০ বছর আগে জলের তোড়ে খালের উপর প্রায় ৪০ ফুটের বাঁধ ভেঙে ধুলিসাৎ হয়ে পড়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। জলের অভাবে রবি ও বোরো চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ক্ষতি হচ্ছে আমন চাষেরও।” এলাকার কৃষক কাশীনাথ গরাইয়ের ক্ষোভ, “সিপিএমের আমলে ওই বাঁধ তৈরি হয়েছে। ওদের আমলে ভেঙেও পড়েছে। আমরা বারবার ওখানে নতুন করে কংক্রিটের বাঁধ দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু সবাই চোখে ডুলি পরে থাকায় কারও ঘুম ভাঙেনি।”
মেলেড়া পঞ্চায়েতের প্রধান তথা রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি রাজকুমার সিংহ সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে তিনি সিপিএমকে আক্রমণ করে বলেন, “সিপিএম এলাকার উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি। ওই চেকড্যাম নতুন করে তৈরি হলে এলাকার অর্থনীতি আমূল বদলে যাবে।” তাঁর আশ্বাস, “স্থানীয় প্রশাসন ওই চেকড্যাম থেকে জলের ব্যবস্থা না করলে এলাকার মানুষের স্বার্থে প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে দরবার করব।” রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় হাঁসদা বলেন, “সবে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। ওই মিনি চেকড্যাম সিপিএমের আমলে তৈরি হয়েছিল। নতুন করে ওখানে মিনি চেকড্যাম করা যায় কী না, তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.