জনসংখ্যার তুলনায় উত্তর ২৪ পরগনায় ডাল ও তৈল বীজের উৎপাদন যথেষ্ট নয়। তাই উত্তর ২৪ পরগনা জেলাকে খাদ্যে স্বনির্ভর করতে ও খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ডাল ও তৈল বীজের উৎপাদন বাড়ানো জরুরি বলে মনে করছেন রাজ্যের কৃষি কর্তারা। সম্প্রতি রাজ্যের কৃষি আধিকারিকদের সংগঠন স্টেট এগ্রিকালচারাল টেকনোলজিস্ট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে হাবরায় ‘খাদ্য নিরাপত্তায় আমাদের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়। সেখানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গৌতম ভৌমিক, রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সব জেলার সকল কৃষিকর্তারা হাজির ছিলেন। ছিলেন জেলার কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর উজ্জ্বল সরকারও।
হাবরা ১ ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা দেবব্রত পাল বলেন, “উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ধান, ডাল ও তৈলবীজের উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই। ধানের ফলন জনসংখ্যার অনুপাতে বেশ বেড়েছে। কিন্তু ডাল ও তৈলবীজ পিছিয়ে রয়েছে। জেলাকে খাদ্যে স্বনির্ভর করতে ও খাদ্যে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ডাল ও তৈল বীজের উৎপাদন বাড়াতে হবে।” প্রযুক্তি ও রাসায়নিক এবং জৈব সার ব্যবহার করে তা করা সম্ভব কি না তা নিয়েও আলোচনা হয়।
সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, ডাল ও তৈলবীজের চাষ ভাল হলেও চাষিরা তার সুফল পান না। সব থেকে খারাপ জমিতে চাষিরা এই ডাল বা তেল শস্য চাষ করেন। উন্নত প্রযুক্তি ও জৈব বা রাসায়নিক সার তাঁরা ব্যবহার করেন না। এ নিয়ে চাষিদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এ দিনের অনুষ্ঠানে জেলার ২৫০ জন চাষির মধ্যে ডাল ও তৈলবীজ চাষে আগ্রহ বাড়াতে ‘টোকেন’ হিসেবে ১ কেজি তৈলবীজ ও ৫ কেজি রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনায় এখন জনসংখ্যা ১ কোটি ৯ লক্ষ। তৈলবীজ চাষ হয় ৪৫ হাজার ৬৩৪ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ১৩৮৬ কেজি। প্রযুক্তি ও প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করা হলে তা বাড়িয়ে হেক্টর প্রতি ১৫০০ কিলোগ্রাম করা সম্ভব বলেও জানান কৃষি কর্তারা।
সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলায় রবি মরসুমে ডাল উৎপাদনের এলাকা ৬৪২৭ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে ৯২৩ কিলোগ্রাম ডাল উৎপাদন হয়। খরিফ মরসুমে ১৩৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়, প্রতি হেক্টরে ৮৪৭ কিলোগ্রাম ডাল উৎপাদন হয়। কিন্তু প্রযুক্তি ও সার ব্যবহার করলে রবি মরসুমে ও খরিফ মরসুমে ফলন বাড়িয়ে ১২০০ কেজি ও ১১৫০ কেজি পর্যন্ত করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি আধিকারিকেরা। দেবব্রতবাবু বলেন, “প্রযুক্তি ও সার ব্যবহার করে যেমন চাষের খরচ কমবে, তেমনই ফলন বাড়বে।”
আলোচনাচক্রে চাষিদের মধ্যে ডায়েরি বিতরণ করা রয়েছে। তাতে চাষিরা কী কী প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন, তার তালিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতি শনি ও রবিবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাল ও তৈলবীজ চাষ করার জন্য শিবির করে চাষিদের বোঝানো হচ্ছে বলেও জানান সংগঠনের সদস্যেরা। |