জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা শহর। পুরসভাও বটে। পাশ্ববর্তী কলকাতা শহর ছাড়াও জেলার অন্যান্য অংশের সঙ্গে বাস যোগাযোগ রয়েছে ডায়মন্ড হারবারের। তা ছাড়া রাজ্যের পর্যটনের ক্ষেত্রেও সুনাম রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই মহকুমাশহরের। এখানে রয়েছে সরকারি ট্যুরিস্ট লজ, হোটেল। কিন্তু যাত্রীদের সুবিধার্থে আজও এখানে কোনও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস গড়ে ওঠেনি। এ নিয়ে অনেক বার দাবি উঠলেও বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তা বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ দিনের পর দিন বেড়েছে জনসংখ্যা। বেড়েছে বাসের সংখ্যাও। রাজ্যে সরকার বদলের পরে বাস টার্মিনাসের পুরনো দাবি ফের ওঠে। কিন্তু অভিযোগ, নতুন সরকারের আমলে প্রায় তিন বছর কাটতে চললেও এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। স্থানীয় মানুষের আরও অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রীরা এখানে এসে নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা বললেও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরির ব্যাপারে তাঁদের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাস টার্মিনাস তৈরি না হওয়ার কারণ হিসেবে জমি না পাওয়ার সমস্যাই তুলে ধরেছেন ডায়মন্ড হারবার পুরসভার উপ-প্রধান পান্নালাল হালদার। তিনি বলেন, ‘‘মহকুমা হাসপাতালের কাছে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ২ একর পুকুর ও জমি রয়েছে। কিন্তু ওই জমি নিতে গেলে ওই দফতরের অনুমতি দরকার। এ জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।” |
স্থানীয় সূত্রের খবর, ডায়মন্ড হারবার শহর থেকে কলকাতা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকশো বাস নিয়মিত যাতায়াত করে। কিন্তু নির্দিষ্ট টার্মিনাস না থাকায় বাস রাখতে একদিকে যেমন সমস্যায় পড়েন বাস মালিকেরা, তেমনই বাস পাওয়ার ক্ষেত্রে নিত্য সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের। ডায়মন্ড হারবার শহর থেকে রায়দিঘি পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রাস্তা। ওই রুটে চলে এম-১০ রুটের মিনিবাস। সারা দিনে ৩০ থেকে ৩৫টি বাস চলাচল করে। কিন্তু টার্মিনাস না থাকায় বাসগুলি ছাড়ার আগে দাঁড়িয়ে থাকে কলেজ রোডের পাশে। একেই অপরিসর রাস্তা, তার উপর রাস্তার ধারে বাস দাঁড়িয়ে থাকায় যানজটের সমস্যা দেখা দেয়। ডায়মন্ড হারবার থেকে মন্দির বাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুর ও ধর্মতলায় যাতায়াত করে এস ডি-১৮ রুটের বাস। শহরের আশপাশে কোনও বাস রাখার জায়গা না থাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে একটি স্ট্যান্ডে বাস রাখা হয়। গঙ্গাধরপুর থেকে এস ডি-১৯ রুটের বাস ধর্মতলা, নামখানা থেকে ধর্মতলা, বকখালি থেকে ধর্মতলা বাস চলাচল করে। পাথরপ্রতিমার রামগঙ্গা থেকে এস ডি-১১ রুটের মিনিবাস রামনগরের নুরপুর পর্যন্ত এবং পাথরপ্রতিমা বাজার থেকে রায়চক চলাচল করে। মন্দিরবাজারের বিজয়গঞ্জ বাজার থেকে ফলতার নতুন রাস্তা মোড় ও বুড়ুল থেকে কুলপির রাধানগর বাজার পর্যন্ত মিনি চলাচল করে। ওই সব রুটের সমস্ত বাস ডায়মন্ড হারবার হয়ে যাতায়াত করলেও রাতে বেশ কিছু রুটের বাস যাত্রীর অভাবে ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত চলাচল করে। টার্মিনাস না থাকায় সেগুলিও রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে রাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থেকে যায়।
নিত্যযাত্রী থেকে ডায়মন্ড হারবারে নানা কাজকর্মে আসা লোকজনের বক্তব্য, টার্মিনাস থাকলে সেখানে গিয়ে তাঁরা নিশ্চিন্তে তাঁদের গন্তব্যে যাওয়ার বাস ধরতে পারেন। কিন্তু তার বদলে তাঁদের রাস্তায় ছোটাছুটি করে বাস ধরতে হয়। যাত্রীদের পাশাপাশি বাসকর্মীদের অভিযোগ, কোনও টার্মিনাস না থাকায় রাস্তায় বাস রাখার কারণে মাঝেমধ্যেই পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হয়। তা ছাড়া বহু বাসকর্মীর বাড়ি দূরে হওয়ায় তাঁরা রাতে বাড়ি ফিরতে পারেন না। টার্মিনাস বা কোনও রাতের আশ্রয় না থাকায় শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় তাঁদের বাসেই রাত কাটাতে হয়। রয়েছে শৌচাগারের সমস্যাও। |