ফুটবল মাঠে প্রতিদিন আরও উন্নতি করতে তাঁকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেন লিওনেল মেসি।
অকপট স্বীকারোক্তিটি যাঁর, নাম তাঁর ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো!
ফিফার বর্ষসেরার দৌড়ে সদ্য মেসিকে হারিয়ে ব্যালন ডি’অর জয়ী সিআর সেভেনের সাফ কথা, সেরার শিরোপার জন্য চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে বিরামহীন ছায়াযুদ্ধটাই তাঁকে প্রতিবার নিজেকে ছাপিয়ে যেতে তাতায়। “মেসি আর আমি দু’জনেই বিশ্বের সেরা হতে চাই। প্রতিযোগিতাটা আছে বলেই আমরা একে অন্যকে আরও ভাল ফুটবলার হয়ে উঠতে সাহায্য করছি,” বলেছেন রোনাল্ডো।
মেসির সঙ্গে মাঠের টক্করকে পয়লা নম্বর প্রেরণা বললেও রোনাল্ডোর এই তালিকায় আরও নাম রয়েছে। বলেছেন, “যে কোনও পর্যায়েই প্রতিযোগিতা আমাকে আরও উন্নতি করার প্রেরণা দেয়। শুধু মেসি নয়, প্রিমিয়ার লিগ বা অন্য লিগগুলোয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে যারা ভাল করছে, আমার প্রতিযোগিতা তাদের সঙ্গেও।” এই তালিকায় রয়েছে লুই সুয়ারেজ, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা, নেইমার, গ্যারেথ বেল, দিয়েগো কস্তা, রামাদেল ফালকাও-এর মতো তারকার নাম। নেই ফ্রাঙ্ক রিবেরি।
তবে তাঁর বর্ষসেরা হওয়া নিয়ে ফরাসি তারকার বিষোদ্গারে তিনি যে চরম বিরক্ত ফরাসি কাগজে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেটা বুঝিয়ে দিয়ে বলেছেন, “কেউ কেউ দাবি করেছে আমি নাকি যোগ্য হিসাবে ব্যালন ডি’অর পাইনি। পেয়েছি আগে থেকেই আমাকে দেওয়া হবে ঠিক ছিল বলে। কথাগুলো শুনে প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। আরে বাবা, আমিই পুরস্কারটা পাব জানা থাকলে অন্তত নিজের ভাষণটা তো আরও ভাল ভাবে তৈরি করে নিয়ে যেতাম!”
রোনাল্ডোর বিশ্বাস, তাঁর সঙ্গে মেসি আর রিবেরির প্রতিযোগিতায় আসল লাভ হয়েছে ফুটবলের। বলেছেন, “রিবেরি এই মরসুমে অসাধারণ খেলেছে। মেসিও দুর্দান্ত সব গোল করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুরস্কারটা আমি পেলাম। এতে একটাই জিনিস জোর দিয়ে বলা যায়, বছরটা ফুটবলের জন্য অসাধারণ গিয়েছে আর প্রচুর গোল হয়েছে।” |
এস্প্যানিওলের বিরুদ্ধে কোপা দেল রে-র ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ছবি: এপি। |
২০১১ এবং ’১২-য় বর্ষসেরার দৌড়ে মেসির কাছে টানা হারার পর এ বছর তিনি অসম্ভব নার্ভাস ছিলেন বলে দাবি করেছেন রোনাল্ডো। ফিফার পুরস্কারের জন্য ভোট নেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া, প্রাক-পুরস্কার পর্বে কে জিতবেন তা নিয়ে জল্পনা এ সব নাকি রোনাল্ডোর ঘুমই কেড়ে নিয়েছিল। সিআর সেভেনের কথায়, “অসম্ভব টেনশনে ছিলাম। প্রথমে বলা হচ্ছিল আমিই জিতব। তার পরে আলোচনায় চলে এল ফ্রাঙ্ক রিবেরি। পরে মেসির নামটাও উঠতে লাগল। সেই সময় কোনও দিকে কান দিতে ইচ্ছে করত না কিন্তু যা বলা হচ্ছে তাতে প্রভাবিত না হয়েও থাকা সম্ভব ছিল না। শেষে তো আমার মা পর্যন্ত জিজ্ঞাসা শুরু করে, আমি আদৌ জিতব কি না!” পুরস্কারের ফয়সালা হয়ে যাওয়ায় এখন তিনি শান্তি পেয়েছেন জানিয়ে রোনাল্ডো বলেছেন, “পুরস্কার অনুষ্ঠানের ঠিক আগের রাতের এসপানিয়ল ম্যাচেও আমি খুব নার্ভাস ছিলাম। শুধু ওই ম্যাচটাই নয়, আগের কয়েকটা সপ্তাহও খুব আনচান করে কাটিয়েছিলাম।”
২০০৮-এর পর তাঁর দ্বিতীয় ব্যালন ডি’অর হলেও এ বার পুরস্কার পাওয়ার মুহূর্তটা আরও বেশি আবেগের ছিল রোনাল্ডোর জন্য। কারণ এ বার নাকি ভাবতেই পারেননি তিনি জিতবেন। রোনাল্ডোর কথায়, “পেলে যখন আমার নামটা নিলেন, বিশ্বাস হচ্ছিল না! আমার কোনও প্রত্যাশা ছিল না। তাই জিতেছি শুনে অসম্ভব খুশি আর আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। বিশেষ করে আমার ছেলে যখন ছুটে আমার কোলে চলে এল, নিজেকে আর সামলাতে পারিনি, কেঁদে ফেলি। তার পরে পরিবারের বাকিদের দিকে তাকিয়ে কান্নাটা আরও বেড়ে গেল।”
ইতিমধ্যেই অবশ্য ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে শুরু করে দিয়েছেন সদ্য পর্তুগালের সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়া মহানায়ক। বলেছেন, “ব্যালন ডি’অর জিতেছি বলে কিন্তু কোনও ঢিলেমির জায়গা নেই। প্রত্যেক ফুটবলার এই পুরস্কারটা জেতার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু এটা পাওয়া মানে মোটেই সব স্বপ্ন সার্থক হওয়া নয়। রিয়াল মাদ্রিদ আর পর্তুগালের হয়ে সামনের দিনগুলোয় আরও অনেক কিছু জিততে চাই।”
আর তার জন্য আরও বেশি খাটতে তৈরি সিআর সেভেন। এবং শিখে চলতে চান বাকিদের কাছ থেকে। রোনাল্ডোর কথায়, “আমি বরাবর অন্যদের কাছ থেকে শিখেছি। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে গ্যারি নেভিল আর রায়ান গিগসের থেকে। রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর রাউল, সালগাদোর কাছে আর জাতীয় দলে লুই ফিগো, রুই কস্তা, ডেকো, ফের্নান্দো কুতোর মতো সিনিয়রদের কাছে।” শেখার এই প্রক্রিয়াটার পাশে পেশাদারিত্বকেও নিজের সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি বলছেন তিনি। “প্লেয়ার হিসাবে আপনার সাফল্যের ৭০ শতাংশ নির্ভর করে আপনি কতটা পেশাদার তার উপর।”
এই পেশাদারিত্বটাই তাঁর ফুটবল সংস্কৃতি জুড়ে, দাবি করে রোনাল্ডো বলেছেন, “আমি বরাবর অসম্ভব পেশাদার। সেটাই আমার ফুটবল সংস্কৃতি। যদি পরিশ্রম করে যাই আর উচ্চাকাঙ্খা ধরে রাখতে পারি, তা হলে আমাকে বিশ্বের সেরা হওয়া থেকে কেউ রুখতে পারবে না।”
এলএম টেনকে কি নতুন কোনও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন সিআর সেভেন? |