হয়নি সংস্কার, ধুঁকছে সাতটি ইকো পার্ক
র্থের অভাবে হয়নি সংস্কার। আর তাই বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে ধুঁকছে মেদিনীপুর সদর মহকুমার সাতটি ইকো ট্যুরিজম পার্ক।
দীর্ঘ অশান্তির অতীতকে পিছনে ফেলে জঙ্গলমহলে পর্যটনের প্রসারে একাধিক প্রকল্প নিচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু শীতের মরসুমে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা এই ইকো ট্যুরিজম পার্কগুলির অবস্থা তথৈবচ। সমস্যা অনেক, কোথাও পার্কের পিকনিক সেডগুলো সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। মেঝেতে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। আবার কোথাও পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। ফলে, পিকনিক করতে এসে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে লোকজনদের। পরিচর্যার অভাবে পার্কের বাগানে লাগানো গাছগুলি নষ্ট হতে বসেছে। মেদিনীপুর (সদর) মহকুমায় সবমিলিয়ে ৭টি ইকো পার্ক রয়েছে। এই সব পার্কগুলোর হাল ফেরাতে প্রয়োজন ২ কোটিরও বেশি টাকা। প্রশ্ন হল, পার্কগুলি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান হবে কীভাবে? পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারিকে চিঠি দিয়েছেন বন দফতরের মেদিনীপুর বিভাগের ডিএফও বিজয় সালিমঠ।
মেদিনীপুর (সদর) মহকুমায় সবমিলিয়ে ৭টি ইকো ট্যুরিজম পার্ক রয়েছে। গোপগড়, চাঁদড়া, গুড়গুড়িপাল, পরিমলকানন, সুকুমার সেনগুপ্ত স্মৃতি উদ্যান, ক্ষুদিরাম পার্ক এবং বিদ্যাসাগর পার্ক। এরমধ্যে গোপগড় পার্ক, ক্ষুদিরাম পার্ক, বিদ্যাসাগর পার্ক রয়েছে মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন এলাকায়। পরিমলকানন রয়েছে চন্দ্রকোনা রোডে। সুকুমার সেনগুপ্ত স্মৃতি উদ্যান রয়েছে মেদিনীপুর শহরে। অন্য দিকে, চাঁদড়া এবং গুড়গুড়িপাল, দু’টোই মেদিনীপুর সদর ব্লক এলাকার অন্তর্গত। এছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বেশ কয়েকটি ইকো ট্যুরিজম পার্ক রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কোন পার্কে কী কী সংস্কার করা জরুরি, কোন কোন ক্ষেত্রে নতুন পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, তার জন্য কত খরচ হতে পারে, চিঠিতে এ সব নিয়ে বিস্তারিত ভাবে লেখা রয়েছে। বন দফতর জানিয়েছে, দ্রুত কিছু সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। অন্য দিকে, জেলা প্রশাসনও সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে।
পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন

• গোপগড় পার্ক ৯১ লক্ষ
• চাঁদড়া পার্ক
২২ লক্ষ ২৫ হাজার
• গুড়গুড়িপাল পার্ক
৪৪ লক্ষ ৯০ হাজার
• পরিমলকানন
২ লক্ষ ৯০ হাজার
• সুকুমার স্মৃতি উদ্যান
২৯ লক্ষ
• ক্ষুদিরাম পার্ক
৩০ লক্ষ ৫০ হাজার
• বিদ্যাসাগর পার্ক
৮ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০
ভ্রমণপিপাসুদের বিনোদনের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এক সময় জঙ্গলমহলে এই সব পার্ক গড়ে তোলা হয়েছিল। পাশাপাশি স্থানীয়দের বিকল্প আয়ের সংস্থান করার উদ্দেশ্যও ছিল। শীতের সময় ইকো পার্কে প্রচুর লোকজন বেড়াতে আসেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি তাঁরা পিকনিকের আসরও বসান। ছুটির দিনগুলোয় পার্কগুলিতে ভিড় আরও বেশি হয়। মনে করা হয়েছিল, পার্ক তৈরি হলে একদিকে যেমন এলাকার সৌন্দর্য বাড়বে, প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসবেন, অন্য দিকে তেমন পার্ককে ঘিরে স্থানীয় অনেক বাসিন্দাদের রুজি-রোজগারের সুযোগ আসবে। পার্কের পাশে তাঁরা ছোট দোকান করতে পারবেন। তা থেকে আয়ও হবে।
তবে গোড়া থেকেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়ে গিয়েছে। ফলে পার্কগুলিতে বাচ্চাদের বিনোদনের বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কোথাও দোলনা ভেঙে গিয়েছে। কোথাও বা বোটগুলো অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। মেদিনীপুরের বাসিন্দা মৌসুমী পাত্রের কথায়, “একদিনের ছুটি কাটানোর জন্য অনেকেই ইকো পার্কে যান। কিন্তু, চাঁদড়া-গুড়গুড়িপালের মতো পার্কগুলো দ্রুত ঢেলে সাজাতে নতুন পরিকল্পনা করা দরকার। ইতিমধ্যে পার্কের বিভিন্ন সরঞ্জামের ক্ষতি হয়েছে। সংস্কারে দেরি হলে তা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” বন দফতর সূত্রে খবর, এই ৭টি পার্ক নতুন করে সাজাতে কি করা প্রয়োজন, ইতিমধ্যে তার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। তারজন্য কত টাকা খরচ হতে পারে, তারও হিসেব করা হয়েছে। প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, সবমিলিয়ে প্রয়োজন ২ কোটি ২৬ লক্ষ ২ হাজার ৫০০ টাকা। এই টাকায় সংস্কার কাজের পাশাপাশি পার্কগুলিতে নতুন পরিকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টিও রয়েছে। দফতর সূত্রে খবর, গোপগড়ে নতুন ১০টি পিকনিক সেড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ১টি কটেজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। চাঁদড়া এবং গুড়গুড়িপালের বোটগুলো মেরামত করার চেষ্টা চলছে। পরিমলকাননে নতুন ৪টি পিকনিক সেড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বস্তুত, এক সময় দীর্ঘ অশান্তির জেরে জঙ্গলমহলে পর্যটকদের আনাগোনা একেবারে কমে গিয়েছিল। শীতের মরসুমেও পার্কে তেমন ভিড় হত না। বর্তমানে পরিস্থিতি বদলেছে। রাজ্য সরকারও জঙ্গলমহল এলাকার পর্যটন প্রসারে একগুচ্ছ প্রকল্প তৈরি করেছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ঝাড়গ্রাম-সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় বাস যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন বাসের পারমিট দেওয়া হয়েছে। এরফলে, আরও বেশি সংখ্যক মানুষ পার্কে আসতে পারবেন বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন।
তবে পর্যটনের প্রসার ঘটাতে পার্কগুলো অবিলম্বে সংস্কার করা প্রয়োজন। বন দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, “উদ্যোগ আছে। তবে, অর্থাভাবে সব কাজ সময় মতো করা সম্ভব হয় না।” তাঁর কথায়, “এটা ঠিক, শীতের সময় এই সব পার্কে প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসেন। পিকনিক করেন। এরফলে, স্থানীয় কয়েকজন মানুষের কাছেও রুজি-রোজগারের সুযোগ আসে। পার্কগুলোর হাল ফেরাতে আমরা নতুন করে পরিকল্পনা তৈরি করছি। দ্রুত কিছু কাজ হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.