আফ্রিকা থেকে বাগুইআটি, দরজা খুলতেই তিন শিম্পাঞ্জি
রজা খুলতেই চোখ পড়ল ওদের তিন জনের উপরে। দু’টি বালক, একটি বালিকা। তিন জনেই খাঁচার মধ্যে। বালক দু’টি এক খাঁচায়, বালিকা অন্যটিতে।
তিন জনই শিম্পাঞ্জি। এসেছে মধ্য আফ্রিকা থেকে। বিমানে হংকং, বাংলাদেশ হয়ে শেষে সড়ক পথে তাদের নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। চিড়িয়াখানা নয়, এদের খোঁজ মিলেছে উত্তর শহরতলির বাগুইআটির একটি বাড়ি থেকে। তদন্তে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ভারতে একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায় পাঠানোর জন্য তাদের এখানে আনা হয়েছে। শুধু এই তিনটি শিম্পাঞ্জিই নয়, বাগুইআটির ওই বাড়িতে খাঁচাবন্দি অবস্থায় পাওয়া গেল আরও পাঁচটি মারমোসেট (ছোট বাঁদর জাতীয় প্রাণি)-ও। মিলল পাঁচটি ম্যাকাও, ছ’টি কাকাতুয়া এবং চারটি ধূসর টিয়া (গ্রে প্যারট)।
যে পাখি ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে এই প্রাণীদের পাওয়া গিয়েছে, বিরল বন্যপ্রাণী পাচারের অভিযোগে শুল্ক দফতর সেই সুপ্রদীপ গুহকে গ্রেফতার করেছে। যে কোনও বিরল বন্যপ্রাণী কেনাবেচার জন্য যে ছাড়পত্র থাকার কথা, তা ওই পাখি ব্যবসায়ীর ছিল না বলে জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখার পূর্বাঞ্চলীয় অফিসারেরা। ওই শাখার ইন্সপেক্টর কৌশিক মণ্ডল বলেন, “এই পাচারের সঙ্গে আরও লোক জড়িত। আমরা খোঁজ করছি।”
বাগুইআটিতে উদ্ধার হওয়া সেই তিন শিম্পাঞ্জি ছানা।—নিজস্ব চিত্র।
পাচারের জন্য পাখি লুকিয়ে রাখার ঘটনা মাঝেমধ্যে হলেও শিম্পাঞ্জি? বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখার অফিসারেরা মনে করতে পারলেন না, এমন ঘটনা এর আগে এই রাজ্যে ঘটেছে কি না। এই অফিসারদের কাছ থেকে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই বাগুইআটির দক্ষিণ পাড়ায় ওই পাখি ব্যবসায়ীর বাড়িটি ঘিরে ফেলেন শুল্ক বিভাগের অফিসার-কর্মীরা। অভিযানের নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় শুল্ক বিভাগের সহকারী কমিশনার সন্তোষ সরন। এ দিন সকালে ওই দুই বিভাগের অফিসারেরা বাড়িটির ভিতরে ঢুকে পড়েন। একতলার একটি ঘর থেকে খাঁচা বন্দি অবস্থায় পাওয়া যায় তিনটি শিম্পাঞ্জিকে। পাশেই একটি খাঁচায় ছিল মারমোসেটগুলি।
বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখার অফিসারেরা জানাচ্ছেন, শিম্পাঞ্জিগুলির বয়স এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে। এর মধ্যে বালিকা শিম্পাঞ্জিটির শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত সকলে। তাঁদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, ওই মেয়ে শিম্পাঞ্জিটির বসন্ত হয়েছে। গায়ে জ্বর। অবিলম্বে তার চিকিৎসা প্রয়োজন। দেখে মনে হচ্ছে পাচারের পথে তার কোনও চিকিৎসাই হয়নি। মারমোসেটগুলিও কাহিল। পাখিগুলির অবস্থাও ভাল নয়। কিন্তু বাড়িটি থেকে ওদের বের করে চিড়িয়াখানায় আনতে পারছেন না তাঁরা। কারণ, সরু গলির ওই বাড়িটি ঘিরে এত ভিড় যে প্রাণীগুলিকে বের করে আনা অত্যন্ত কঠিন। তাই চিড়িয়াখানা থেকে ওদের শুশ্রূষার জন্য প্রশিক্ষিত লোক পাঠানো হয়েছে। আর এলাকার মানুষ? তাঁরা বলছেন, “সুপ্রদীপবাবু পাখি পুষতেন জানি। কিন্তু পশু পাচারের ব্যবসা যে করতেন তা কখনও শুনিনি।”
কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের কাছে খবর ছিল, সুপ্রদীপবাবু ছ’টি শিম্পাঞ্জি এবং ১১টি মারমোসেট এনেছেন পাচারের জন্য। কিন্তু বাড়িতে তল্লাশি করে দেখা গিয়েছে, শিম্পাঞ্জি তিনটি আর মারমোসেটের সংখ্যা পাঁচ। বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক অফিসার বলেন, “ইতিমধ্যেই তিনটি শিম্পাঞ্জিকে মুম্বইয়ে এবং ছ’টি মারমোসেটকে চেন্নাইয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।” তবে ধৃত পাখি ব্যবসায়ী এ কথা অস্বীকার করেছেন। কলকাতায় এর আগে একসঙ্গে এতগুলি বিরল প্রজাতির প্রাণি পাচারের ঘটনা ঘটেনি বলেই দাবি বন দফতরের অফিসারদের। এক অফিসার বলেন, নব্বইয়ের দশকে রাজাবাজারের একটি বস্তির এক বাড়িতে একটি চিতাবাঘ এবং দু’টি হায়নাকে আটক করা হয়েছিল।
এ ভাবে তিনটি শিম্পাঞ্জি কলকাতা থেকে আটক হওয়ায় আলিপুর চিড়িয়াখানার কর্তারা কিন্তু খুশি। কেন? চিড়িয়াখানায় এখন মাত্র একটি শিম্পাঞ্জি রয়েছে। সেটিরও বয়স হয়ে গিয়েছে। এ বারে আটক করা ওই তিনটি শিম্পাঞ্জি শহরের চিড়িয়াখানাতেই পুনর্বাসন পাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। সেখানে মারমোসেটও রয়েছে। তাদের সফল প্রজননও হচ্ছে। তাই উদ্ধার করা মারমোসেটগুলিকে চিড়িয়াখানার এলেও তাদের যত্নআত্তির সমস্যা হবে না বলেই জানাচ্ছেন রাজ্যের বন দফতরের অফিসারেরা।
এ দিনই তক্ষক পাচারের অভিযোগে লেক গার্ডেন্স থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৫৫ গ্রাম ওজনের একটি তক্ষক উদ্ধার করেছেন বন্যপ্রাণি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখার অফিসারেরা। ওই তক্ষকগুলিকে চিনে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছিল।
বাজার-দর
পশুপাখি
দাম*
শিম্পাঞ্জি ৩ লক্ষ
মারমোসেট
১-১.৫ লক্ষ (জোড়া)
কাকাতুয়া
২০-২৫ হাজার
ম্যাকাও ১-১.৫ লক্ষ
ধূসর টিয়া ১৫-২০ হাজার
তক্ষক ২০ লক্ষ (২৫০ গ্রামের উপর ওজন)
* আনুমানিক মূল্য। অঙ্ক টাকায়।
সূত্র: কেন্দ্রীয় বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখা



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.