মাহেশের মন্দিরে চুরি, ধন্দে পুলিশ
মাহেশের প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে বিগ্রহের গয়নাগাটি এবং পুজোর সরঞ্জাম। বুধবার ভোরে বিষয়টি নজরে আসার পর থেকেই মন্দিরের নিরাপত্তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের চাপানউতোর শুরু হয়েছে। যদিও রাত পর্যন্ত চোর বা চুরি যাওয়া সামগ্রীর হদিস মেলেনি।
মাস দেড়েকের মধ্যে হুগলির শ্রীরামপুরে বেশ কয়েকটি মন্দিরে চুরি হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, অন্য দিনের মতোই মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ মাহেশের জগন্নাথ মন্দির বন্ধ করা হয়েছিল। এ দিন ভোর সওয়া ৪টে নাগাদ কেয়ারটেকার দরজা খোলেন। সামান্য পরেই মঙ্গলারতি করতে আসেন পুরোহিত। তাঁরা দেখেন, মন্দিরের দক্ষিণ দিকের কোলাপসিবল গেট খোলা। দরজা ভেজানো। ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায়, গয়নাগাটি খোয়া গিয়েছে। তবে যে আলমারিতে মূল্যবান গয়না রাখা ছিল, তাতে হাত দেয়নি দুষ্কৃতীরা।
খোয়া গিয়েছে এই তিনটি মুকুটই। —ফাইল চিত্র।
জগন্নাথ জিউ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অসীম পণ্ডিত বলেন, “মনে হচ্ছে, চোরেরা রাতে পাঁচিল টপকে ঢুকেছিল। দরজায় কয়েকটি ভারী তালা লাগানো ছিল। সেগুলি ভেঙে তারা ঢোকে। তালাগুলো পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছে।” মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, চোরেরা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার সোনার জল করা রুপোর মুকুট, গলার চিক, হাত ও কোমরের বাজুবন্ধ, ১১টি সোনার টিপ, একটি সোনার হার, রুপোর কোষাকুষি, গয়নার বাক্স, কিছু নারায়ণ শিলার রুপোর পৈতে এবং প্রণামীর বাক্স নিয়ে গিয়েছে। সকালে তিন বিগ্রহের খালি মাথায় তিনটি সাধারণ মুকুট পরানো হয়।
পুলিশ ভোরেই এসেছিল। চুরির কথা চাউর হতেই ভক্তেরা জড়ো হন। শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় ও বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ও চলে আসেন। সকালে তদন্তে আসেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মা এবং এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, বেশ কিছু বিষয় তাদের সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে। তালা আদৌ ভাঙা হয়েছে না খোলা হয়েছে, চোরেরা কেন তালা সঙ্গে করে নিয়ে গেল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “যত দূর মনে হচ্ছে, তালা ভেঙে নয়, তালা খুলেই মন্দিরে ঢোকা হয়েছিল। তালা ভাঙলে বা গ্যাস কাটার দিয়ে কাটলে দরজায় আঘাতের চিহ্ন থাকে। ধাতব গুঁড়োও পড়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সে সব কিছু পাওয়া যায়নি। যে সব অলঙ্কার এবং পুজোর সরঞ্জাম খোওয়া যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা মিলিয়ে দেখছি।” কেয়ারটেকার গোপাল ভানি এবং পুরোহিত পঞ্চানন চক্রবর্তীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মন্দিরের প্রধান সেবাইত সৌমেন রায়চৌধুরী এ দিন শহরে ছিলেন না। তিনি বলেন, “চোরেরা কেন তালা নিয়ে গেল, তা বলতে পারব না। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।” তালা-চাবি বানানোর মিস্ত্রিদের সঙ্গেও পুলিশ কথা বলছে।
প্রধান সেবাইত বরং অভিযোগ করেন, “পুলিশি টহলের অভাবেই এত বড় ঘটনা ঘটল। ভোরে খবর দেওয়ার অনেক পরে পুলিশ আসে।” একই অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায়েরও। জেলা পুলিশের পাল্টা বক্তব্য, বছর দেড়েক আগে স্থানীয় একটি শনি মন্দিরে চুরি হওয়ার পরেই জগন্নাথ মন্দিরের নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল কর্তৃপক্ষকে। মন্দিরের পিছনে একটি আঁস্তাকুঁড়ে উঠে পাঁচিল টপকানো অত্যন্ত সহজ। চারদিকেই পাঁচিল উঁচু করতে বলা হয়েছিল। সিসিটিভি লাগাতেও বলা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কান দেননি। নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও তাঁদের বসিয়ে দেওয়া হয়। সৌমেনবাবুর যুক্তি, “আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় সিসিটিভি লাগাতে পারিনি। রাত পাহারাদার রাখার চেষ্টা করছি।”
মাস দেড়েক আগেই এক বিকেলে শ্রীরামপুরের সাড়ে তিন শতকের প্রাচীন মদনমোহন মন্দিরে তালা ভেঙে বিগ্রহের গয়না চুরি হয়। কিছু দিন পরই রাতে তালা ভেঙে চুরি করা শতাধিক বছরের পুরনো চাতরা হরিসভা মন্দিরেও। দু’টি ক্ষেত্রেই একটি করে বিগ্রহ সিংহাসন থেকে নামিয়ে নেওয়া হয়। কিছু দিন আগে রাতে মাহেশেরই একটি শনি মন্দিরে চুরি করে পালানোর সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে চার বালক। পুলিশের দাবি, একটি ট্রাকের খালাসি তাদের চুরির কাজে লাগাত। সেই খালাসির হদিস আজও মেলেনি।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.