|
|
|
|
অস্বস্তি ঢাকতে আপের ঝাঁপ ভোট প্রস্তুতিতে
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২২ জানুয়ারি |
রাজধানীতে জনসমর্থনে টান পড়ার আঁচ পেয়েই আম আদমি পার্টি (আপ) তড়িঘড়ি গোটা দেশে সংগঠন বাড়াতে ঝাঁপাচ্ছে। রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিতে মন দিতে চাইছে তারা। আপ নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নায় লাভের লাভ তো কিছু হয়ইনি বরং বিড়ম্বনা বেড়েছে আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতীকে নিয়ে। সব মহল থেকে চাপের মুখে পড়ে আপ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, সোমনাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।
তবে এই মূহূর্তে আপ-এর সব চেয়ে বড় ভাবনা হয়ে উঠেছে, প্রচুর ডেকেও রাজধানীর আম আদমিকে যথেষ্ট সংখ্যায় পথে নামাতে না পারা। আপ নেতৃত্বের পরিকল্পনা ছিল, ওই ধর্নার মাধ্যমেই কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব তৈরি করে লোকসভা নির্বাচনের দামামা বাজাবে দল। কংগ্রেস সমর্থন তোলেনি। তবে বেড়েছে রাজনৈতিক তিক্ততা। কেজরিওয়ালের নাম না করে তাঁর মাথা খারাপ বলেও মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। আজ মহারাষ্ট্রের হিংগোলিতে এক সভায় তিনি বলেন, “দিল্লির মাথা খারাপ মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নার কারণে আমাকে সেখানকার সমস্ত পুলিশকর্মীর ছুটি বাতিল করতে হয়েছে।” আপ নেতৃত্ব শিন্দের মন্তব্যকে শিষ্টাচারবিরোধী বলে ব্যাখ্যা করলেও মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। |
|
বিতর্কিত আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতী। |
এই তিক্ততায় আখেরে আপ-এর রাজনৈতিক লাভ কতটা হবে সে প্রশ্ন আলাদা, তবে দু’দিনের ধর্না সমর্থন ক্ষয়ের অশনি সঙ্কেত দেওয়ায় দ্রুত তিনটি পদক্ষেপ করেছে আপ। l কেন টান পড়ছে সমর্থনে, ইতিমধ্যেই তার কারণ বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে দলে। l কর্মীদের মনোবল ফেরাতে আজ থেকেই আবার লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দল। l অস্বস্তি ঢাকতে তড়িঘড়ি আজ সাংবাদিক বৈঠক করে আপ নেতৃত্ব সবিস্তার জাহির করেছেন, কোথায় কত সদস্য বেড়েছে তাঁদের। কী ভাবে এগোচ্ছে তাঁদের সদস্য সংগ্রহের অভিযান। আপ নেতা গোপাল রাই এ দিন দাবি করেন, “গত দশ দিনে গোটা দেশে প্রায় ৫০ লক্ষ সমর্থক যোগ দিয়েছেন আপ-এ। প্রজাতন্ত্র দিবসের মধ্যে ওই সংখ্যাটি এক কোটি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দল।” তিনি জানিয়েছেন, সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গতি আনতে প্রতিটি রাজ্যের দলের নিচু তলার কর্মীদের আরও সক্রিয় হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই সব সাংগঠনিক তৎপরতায় অবশ্য দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথকে নিয়ে অস্বস্তি কাটছে না আপ-এর। বরং সাকেত আদালতে আজ আফ্রিকি মহিলাদের এক জনের বিবৃতি আপ নেতৃত্বের রক্তচাপ বাড়িয়েছে। সোমনাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত সপ্তাহে তিনি দিল্লির মালব্যনগর থানার খিড়কি এলাকায় চার জন আফ্রিকি মহিলার বাড়িতে দলীয় কর্মীদের নিয়ে চড়াও হন। সোমনাথ দাবি করেছিলেন, ওই মহিলারা ড্রাগ পাচার ও যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। উগান্ডা ও নাইজেরিয়ার ওই মহিলাদের শারীরিক ভাবে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে আপ সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আফ্রিকার ওই মহিলারা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে অভিযোগ করেন, ওই হামলার পিছনে দিল্লির আইনমন্ত্রীর উস্কানি ছিল। হামলায় নেতৃত্বও দিয়েছিলেন তিনিই। তাঁদেরই এক জন (উগান্ডার নাগরিক) আজ সাকেত আদালতকে জানান, সেই রাতে সোমনাথ ভারতীকে তিনি না চিনলেও পরের দিন টিভিতে দেখে তিনি তাঁকে চিনতে পারেন। কারণ, পরের দিন সকালেও তিনি একই পোশাকে ছিলেন।
এই জবানবন্দি প্রকাশ্যে আসার পরেই কংগ্রেস বা বিজেপি তো বটেই, জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মাও আইনমন্ত্রীর পদ থেকে সোমনাথ ভারতীর ইস্তফা দাবি করেছে। দিল্লি মহিলা কমিশন গোটা ঘটনাটি নিয়ে সোমনাথ ভারতীর বক্তব্য জানতে ফের তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছে। কমিশনের প্রধান বরখা সিংহ আজ বলেন, “এর আগেও তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি আসেননি। তাই আগামিকাল ফের তাঁকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। এ বারও না এলে লেফটেন্ট্যান্ট গভর্নর ও দিল্লি পুলিশের কাছে সোমনাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে বলা হবে।”
কংগ্রেস-বিজেপি, উভয়েরই দাবি, দিল্লির আইনমন্ত্রীর নাম ওই মামলায় জড়িয়ে পড়ায় স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থেই তাঁর ইস্তফা দেওয়া উচিত। কারণ, স্বচ্ছ তদন্তের প্রশ্নেই কেজরিওয়াল পুলিশ অফিসারদের সাসপেন্ড করার দাবি করেছিলেন। নয়তো প্রমাণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে বলে দাবি করেন তিনি। আইনমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। কংগ্রেস নেতৃত্ব কাল দিল্লির লেফটেন্ট্যান্ট গভর্নর নাজিব জঙ্গের কাছে সোমনাথের ইস্তফার দাবি জানাবেন। আপ নেতা আশুতোষ অবশ্য আজ দাবি করেন, “মামলাটি বিচারাধীন। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে দল পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।” কিন্তু পুলিশ ও সোমনাথ ভারতী, দু’পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও শুধু পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি আপ। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেননি আইনমন্ত্রীও।
আচমকা ধর্নায় বসে কেজরিওয়াল আরও দু’টি সমস্যা বাড়িয়েছেন দল ও সরকারের। এক, আইন অমান্য করে রেল ভবনের সামনে ধর্নায় বসায় আপ সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। দুই, শুরু থেকেই দ্রুত আম আদমির জন্য কাজ করতে চাওয়া দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আজ তাঁর দফতরেই যেতে পারেননি। ছোটবেলা থেকেই ঠান্ডা লাগার ধাত। আছে ডায়াবেটিসের সমস্যাও। এর মধ্যে দু’রাত খোলা আকাশের নীচে কাটানোয় তাঁর ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা বেড়েছে। আরও বসে গিয়েছে গলা। চিকিৎসকদের পরামর্শে আজ দিনভর বিশ্রাম নেন তিনি। সন্ধেয় এইমস-এ যান চেক আপের জন্য। সিটি স্ক্যানে অবশ্য বড় কোনও সমস্যা মেলেনি বলে আপ সূত্রের দাবি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরও এক দিন অসুস্থতার কারণে ছুটি নিতে হয়েছিল অরবিন্দকে। |
|
|
|
|
|