এক মহিলাকে খুন করে তার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া অভিযোগ উঠেছে স্বামী, শাশুড়ি ও স্বামীর এক বন্ধুর বিরুদ্ধে। বুধবার আউশগ্রাম থানার রামনগরের ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সকালে স্থানীয় একটি খামারবাড়ির উঠোনে কয়েকটা কুকুরকে কিছু একটা নিয়ে টানাহেঁচড়া করতে দেখেন তাঁরা। ছুটে গিয়ে দেখেন এক মহিলার দেহের একাংশ খেয়ে ফেলেছে কুকুরেরা। তাঁরাই দেহটিকে ওই গ্রামের বধূ কৃষ্ণা মিত্র (২৮) বলে সনাক্তও করেন।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ওই মহিলাকে খুন ও পরে দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে শাশুড়ি সুপ্রিয়া মিত্র ও স্বামী নয়ন মিত্রের বন্ধু পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বামী নয়ন অবশ্য পলাতক। তাঁর খোঁজ করা হচ্ছে। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
কৃষ্ণাদেবীর বাবা স্থানীয় ভটনগর গ্রামের বাসিন্দা রামকানাই ধীবর আউশগ্রাম থানায় দায়ের করা অভিযোগে জানিয়েছেন, শাশুড়ি সুপ্রিয়াদেবী, স্বামী নয়ন ও তার এক বন্ধু মিলে তাঁর মেয়েকে প্রথমে পিটিয়ে মারে। পরে প্রমাণ লোপাটের জন্য গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেয়। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে কৃষ্ণা পছন্দ করেই নয়নকে বিয়ে করে। তার পর থেকেই তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চলছিল। কিছুদিন আগে এক লক্ষ টাকার জন্য কৃষ্ণাদেবীকে চাপ দেওয়া হয়। রামকানাইবাবুর দাবি, তিনি ওই টাকা না দিতে পারায় তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। রামকানাইবাবু বলেন, “মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে গ্রামে গিয়ে শুনতে পাই ওর শরীরের একাংশ কুকুরে খেয়ে নিয়েছে। আমার নাতি সায়ন মিত্র পুলিশের কাছে জানিয়েছে, কাল সন্ধ্যে থেকেই আমার মেয়েকে তার স্বামী লাঠি, রড দিয়ে মারতে থাকে। পরে তাতে যোগ দেয় শাশড়ি ও স্বামীর বন্ধু।”
আউশগ্রাম থানা সূত্রেও জানা গিয়েছে, কৃষ্ণাদেবীর ছেলে সায়ন পুলিশকে জানিয়েছে, ওই সন্ধ্যায় বাবা, ঠাকুমা আর পার্থকাকার মারে মা অজ্ঞান হয়ে যায়। মাকে ডাক্তার দেখানোর নাম করে বাবা বাইরে নিয়ে যায়। তারপরে বাবা একাই বাড়ি ফিরে আসে। মায়ের কথা জানতে চাইলে, বাবা বলে মা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
কৃষ্ণার সঙ্গে রামনগরের বাসিন্দা নয়নের বিয়ে হয়েছিল প্রায় আট-ন বছর আগে। নয়ন তখন বিএসএফের কর্মী ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি সেখান থেকে বরখাস্ত হন। বর্তমানে আউশগ্রামের ছোড়া ফাঁড়িতে ভাড়া গাড়ি চালাতেন তিনি। এ দিন স্থানীয় মারো গ্রামের বাসিন্দা তথা মৃতার বাপের বাড়ির ঘনিষ্ট হরপ্রসাদ বন্দোপাধ্যায় কাকভোরে কৃষ্ণার দগ্ধ দেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে রামনগরে ছুটে যান। তিনি বলেন, “গিয়ে দেখলাম, শরীরের উপরদিকটা পুড়ে গিয়েছে। ডান হাতটা খেয়ে ফেলেছে কুকুরে। সে দৃশ্য চোখে দেখা যায় না।” |