শনিবার যেখান থেকে শেষ হয়েছিল সোমবার সেখান থেকেই সাক্ষী গৌতম নাথকে জেরা শুরু করলেন সজল ঘোষ হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রদীপ সাহার আইনজীবী। এ দিন নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা জজ ও সেশন জজের আদালতে দুপুর ২টো নাগাদ শুনানি শুরু হয়। একটানা আড়াই ঘণ্টা ধরে তিন আইনজীবী জেরা করেন গৌতমবাবুকে।
তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিককে দেওয়া জবানবন্দির নানা অসঙ্গতি খুঁজে বের করে প্রশ্ন করতে থাকেন আইনজীবী। জানতে চান, ২০১১-র বিধানসভা ভোটে পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা আসনে সিপিআইএম প্রার্থী হিসাবে প্রদীপ সাহা ২১৪০ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন কি না। সাক্ষী বলেন হ্যা।ঁ পরের প্রশ্ন, প্রদীপ সাহা আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও খুনের মামলা করেছিলেন কি না বা আপনারা কোনও মামলা করেছিলেন কি না। সাক্ষী বলেন, না।
এরপরে প্রশ্ন শুরু হয় ঘটনার রাত নিয়ে। আইনজীবী প্রতীমসিংহ রায় জানতে চান, ওই রাতে হাসপাতালে ক’টা গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল তা সাক্ষীর পক্ষে বলা সম্ভব কি না। সাক্ষী বলেন, না। আইনজীবী বলেন, সেই রাতে বৃষ্টি, কুয়াশা ও লোডশেডিং থাকায় কোনও গাড়ির নম্বর সাক্ষী পুলিশকে বলতে পারেন নি। গৌতমবাবু বলেন, হ্যা।ঁ প্রতীমবাবু বলেন, একই কারণে তিনি তদন্তকারী পুলিশ অফিসার বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও বলতে পারেন নি, সেই রাতে কে কোথায় দাঁড়িয়ে ছিল বা হাসপাতাল চত্বরে থাকা যানবাহনের রং, মডেল কেমন ছিল। সাক্ষী বলেন, না বলিনি। তখনই জেরার ধরণ নিয়ে আপত্তি জানান নদিয়ার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায়। সরাসরি প্রশ্ন করতে বলেন তিনি। আইনজীবী প্রশ্ন করেন, সাক্ষী তাঁর জবানবন্দিতে আগে বলেছেন সজল ঘোষ গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। তিনি কতক্ষণ পড়েছিলেন? গৌতমবাবু বলেন, দু’এক মিনিট। একই প্রশ্ন আবার করা হলে সাক্ষী উত্তর দেন, তিন মিনিট। প্রতীমবাবু বলেন, সাক্ষী ঘটনাস্থলে ছিলেনই না, তাই ঠিক করে বলতে পারছেন না।
এরপরে জেরা করা শুরু করেন আরেক আইনজীবী বিষ্ণু শীল। তিনি গৌতমবাবুর বাড়ি, পেশা বিষয়ে জানতে চান। গৌতমবাবু জানান পূর্বস্থলী বাজারে তাঁর আলমারির দোকান আছে। বিষ্ণুবাবু এরপরে ফজলুল হক মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর হাসপাতালে যাওয়ার খুঁটিনাটি জানতে চান। ফজলুল হক কী করেন জানতে চাইলে সাক্ষী বলেন চাষবাস, বাড়ি মহাদেবপুরে। যা সাক্ষীর বাড়ি থেকে ১২-১৪ কিলোমিটার দূরে। আইনজীবী জানতে চান, সাক্ষী নিজে বা তাঁর ছেলেমেয়েরা কেউ পারুলিয়া কলেজে পড়তেন কিনা। সাক্ষী বলেন, না। আইনজীবী বলেন, সুতরাং ওই দিন সাক্ষীর কলেজে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল না। সাক্ষী তা মেনে নেন। পরের প্রশ্ন, তাহলে কলেজে সে দিন কী ঘটেছে তা সাক্ষীর জানার কথা নয়। গৌতমবাবুর দাবি, তিনি পরে জেনেছেন। তবে কার কাছ থেকে জেনেছেন তা বলেননি তিনি।
সাক্ষী আগেই জানিয়েছেন ওই রাতে ফজলুল হকের সঙ্গে দশটার পরে তিনি নবদ্বীপ হাসপাতালে যান। বিষ্ণুবাবু জানতে চান, রাত দশটার সময় ফজলুল হক পূর্বস্থলীতে কি করছিলেন, কেনই বা তিনি ওই শীতের রাতে বাড়ি থেকে ১৪ কিমি দূরে সেখানে যান। সাক্ষী জানান, ফজলুল হক রাতেই বাড়ি ফেরেন। কেন? সাক্ষী জানান, রাজনৈতিক কাজকর্ম থাকে। বিষ্ণুবাবু বলেন, ওই ঝড়বৃষ্টিতে এলাকায় লোডশেডিং হয়ে গিয়েছিল। সাক্ষী বলেন, লোডশেডিং হয়েছিল কিনা বুঝতে পারেন নি, কেননা পূর্বস্থলী বাজারে আলো ছিল। আইনজীবী জানতে চান সাক্ষীর আগে কখনও সাক্ষ্য দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে কি না। উত্তর আসে, না। আইনজীবী বলেন, মামলা আরও নিখুঁত করার জন্য, প্রদীপ সাহার বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে কী কী বলতে হবে সে বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কবে কথা হয়েছিল সাক্ষীর। গৌতমবাবু অস্বীকার করেন। তাহলে সাক্ষী কি স্বেচ্ছায় নবদ্বীপ আদালতে এসে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে জবানবন্দী দিয়েছেন? উত্তরে সাক্ষী বলেন হ্যাঁ। আবারও আপত্তি তোলেন সরকারি কৌঁসুলি বিকাশবাবু। তিনি বলেন, অভিযুক্তের আইনজীবী শুধু প্রশ্নই করছেন না, উত্তরটাও বলে দিচ্ছেন।
গৌতম নাথকে শেষ জেরা করেন আইনজীবী সামসুল ইসলাম মোল্লা। তিনি বলেন, সাক্ষী আগে বিজেপি করতেন। চার বছর আগে তৃণমূলে যোগ দেন। সাক্ষী বলেন, হ্যাঁ। আরও কিছু প্রশ্নের পরে সামসুল ইসলাম জানতে চান, সেই রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালে যাওয়ার কথা আর কাউকে সাক্ষী জানিয়েছিলেন কি না। সাক্ষী বলেন, না। সাক্ষী গৌতম নাথ এবং সজল ঘোষ দু’জনেই তৃণমূলের পঞ্চায়েত স্তরের কর্মী ছিলেন কিনা জানতে চাইলে সাক্ষী উত্তর দেন, হ্যাঁ। আইনজীবী বলেন তাঁদের নেতা তপন চট্টোপাধ্যায় ও পঙ্কজ গাঙ্গুলি। সম্মতি জানান সাক্ষী। শেষে আইনজীবীর প্রশ্ন, গৌতমবাবু কি নিজে দরখাস্ত করে আদালতে সাক্ষী হয়েছেন? সাক্ষী বলেন,না। পুলিশ তাঁকে সাক্ষী করেছে। |