সম্প্রতি পুরসভা নির্বাচনে বহরমপুরের দু’টি ওয়ার্ড দখল করেছিল তৃণমূল। এ বার মুর্শিদাবাদে দু’টি কলেজ দখল করে খাতা খুলল টিএমসিপি-ও। এমনকী, অধীর চৌধুরীর খাস তালুক বহরমপুর শহরের বহরমপুর কলেজেও ৩১টি আসনের মধ্যে ৯টি আসন দখল করেছে টিএমসিপি। তবে ছাত্র পরিষদ জেলার ১৬টি কলেজের মধ্যে ১০টিতে জয়ী হয়ে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখল। |
দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ছাত্র সংসদ নির্বাচন সোমবার শান্তিতেই কেটেছে। টিএমসিপি রেল প্রতিমন্ত্রী অধীরবাবুর লোকসভা কেন্দ্র বহরমপুরের অধীন বড়ঞা বিধানসভা এলাকার পাঁচথুপি হরিপদ গৌরীবালা কলেজ ও কংগ্রেস সাংসদ মান্নান হোসেনের লোকসভা কেন্দ্র মুর্শিদাবাদের অধীন লালবাগ সুভাষচন্দ্র বোস সেন্টিনারি কলেজ। এর আগে পাঁচথুপি কলেজ ছিল এসএফআই-এর দখলে ও লালবাগ কলেজে ছিল ছাত্র পরিষদ।
কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্রের অধীন জঙ্গিপুর কলেজ টানা দু’বার ছিল ছাত্রপরিষদের দখলে। এই লোকসভার এলাকার মধ্যে থাকা লালগোলা কলেজটিও গত বার ছিল ছাত্রপরিষদের দখলে। এ বার কিন্তু ওই দু’টি কলেজই এসএফআই দখল করে। তবে সাংসদ মান্নান হোসেনের নির্বাচনী এলাকার ডোমকল বসন্তপুর কলেজ এসএফআই-এর দখল থেকে এই প্রথম ছাত্র পরিষদের দখলে এল। অধীরবাবুর নির্বাচনী এলাকায় সালার মুজাফ্ফর আহমেদ কলেজে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ছিল এসএফআই। এ বার ওই কলেজের ২৪টি আসনের মধ্যে ছাত্রপরিষদ এবং এসএফআই ১২টি করে আসন দখল করেছে। |
জঙ্গিপুর কলেজে ঢোকার আগে তল্লাশি পুলিশের। |
যে কলেজগুলোতে নির্বাচন হল তার মধ্যে রয়েছে বহরমপুর গার্লস কলেজে। ওই কলেজে কিন্তু কোনও ছাত্র সংগঠনের ছাতার তলায় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। ফলে বাকি ১৪টি কলেজের মধ্যে টিএমসিপি দখল করে ২টি কলেজ। এসএফআই-এর দখলে যায় ২টি কলেজ। ৯টি কলেজ দখল করে ছাত্রপরিষদ। বাকি থাকল সালার কলেজ। শ্রেণি প্রতিনিধির আসন দখলের হিসাবে ওই কলেজে এ বার ছাত্রপরিষদ এবং এসএফআই সমান শক্তিধর। কিছু কলেজ খুইয়েও কিছু কলেজ এ বারই প্রথম দখল করে ছাত্রপরিষদ নিজেদের শক্তি প্রায় অটুট রেখেছে। শক্তি বাড়িয়েছে টিএমসিপি। |
মুর্শিদাবাদে কলেজ ভোট |
• ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রায় ঘটনাহীন।
• মুর্শিদাবাদে খাতা খুলল টিএমসিপি।
• সালার কলেজে ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআই সমান সমান।
• এসএফআই ও টিএমসিপি ২টি ও ছাত্র পরিষদ ১০টি কলেজ সংসদ দখল করে। |
|
অন্য দিকে, দু’টি কলেজ হাতছাড়া হওয়ায় ও কয়েকটি কলেজে ছাত্র প্রতিনিধির আসন সংখ্যা কমে যাওয়ায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এসএফআই-এর। লালবাগ কলেজে টিএমসিপি ছাড়া অন্য কোনও সংগঠন মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। ফলে ওই কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব ক’টি আসন দখল করেছে টিএমসিপি। কান্দি রাজা বীরেন্দ্রচন্দ্র কলেজ, কান্দি রাজ কলেজ, জিয়াগঞ্জের রানি ধন্যা কুমারী কলেজ, জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিং কলেজ, নওদার আমতলা কলেজ ও ইসলামপুরের মুর্শিদাবাদ মহাবিদ্যালয়ে বিরোধী শূন্য ছাত্র সংসদ গঠন করতে চলেছে ছাত্রপরিষদ। ওই ৬টি কলেজের অধিকাংশ আসনেই ছাত্রপরিষদ ছাড়া অন্য কোনও সংগঠন মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি বা দিতে পারেনি। বেলডাঙা এসআরএফ কলেজের ৬৯টি আসনের মধ্যে ৬৮টি ছাত্রপরিষদ ও একটি আসন টিএমসিপি পেয়েছে। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ১০১টি আসনের মধ্যে ৬টি পেয়েছে টিএমসিপি। বাকি ৯৫টি আসন এবং জি বি-র ছাত্র প্রতিনিধি পদটি দখল করেছে ছাত্রপরিষদ। এ বার প্রথম খাতা খুলতে পারায় খুশি টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অরিন্দম ঘোষ রাজা। তিনি বলেন, “সিপি’র সন্ত্রাস না করলে আরও কয়েকটি কলেজে আমরাই জিততাম।’’ |
বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের সামনে লাঠি চালাল পুলিশ। |
ছাত্রপরিষদের জেলা সভাপতি সরফরাজ শেখ রুবেলও সেই সন্ত্রাসকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, “মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন বাস লরিতে করে বহিরাগতদের নিয়ে এসেছিল টিএমসিপি। পুলিশের সামনে ওই গুন্ডা বাহিনী স্থানীয় বিধায়ক শাঁওনী সিংহরায়কে মারধর করে আমাদের ছেলেদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়নি।” এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমানেরও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, “কোথাও পুলিশের মদতে পুষ্ট টিএমসিপি-র দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব চলছে, কোথাও ছাত্রপরিষদ সন্ত্রাস করেছে। ফলে আমরা এ বার ৭টির বেশি কলেজে লড়তেই পারিনি।”
এ দিন ভোট গণনা চলাকালীন বাজি পটকা ফাটানো নিয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজের বাইরে ও আমতলা কলেজের বাইরে উত্তেজনা দেখা দেয়। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। |
গৌতম প্রামাণিক ও অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |