রাতে দরজায় পুলিশ কড়া নাড়ায় থতমত খেয়ে দরজা খুলতে একটু দেরি করেছিলেন রহিমা বিবি। এক ধাক্কায় দরজা ঠেলে ঢুকে পড়েন নাকাশিপাড়া থানা থেকে আসা জনা সাতেক পুলিশ কর্মী। সেই ধাক্কায় দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্য চল্লিশের রহিমা পড়েছিলেন একেবারে হুমড়ি খেয়ে। শুক্রবার সেই রাত থেকেই তাঁর ‘বুক ধড়ফড়’, এমনই অভিযোগ করেছেন তাঁর বাড়ির লোক।
সে রাতে তাঁর সামনেই পুলিশ কর্মীদের বাড়ি ‘লণ্ডভণ্ড’ করায় বাধা দেওয়ায় মারধর করা হয় রহিমার ছেলে রফিককে। তা রপর স্বামী জমির শেখকে যখন টেনে হিঁচড়ে তোলা হচ্ছে পুলিশের জিপে তখন বাধা দিতে গেলে ফের পুলিশি অনুশাসনের মুখে পড়েন অসুস্থ রহিমা। জমির ও তাঁর পাড়া পড়শির অভিযোগ, পরের দিন থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই মহিলা। ভর্তি করা হয় বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে। অবস্থা খারাপ হওয়ায় শনিবার দুপুরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কৃষ্ণনগর হাসপাতালে। কিন্তু পথেই মারা যান রহিমা বিবি (৪২)।
জমির শেখ একা নন, নদিয়ার বেথুয়াডহরির গলায়দড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘পুলিশি অত্যাচারেই মৃত্যু হয়েছে রহিমার।’ এ ব্যাপারে সোমবার জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্রের কাছে নাকাশিপাড়া থানার এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। সব্যসাচী বলেন, “অভিযোগটি হাতে এলে অবশ্যই তদন্ত করা হবে। প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”
কিন্তু ওই গ্রামে পুলিশ আচমকা হানা দিল কেন? দিন কয়েক আগে ওই গ্রামের এক চিকিৎসকের বাড়িতে চুরি হয়েছিল। খোয়া গিয়েছিল নগদ কিছু টাকা, গয়না। তারই জেরে তদন্তে নেমে শুক্রবার রাতে গলায়দড়ি গ্রামে জমির শেখ, আবু বক্কর শেখ ও মনিজুল শেখের বাড়িতে চড়াও হন পুলিশ কর্মীরা। রাতেই তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। তবে গ্রামবাসীদের অভিযোগ সেই সময়ে পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি বা বাড়ি তল্লাশির পরোয়ানা দেখাতে পারেনি। থানায় নিয়ে জেরা করার নামে তাদের বেধড়ক মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। সকালে গ্রামবাসীরা সকলেই থানায় গিয়ে দাবি করেছিলেন ওই তিন ‘নির্দোষ’ গ্রামবাসীকে ছেড়ে দেওয়ার। সে সবে কান দেয়নি পুলিশ। তবে থানার লক-আপে ধৃতদের যে বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল তার প্রমাণ মিলেছে ধৃতদের শরীরে।
নাকাশিপাড়া থানার পুলিশ মারধরের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। ওই তিন জন গ্রামবাসী আহত হলেন কী করে? থানার পুলিশ কর্মীরা উত্তর দিতে চাননি। জমির বলেন, “তল্লাশির পরোয়ানা ছাড়াই বাড়িতে চড়াও হয়ে লণ্ডভণ্ড করে ছিলেন ওই পুলিশ কর্মীরা। আমার স্ত্রী বাধা দেওয়ায় ওই পুলিশ তাঁকে ঠেলে ফেলে দেন। সেই থেকেই তাঁর বুক ধড়ফড় শুরু হয়েছিল। শেষ তক মারাই গেলেন তিনি। এর জন্য পুলিশই দায়ী।” |