প্রায় একমাস বন্ধ থাকার পরে ফের শুনানি শুরু হল সজল ঘোষ হত্যা মামলার। শনিবার, ১৮ জানুয়ারি নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা জজ ও সেশন জজ শুভব্রত চৌধুরীর আদালতে ওই শুনানি হয়।
শনিবার দুপুরে রুদ্ধদ্বার কক্ষে শুনানি চলাকালীন রঙিন ফুলহাতা সোয়েটার, মাফলারে হাজির ছিলেন অন্যতম অভিযুক্ত প্রদীপ সাহা। প্রথম সাক্ষী ছিলেন হালিম শেখ।
হালিম শেখকে দেখতেই খুনের ঘটনার রাতে অর্থাৎ ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে যান পূর্বস্থলীর তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ। ওই দিন দুপুরে কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে মারামারিতে আহত হয়ে হাসপাতালের ভর্তি হন হালিম শেখ ও সৌভিক আইচ নামে দুই টিএমসিপি সমর্থক।
এ দিন হালিম শেখকে জেরা শুরু করেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবি প্রতীমসিংহ রায়। গোড়াতেই তিনি জানতে চান তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কবে, কোথায়, কখন জিজ্ঞাসাবাদ করেন হালিম শেখকে। হালিম শেখ জানান, ১-৯-১২ তারিখ রাত দুটো নাগাদ নবদ্বীপ হাসপাতালের বেডে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। তারপরেই সংশোধন করে বলেন তারিখটি ৯-১-১২ হবে। এরপরে হালিম শেখের কাছে তার বাড়ি কোথায়, সেখান থেকে নবদ্বীপ হাসপাতালের দূরত্ব, থানার দূরত্ব, সৌভিক আইচের বাড়ির দূরত্ব, সজল ঘোষের বাড়ির দূরত্ব,এই মামলার অভিযোগকারী পঙ্কজ গাঙ্গুলির বাড়ির দূরত্ব জানতে চান আইনজীবী। প্রশ্ন করেন পঙ্কজ গাঙ্গুলিকে হালিম শেখ কতদিন ধরে চেনেন? হালিম বলেন পাঁচ বছর। এই চেনা কি রাজনৈতিক কারণে? উত্তর আসে, হ্যা। এরপরে সৌভিক আইচের সঙ্গে হালিম শেখের আলাপ কীভাবে তা জানতে চান আইনজীবী। হালিম জানান কলেজ সূত্রেই আলাপ। এরপরে হালিম শেখের কাছ থেকে প্রতীমবাবু ঘটনার নানা খুঁটিনাটি জানতে চান। প্রশ্ন করেন, কলেজের মারামারিতে আহত হওয়ার পরে হালিম নিজে বা তার তরফে কেউ পুলিশের কাছে এফআইআর করেছিল কি না। হালিম জানান, কলেজের ছাত্র সংসদের তরফে করা হয়েছিল। তবে আদালতে সেই অভিযোগের কোনও কপি সাক্ষী দাখিল করতে পারবেন কি না তা জানতে চাইলে হালিম বলেন, না। আইনজীবী জানতে চান, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে হালিম নিজে কোনও এফআইআর করেছিলেন কি না বা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে কোনও অভিযোগ জানিয়েছিলেন কি না। হালিম বলেন, না। আর সজল ঘোষের সঙ্গে কীভাবে আলাপ, সে প্রশ্নের উত্তরে হালিম বলেন, সজল ঘোষ কলেজে নেতৃত্ব দিতেন। প্রতীমবাবু জানতে চান উনি কি কলেজে পড়তেন? হালিম বলেন, না। আইনজীবি জানতে চান তাহলে কী করতেন সজল ঘোষ। হালিম বলেন, জানি না।
শুনানির পরবর্তী পর্বে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে দেওয়া হালিম শেখের পূর্ববর্তী জবানবন্দির নানা ‘অসঙ্গতি’ খুঁজে প্রশ্ন করতে থাকেন। কেন তদন্তকারী অফিসারকে হালিম বলেন নি ওই রাতে তাকে দেখতে হাসপাতালে পঙ্কজ গাঙ্গুলি গিয়েছিলেন। হালিম বলেন, মনে ছিল না। কেন বলেন নি প্রদীপ সাহা সজল ঘোষকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেন এবং লোকনাথ দেবনাথ তার চাদর থেকে অস্ত্র বের করে গুলি করেন? হালিম বলেন, বলেছি। গুলি করার পরে সজলবাবুকে হালিমের বেডের পাশে আনা হয়েছিল এটাও কেন তদন্তকারী অফিসারকে বলা হয়নি? হালিম স্বীকার করেন, না বলা হয়নি। প্রশ্নোত্তরে জানা যায়, প্রদীপ সাহা যে হালিমের পূর্ব পরিচিত এটাও আগে জানানো হয়নি।আরেক আইনজীবী বিষ্ণু শীল জানতে চান, হালিম নবদ্বীপ হাসপাতালের দোতলায় ভর্তি ছিলেন কি না। হালিম বলেন, হ্যা। বিষ্ণুবাবু বলেন, তাহলে স্বাভাবিক কারণেই এই খুনের ঘটনা সম্পর্কে সাক্ষীর কোনও প্রত্যক্ষ জ্ঞান নেই। হালিম মেনে নিয়ে বলেন হ্যা।
এ দিনের দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন গৌতম নাথ। আইনজীবী প্রতীমসিংহ রায় তাঁকে প্রশ্ন করেন, গৌতমবাবু কী করেন? সাক্ষী জানান ব্যবসা। এরপরে সজল ঘোষের সঙ্গে কীভাবে, তবে থেকে আলাপ, কত দূরে তাদের বাড়ি, দুই পরিবারের মধ্যে রাজনীতি ছাড়া কোনও সম্পর্ক আছে কি না ইত্যাদি জানতে চান। এমনকী সজল ঘোষের বিয়ের তারিখও জানতে চান আইনজীবি। এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দিতে পারেননি গৌতম নাথ। এরপরে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দেওয়া জবানবন্দি নিয়েও নানা প্রশান করা হয়। এই পর্যায়ে এসেই এ দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। সোমবার, গৌতমবাবুকে দিয়েই সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।
এ দিনও বহু মানুষ মামলা শুনতে ভিড় জমিয়েছিলেন আদালত চত্বরে। ছিলেন পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ও। |