সোপ ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হল এক বধূর দেহ। রবিবার দুপুরে নদিয়ার গাংনাপুরের তুলাবাগান এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম ডলি রায় (৩৯)। তিন দিন ধরে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তাঁর বাপের বাড়ির লোকজনও ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এ দিন দুপুরে ডলিদেবীর ভাই শিবু দে দিদির বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করে কারও সাড়া পাননি। বাড়ির সোপ ট্যাঙ্কের উপর নতুন প্লাস্টার দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। পাড়ার লোকজনকে তিনি বিষয়টি জানান। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে ওই প্লাস্টার চটিয়ে সোপ ট্যাঙ্ক থেকে ডলিদেবীর মৃতদেহ উদ্ধার করে। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, মহিলার স্বামীই তাঁকে খুন করে দেহ ওই ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়েছে। স্বামীর খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
পেশায় কাঠের মিস্ত্রি শিবুবাবু বলেন, “দিদির মোবাইল বন্ধ থাকায় ক’দিন ধরে কোনও যোগাযোগ করতে পারিনি। এ দিন দুপুরে দিদির বাড়ি এসে দেখি সেখানে কেউ নেই। ডাকাডাকি করে কারও সাড়া পাইনি। হঠাৎ চোখে পড়ে সোপ ট্যাঙ্কের উপরে নতুন প্লাস্টার করা আছে। দেখে কেমন সন্দেহ হল। এর পর প্রতিবেশীদের মুখ থেকে জানতে পারি তাঁরাও দিদিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে কেউই দেখেননি। তখন সন্দেহ আরও বাড়ে। আমার আশঙ্কার কথা প্রতিবেশীদের জানাই। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ আসার পর দেখা গেল আমার সন্দেহটাই সত্যি!”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর আটেক আগে পেশায় রঙের মিস্ত্রি বিনয় রায়ের সঙ্গে ডলিদেবীর বিয়ে হয়। দু’জনেরই আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকে। ডলি কলকাতায় বই বাঁধাইয়ের কাজ করতেন। প্রতিবেশীরা জানান, বিনয় তেমন কাজকর্ম করতেন না। স্ত্রীর উপার্জনের পয়সায় নেশা করতেন। গত বৃহস্পতিবার অশান্তি চরমে ওঠে। তবে ‘রোজকার ঘটনা’ বলে পড়শিরাও তেমন আমল দেননি। কিন্তু বৃহস্পতিবারের পর থেকে ডলিদেবীকে আর কেউই দেখতে পাননি। যদিও বিনয় বাড়িতে দিব্যি নিজের মতোই ছিলেন।
প্রতিবেশী বিকাশ চৌধুরী, মুকুন্দ সরকার বলেন, “ক’দিন থেকেই ওকে দেখিনি। ভেবেছিলাম হয়তো কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছেন। বিনয়ও আমাদের বলতে শুরু করেছিল যে সে সব ছেড়ে চলে যাবে। আবার এও বলেছিল, পাড়ায় নাকি বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটবে। কিন্তু ওর কথায় আমরা আমল দিইনি। কিন্তু ওর বাড়িতেই যে এমন কাণ্ড ঘটে গিয়েছে তা আমরা টেরই পাইনি।” ডলিদেবীর বাড়িতে ঢোকার মুখেই রয়েছে ওই সোপ ট্যাঙ্ক। বাড়ির নোংরা জল সেখানেই জমা হত। আশপাশে বেশ কিছু বাড়িও রয়েছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, শীতের রাতে নির্জন এলাকায় রাতের অন্ধকারে কেউ এ কাজ করেলে তা কারও পক্ষেই জানা সম্ভব নয়। প্রতিবেশীরা জানান, এ দিন সকাল পর্যন্তও বিনয় বাড়িতেই ছিলেন। পরে পাশের পাড়ায় রঙের কাজ করতে চলে যায়। কিন্তু গ্রামে পুলিশ আসার পর তাঁর আর খোঁজ মেলেনি।
এ দিকে মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে এসেছিল ডলিদেবীর ছেলে। তার কথায়, “মায়ের কাছে থাকল বাবা খুব রাগারাগি করত। মাকে অত্যাচারও করত খুব। তাই বাধ্য হয়ে বছর তিনেক আগে বাড়ি থেকে চলে যাই। তবে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।”
চাকদহের শিমুরালি তেলিপুকুরে ডলিদেবীর বাবার বাড়ি। শিবুবাবুর অভিযোগ, “জামাইবাবুই দিদিকে খুন করে সোপট্যাঙ্কে ফেলে দিয়েছে। সন্দেহ কাটাতে ট্যাঙ্কের উপর প্লাস্টারও করে দেওয়া হয়েছিল।” |