রাস্তায় পণ্য বোঝাই লরি আটকে তোলা আদায়ের অভিযোগে ফরাক্কা থানার চার পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করলেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। সাসপেন্ড হওয়া ওই পুলিশকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন এএসআই অরুণকুমার সরকার, দুই কনস্টেবল সুব্রত দাস ও রবীন্দ্রনাথ নায়েক এবং মহম্মদ মহসিন নামে একজন হোমগার্ড। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে মোবাইল ডিউটিতে ছিলেন এএসআই সহ ওই চার পুলিশকর্মী। রাতে তাঁরা পণ্য বোঝাই একটি লরি আটকান ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে এনটিপিসি মোড়ের কাছে। অভিযোগ, লরির চালকের কাছে মোটা টাকা দাবি করেন তাঁরা। টাকা না দেওয়ায় চালক ও খালাসিকে মারধর করা হয় এবং গাড়ির লাইট, কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। সেই সময় চালক রাস্তা অবরোধ করে লরি দাঁড় করিয়ে পালিয়ে যান। লরির মালিক খবর পেয়ে পুলিশ সুপারকে ঘটনার কথা জানান।
পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘রাস্তায় লরি আটকে তোলাবাজির অভিযোগ পেয়েই রবিবার সকালে ফরাক্কা থানার আইসিকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই তাঁর পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই চার জন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়। ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। জঙ্গিপুরের এসডিপিওকে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে।’’ পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে সুরক্ষা বাহিনী তৈরি করে পথে পাহারার নামে রাতে গাড়ি থেকে টাকা পয়সা আদায়ের ব্যবস্থা দীর্ঘদিন থেকে জেলায় চালু ছিল। তা বন্ধ করতে সব থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পথে নিরাপত্তা দেওয়ার নামে তোলাবাজি কোনওমতেই বরদাস্ত করা হবে না। এ ব্যাপারে কোথাও কোনও অভিযোগ পেলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
মাসখানেক আগে রেজিনগরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদে পুলিশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোলাবাজি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। সাবধান করে দিয়েছিলেন জেলা পুলিশকে। ভৎসর্নার মুখে পড়তে হয়েছিল জেলার পুলিশ সুপারকেও। তবুও এদিনের ঘটনা ফের জানিয়ে দিল, পুলিশের পুরনো অভ্যাস বদলায়নি। এএসআই অরুণবাবু ২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর রানিনগর থানায় ৩৫ লক্ষ টাকার ফেনসিডিল কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগেও সাসপেন্ড হয়েছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক বলেন , ‘‘পুলিশের তোলাবাজির ঘটনা জেলা জুড়ে সর্বত্রই। পুলিশ সুপারের এই কড়া পদক্ষেপ থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি কিছুটা কমে তাহলে মানুষ কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।” সিপিএম নেতা তথা সিটুর জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত খান বলেন, ‘‘বহু আগেই পুলিশ সুপারের এ ধরনের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তোলাবাজি হয় ফরাক্কা থানা এলাকায়। বহুবার এ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু কিছু হয়নি। এখন মুখ্যমন্ত্রী মুখ খোলায় পুলিশ সুপারের টনক নড়েছে।” তবে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর আগের মতো ‘ঝুঁকি’ নিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় তোলাবাজি অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তবে পুরোপুরি যে বন্ধ হয়নি এদিনের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ফরাক্কা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সোমেন পাণ্ডে বলেন, “একসময় ফরাক্কা সহ বিভিন্ন থানাতে প্রকাশ্যে তোলাবাজি চলত। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর এখন সেটা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে।” |