একই পরিবারের তিন মহিলা খুনে ধৃত নিত্যানন্দ দাসকে শনিবার ফের শিলিগুড়ি নিয়ে গিয়েছে বহরমপুর থানার পুলিশ। নিত্যানন্দের হয়ে মামলা লড়ার ক্ষেত্রে অবশ্য শহরের আইনজীবীদের মধ্যে দু’রকম মত তৈরি হয়েছে।
গত ৪ জানুয়ারি বহরমপুরের একটি ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে বৃদ্ধা প্রভা দাস, তাঁর ভাইঝি মধ্য চল্লিশের বিজয়া দাস ও বিজয়াদেবীর তরুণী কন্যা আত্রেয়ী বসুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার ৫ দিন পরে শিলিগুড়ি থেকে পুলিশ নিত্যানন্দকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিত্যানন্দকে এবং পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে যে, ওই জ্যোতিষী ‘মা তারা’র ভক্ত। সেই মতো মা তারার ছবি সংগ্রহ করে নিয়ে আসে পুলিশ। ওই ছবি ছুঁয়ে নিত্যানন্দকে ‘সত্যি’ কথা বলানোর চেষ্টা হয়। এর পরেই নিত্যানন্দ জানায় ওই ফ্ল্যাট থেকে সে যে মোবাইল ফোনগুলি নিয়ে গিয়েছিল, সেগুলি ‘শিলিগুড়ির একটি নির্মিয়মাণ ফ্ল্যাটের নীচে পুঁতে রেখেছে। তারপরে তাকে ফের শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।
গত ১২ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে তাকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই দিন তার হয়ে কোনও আইনজীবী মামলা লড়েননি। বহরমপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আইনজীবী আবু বাক্কার সিদ্দিকি বলেন, “অপরাধী যত বড় অপরাধ করুক না কেন, তার হয়ে কোনও আইনজীবী মামলা লড়বেন না বলে কোনও বার কাউন্সিল লিখিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওই ব্যক্তির হয়ে মামলা লড়ব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” বর্ষীয়ান আইনজীবী কাঞ্চনলাল মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “কোনও আইনজীবী নিত্যানন্দের মামলা গ্রহণ করতে রাজি নন, বলে শুনেছি। আমি নিজেও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তার হয়ে মামলা না লড়ার।”
আইনজীবী শুভাঞ্জন সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, “এক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এবং তা প্রমাণ সাপেক্ষ। যদি ভারতীয় নাগরিক না হওয়া সত্ত্বেও আজমল কাসভের হয়ে মামলা লড়তে পারেন কোনও আইনজীবী, তাহলে এ ক্ষেত্রে বাধা কোথায়!” একই কথা বলেন আইনজীবী পীযুষ ঘোষ। পীযুষবাবু অবশ্য নিত্যানন্দের আগের দু’টি মামলাও লড়েছেন। তিনি বলেন, “বধূ নির্যাতন ও ডাকাতির মামলা দু’টি আমিই লড়েছি। ওই ঘটনার পরে নিত্যানন্দের মা ও তার স্ত্রী আমার কাছে আইনি সহায়তা চাইতে এসেছিলেন। আমি তাঁদের আইনি সহায়তা করব বলে জানিয়েছি। তবে এখনই আইনজীবীর কোনও প্রয়োজন নেই।” আইনজীবী দেবরাজ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “ওই ঘটনা বহরমপুরের নাগরিক সমাজ জীবনে ভীষণ প্রভাব ফেলেছে। তাই নিত্যানন্দের হয়ে মামলা লড়ার ক্ষেত্রে আমার নীতিগত অবস্থাননা।” |