নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
একই পরিবারের তিন মহিলাকে খুনের ঘটনায় ধৃত নিত্যানন্দ দাসের বাড়ি থেকেই মিলল বিজয়া বসু ও তাঁর কন্যা আত্রেয়ীর মোবাইল ফোন। গত ৪ জানুয়ারি বহরমপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে বিজয়াদেবী, তাঁর কন্যা আত্রেয়ী এবং বিজয়াদেবীর পিসি প্রভা দাসের দেহ উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় নিত্যানন্দ দাস নামে এক যুবককে। সেই যুবক বহরমপুরে যে বাড়িতে ভাড়া থাকে, সেখানেই পুরনো জামাকাপড় ভরা একটি ব্যাগের ভিতর থেকে মোবাইল দু’টি উদ্ধার করা হয়েছে। মোবাইল দু’টির ব্যাটারি খুলে মোজার মধ্যে ভরে রেখে দেওয়া হয়েছিল। প্রভাদেবীর মোবাইলটি অবশ্য এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
বিজয়াদেবীদের দেহ উদ্ধারের সময়েই দেখা গিয়েছিল, তাঁদের তিন জনের তিনটি মোবাইলই নিখোঁজ। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে নিত্যানন্দ কবুল করেছিল, মোবাইলগুলি সে-ই নিয়েছে। কিন্তু মোবাইলগুলি নিয়ে সে কী করেছে, তা নিয়ে বারবার বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছিল। পুলিশের দাবি, নিত্যানন্দই জেরায় প্রথমে বলেছিল, মোবাইলগুলি সে মালদহে ফেলে দিয়েছে। পরে বলেছিল শিলিগুড়িতে রেখে এসেছে। পুলিশ তাকে নিয়ে মালদহ ও শিলিগুড়ি গিয়েও মোবাইলের সন্ধান পায়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার পুলিশের সামনে ‘মা তারা’র ছবি ছুঁয়ে নিত্যানন্দ জানায়, শিলিগুড়ির একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির নীচে সে ওই মোবাইল পুঁতে রেখে এসেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘মা তারার ছবি ছুঁয়ে মিথ্যা কথা বলব না’ বলেও তখন সে মন্তব্য করেছিল। সেই মতো রবিবার তাকে নিয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ ফের শিলিগুড়ি যায়। কিন্তু দিনভর খুঁজেও মোবাইল মেলেনি।
সে দিন রাত ৯টা নাগাদ বহরপুরে ফিরেই পুলিশ নিত্যানন্দকে আর এক প্রস্থ জেরা করে। তখনই জেরার মুখে ভেঙে পড়ে নিত্যানন্দ জানায়, সে যে বাড়িতে থাকে, সেখানেই তাকের উপরে ব্যাগের মধ্যে দু’টি মোবাইল রয়েছে। নিত্যানন্দ ভাড়া থাকে বহরমপুরের পাকুড়িয়ায় পিন্টু দাসের বাড়িতে। সেই বাড়িতে তার স্ত্রী-পুত্র থাকেন। সেই রাতে সেই বাড়ি থেকেই পুলিশ মোবাইল দু’টি উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আত্রেয়ী তার অ্যানড্রয়েড ফোনটি মাসতুতো দাদা অভিজিৎ মিত্রের কাছ থেকে উপহার পেয়েছিল মাত্র মাস তিনেক আগে। বিজয়াদেবীর মোবাইলে দু’টি সিম ছিল। তার মধ্যে একটি সিম নিত্যানন্দের মানিব্যাগের মধ্যে আগেই খুঁজে পেয়েছিল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, বাকি সিমগুলি নিত্যানন্দ ভেঙে ফেলে দিয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বহরমপুর থানার পুলিশ শীতের রাতে যখন পাকুড়িয়ার বাড়িতে পৌঁছয়, তখন নিত্যানন্দের স্ত্রী মমতা দাস তাঁর ছ’বছরের সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। মমতাদেবী বলেন, “পুলিশ ডাকার পরেই ঘরের দরজা খুলে দিই। নিত্যানন্দকে ওরা নিয়ে আসেনি। কয়েক জন পুলিশ ঘরে ঢুকে চেয়ারে উঠে তাকে রাখা ব্যাগের মধ্যে থেকে ওই মোবাইল দু’টি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।”
মমতাদেবী বলেন, “আমাদের ঘর থেকেই মোবাইল মেলার পরে মনের অবস্থা ভাল নেই। আমাদের সামাজিক সম্মান সব নষ্ট হয়ে গেল।”
তবে মোবাইল দু’টি উদ্ধার হওয়ায় স্বস্তিতে জেলা পুলিশ প্রশাসন।
|