|
|
|
|
আর্মান্দোর ফেড কাপ ভাগ্য বদলানোর লড়াই আজ ইস্টবেঙ্গলের সামনে |
রোগী ভেন্টিলেশনে জেনেও কড়া ওষুধ কোচের
রতন চক্রবর্তী • মঞ্জেরি |
পুরো টিম সাজিয়ে স্ট্র্যাটেজি সংক্রান্ত কিছু নির্দেশ দিয়েই আর্মান্দো কোলাসো-র চিৎকার, “বয়েজ, আমি কী চাইছি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে কারও?” চিডি-মোগা-তুলুঙ্গারা দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন।
কিছু পরে আইস-বক্সের উপর বসে পড়লেন লাল-হলুদের গোয়ান কোচ। সেখান থেকেও তাঁকে ফুটবলারদের বলতে শোনা গেল, “কুইক কুইক। আরও ফাস্ট। না হলে বেঙ্গালুরুকে হারানো যাবে না। অন্তত একটা ম্যাচ জিতে তো বাড়ি যেতে হবে।” তাতেও অনুশীলনে লোবো-সুয়োকারা বড়জোর ‘রিকশা’ হয়ে রইলেন, ডিজেল ইঞ্জিন হলেন না।
সুনীল ছেত্রী-শন রুনির বেঙ্গালুরু এফসি-র মুখোমুখি মঙ্গলবার যে ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল হচ্ছে, তাতে আর্মান্দোর অবস্থা সেই ডাক্তারের মতো, যিনি তাঁর রোগী ভেন্টিলেশনে জেনেও কড়া অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চলেছেন। কিন্তু জানেন না সেটাও কতক্ষণ দেওয়া যাবে।
হয়তো এমন হল, মঞ্জেরি স্টেডিয়ামে কাল আপনার টিম নামার আগেই স্পোর্টিং ক্লুব বা রাংদাজিদের মধ্যে কেউ জিতে গেল, আপনারা তো তখন মাঠে নামার আগেই ফেড কাপের বাইরে! তখন কী মোটিভেশন নিয়ে খেলবেন? “আমরা বিদায় নিয়েছি ধরেই তো আমি কালকের ম্যাচের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সামনে অন্তত একটা সামান্য সুযোগও যখন এসেছে, তখন চেষ্টা করতে দোষ কোথায়?”
সাম্প্রতিক কালে দেশের সফলতম কোচ আর্মান্দোর সঙ্গে মিলে যায় ক্লাব পর্যায়ের আরেক সফলতম প্রাক্তন কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দর্শন। কেরল থেকে সল্টলেকের দূরত্ব কয়েক হাজার মাইল। কিন্তু কথা বলে মনে হল, চিন্তায় দু’জনেই এক বিন্দুতে দাঁড়িয়ে। “এ রকম পরিস্থিতিতে আমিও বহু বার পড়েছি। ছেলেদের বলতাম আকাশ-পাতাল একই দিকে হয়ে যাক, তাও ম্যাচটা জেতো। হয়তো ছিটকে যাব, কিন্তু জিতে মাঠ ছেড়ে বেরেনোর গর্বই আলাদা,” ফোনে বলছিলেন পিকে।
পিকে তাঁর কোচিং জীবনে যাঁদের এ রকম দুঃসময়ে নানা টোটকা দিয়ে সজীব রাখতেন তাঁদের একজন সুভাষ ভৌমিক এখন দেশের অন্যতম সফল কোচ। তাঁর আবার অন্য দর্শন। ফোনে বললেন, “এখন পেপ টকের যুগ নেই। এই পরিস্থিতিতে কাজটা কঠিন, আবার সহজও। ফুটবলাররা নিজেরাই মানসিক ভাবে তৈরি হয়। তবে হারানোর কিছু না থাকলে প্লেয়ারদের মোটিভেট করাটা সহজ হয়।” |
আগের ম্যাচের খলনায়ক কি এ বার নায়ক হতে পারবেন।
ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিসে মোগা। সোমবার।—নিজস্ব চিত্র। |
অন্য ম্যাচের আগের দিনের মতোই চিডি আজও অনুশীলনের পর বললেন, “জয় চাই, গোল চাই।” সঙ্গী মোগা আরও এক কাঠি এগিয়ে। “প্রতিদিন তো গোল মিস করব না! রোজ রোজ বল পোস্টেও লাগবে না।” তবে চিডি-মোগা দু’জনেই বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে গোল করেছিলেন। আই লিগে।
ইস্টবেঙ্গলের দুই বিদেশির এ সব কথা সুনীল ছেত্রী শোনেননি। তবে বেঙ্গালুরু অধিনায়ক তার আগেই বলছিলেন, “আগে কী হয়েছে তা ভেবে লাভ নেই। কাল নম্বই মিনিট কী হবে সেটাই আসল।” দেশের হয়ে ভাইচুং ভুটিয়ার সর্বাধিক গোলের রেকর্ড টপকে গিয়েছেন সুনীল। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ক্লাব ফুটবলে তিনি সে ভাবে সফল নন। সেটাও ‘ভেঙে’ দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। আই লিগে আপাতত শীর্ষে সুনীলের বেঙ্গালুরু এফসি। আর ফেড কাপে আপাতত যুগ্ম সর্বোচ্চ গোলদাত তিনিই।
ফেড কাপেও গ্রুপ শীর্ষে বেঙ্গালুরু। আর ইস্টবেঙ্গল সব শেষে। অনুশীলনের জন্য এ দিন পুরো মাঠ পায়নি বেঙ্গালুরু। ছোট মাঠেই কিছু মুভ অনুশীলন করে বিকেলে রবিন সিংহ-রিনো অ্যান্টো-রা বিদেশি কোচ ওয়েস্টউড-কে নিয়ে ভিডিও অ্যানালিস্টের কাছে বসে পড়েছেন। লাল-হলুদের ভুলের ফায়দা কী ভাবে তুলতে হবে সেটা অবশ্য বোঝানো হল রাতের টিম মিটিংয়ে।
ইস্টবেঙ্গলে ভিডিও অ্যানালিস্ট নেই। অন্ধকারের মধ্যেও আলোর সন্ধানে লাঞ্চ, ডিনার টেবিলে চলছে পেপ টক। চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক হতে টিমে কিছু পরিবর্তন আনছেন আর্মান্দো। খাবরাকে বাদ দিয়ে মাঝমাঠে তুলুঙ্গা। ডিকা আর তুলুঙ্গাদুই পাহাড়িকে দুই উইংয়ে ব্যবহার করে আক্রমণের ঝড় তোলা লক্ষ্য। লেফট ব্যাকে রবার্টকে খেলাতে চান কোচ। সন্ধেয় মহমেডান-ডেম্পো ম্যাচ দেখতে আর্মান্দো সহকারী রঞ্জন চৌধুরীকে নিয়ে এসেছিলেন মঞ্জেরি স্টেডিয়ামে। ভাগ্যক্রমে সেমিফাইনালে উঠলে এদের যে কোনও একটা দলের সঙ্গেই খেলতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে।
কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কী কোচি যেতে পারবে? কঠিন, খুবই কঠিন। তার উপর পাঁচ বার আই লিগ জিতলেও ফেড কাপে আর্মান্দোর কপাল সঙ্গী হয় না। বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। একবারই ২০০৪ ছাড়া চ্যাম্পিয়ন হতে পরেননি। তা-ও আবার বেঙ্গালুরুর সেই ফেড কাপ। যার ফাইনালে মাঠেই মারা গিয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র। কাকতালীয় হতে পারে, কিন্তু কাল বেঙ্গালুরুর এক ক্লাবের বিরুদ্ধেই বাঁচতে নামছেন আর্মান্দো। দেখার, শহর বেঙ্গালুরু আর বেঙ্গালুরুর ক্লাব দীর্ঘ নয় বছর পর চাকা উল্টো দিকে ঘোরে কি না? |
ইস্টবেঙ্গল শেষ চারে যে ভাবে যেতে পারে |
স্পোর্টিং ক্লুব-রাঙ্গদাজিদ ম্যাচ অমীমাংসিত ভাবে শেষ হলে, ইস্টবেঙ্গল দু’গোলের ব্যবধানে বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারালেই চলে যাবে সেমিফাইনালে। |
|
মঙ্গলবার ফেডারেশন কাপে
ইস্টবেঙ্গল : বেঙ্গালুরু এফসি (মঞ্জেরি, ৭-৩০)
আজ টিভিতে
ফেডারেশন কাপ
শিলং লাজং এফসি-মুম্বই এফসি (টেন অ্যাকশন, ৪-০০)
মোহনবাগান-সালগাওকর (টেন অ্যাকশন, ৭-০০) |
পুরনো খবর: ঈশ্বর যদি চান আমরাই সেমিফাইনাল যাব, বলছেন আর্মান্দো |
|
|
|
|
|