ঈশ্বর যদি চান আমরাই সেমিফাইনাল যাব, বলছেন আর্মান্দো
ডাইনিং হলের দরজা সামান্য ফাঁক করে আর্মান্দো কোলাসো কিছুটা বিরক্তির গলাতেই বললেন, “কিছু বলার নেই আমার। কারও দয়ায় সেমিফাইনালে যাব ভেবে অপেক্ষা করার লোক আমি নই। এ বারের ফেড কাপ আমার কাছে অতীত।”
মিনিট পনেরো পরেই উলটপুরাণ। টিম হোটেলের গেটে গা এলিয়ে সেই আর্মান্দোরই মন্তব্য, “কাল রাতে ডিনার টেবিলে রঞ্জন (সহকারী কোচ) যখন বলল বেঙ্গালুরুর ম্যাচ ড্র হয়েছে। আমাদের এখনও সুযোগ আছে, তখন গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছি। ছেলেদের বলেছি, এখানে একটাও ম্যাচ জিততে পারনি। বেঙ্গালুরু ম্যাচটা অন্তত জিতে বাড়ি ফেরো। আমাদের তো হারানোর কিছু নেই। এটা কিন্তু একটা বড় মোটিভেশন।”
চিডি-মোগাদের মতো তাঁদের কোচও কি আশঙ্কা-আশার ঘূর্ণিপাকে? বুঝতে পারছেন না, শেষ পর্যন্ত কোথাকার টিকিট কাটতে হবেকলকাতা না কোচির? বোঝা সম্ভবও নয়। অপেক্ষার বিনিদ্র রাত জাগতে হবে আরও দু’দিন। মঙ্গলবার সন্ধের আগে লাল-হলুদের জন্য কোথাকার টিকিট কনফার্মড্ হল, তা জানার উপায় নেই যে।
আর্মান্দোর ইস্টবেঙ্গলের শেষ চারে যাওয়ার জটিল অঙ্ক মঙ্গলবার প্রথম ম্যাচে রাংদাজিদ-স্পোর্টিং ক্লুবের কেউ জিতলেই চিডিদের কলকাতার টিকিট কাটতে হবে। ওই ম্যাচ ড্র থাকলে তবেই ওই দিনের পরের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের সামনে সুযোগ। সে ক্ষেত্রেও ইস্টবেঙ্গলকে অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে জিততেই হবে বেঙ্গালুরুর এফসি-র বিরুদ্ধে। তবে গোলের ওই হিসেবটার সামান্য বদল হতে পারে। খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার মতো সেই আশার কুহকিনীই মল্লাপুরমের ইস্টবেঙ্গল টিম হোটেলকে শ্মশানের মতো নিঃস্তব্ধ করে দেয়নি এখনও। জামাকাপড়, বুট, কিট, ডাইনিং টেবিল সবই আছে আগের অবস্থানে। হোটেলের গেটে ‘দেশের সবচেয়ে সাহসী টিম ইস্টবেঙ্গল’ লেখা ব্যানারটাও রয়েছে। হয়তো সেটা বিদ্রুপের মতো দেখাচ্ছে। তবু রয়েছে!

আশা-আশঙ্কায় ইস্টবেঙ্গল কোচ। মঞ্জেরিতে
টিম হোটেলের লবিতে রবিবার।—নিজস্ব চিত্র।

“রাংদাজিদের সঙ্গে বেঙ্গালুরু ড্র করবে অপ্রত্যাশিত ছিল আমার কাছে। সেটা হওয়ায় অন্তত একটা সুযোগ এসেছে। তা ছাড়া শেষ ম্যাচটা জিতলে সেটা পরের টুর্নামেন্টের জন্য আত্মবিশ্বাস আনার কাজে লাগবে। এর বেশি আর কিছু নেই,” বলছিলেন ইস্টবেঙ্গলের গোয়ান কোচ। শনিবার রাতে মঞ্জেরি স্টেডিয়াম থেকে বেরনোর সময় টিমবাসের সিটে মাথা নিচু করে বসে থাকা সুয়োকা-অর্ণব-ডিকাদের কালো মুখগুলোতেও এ দিন যেন অন্তত শেষ বিকেলের হালকা আলো। একমাত্র মোগা বাদে। “মোগা আমার কাছে গতকাল রাতে ক্ষমা চাইতে এসেছিল গোল মিসের জন্য। আমি বলেছি, এটাই জীবন। যা চাইবে তাই-ই পাওয়া যায় নাকি? ঈশ্বর চাননি তাই হয়নি। ঈশ্বর যদি চান আমরাই সেমিফাইনাল যাব,” বলার সময় গোয়ার আগেসাইন গ্রামের আর্মান্দোকে রীতিমতো আধ্যাত্মিক দেখায়। ধর্মভীরুও। ইস্টবেঙ্গলের হারের পরই খবর পান, খেলোয়াড়জীবনের সতীর্থ স্ট্রাইকার জন ফ্র্যাঙ্কো মারা গিয়েছেন। সে জন্য আরও মনমরা আর্মান্দো।
গোয়া ফুটবলে চালু প্রবাদ ‘রিজার্ভ বেঞ্চে আর্মান্দো থাকলে হারা টিমও জিতে যায়। এমন চওড়া কপাল!’ গতকাল ফেড কাপ থেকে নিশ্চিত বিদায় জেনে হোটেলে ফেরা এবং পরের দু’ঘণ্টার মধ্যেই ডিনার টেবিলে অপ্রত্যাশিত ভাবে ফের ‘সজীব’ হয়ে ওঠা ইস্টবেঙ্গল সেই প্রবাদকে মান্যতা দিল কি না তা বোঝার সময় এখনও আসেনি। তবে গোয়া ফুটবলের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের এক স্নাতক বললেন, “আর্মান্দোর কপাল তো! হয়তো দেখবেন ও যা চাইছে শেষ পর্যন্ত সেটাই হচ্ছে!”
কিন্তু ইস্টবেঙ্গলে আর্মান্দো যা চাইছেন তা কি হবে? “ডেম্পোয় এত বছর কোচিং করিয়েছি, কখনও এ রকম সমস্যায় পড়িনি। ৪-৪-২ আমার প্রিয় ফর্মেশন। টিমটাকে তো সেটাই খেলানো যাচ্ছে না। ৪-১-৪-১ এটা কী ফর্মেশন! খেলো, আনন্দের জন্য খেলো। ডিফেন্সিভ স্ক্রিন কীসের জন্য? ওটা বিশ্ব ফুটবলে এখন অচল,” বলে দেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। “বেশ খানিকটা সময় না পেলে বদল সম্ভব নয়। যদি ইস্টবেঙ্গল আমাকে কোচ রাখে, তা হলে পরের বার চেষ্টা করব।”
ইস্টবেঙ্গলে এ দিন অনুশীলন হয়নি। তবে মানসিক ভাবে দলটা যে সজীব হয়ে উঠছে সেটা খাবরার সঙ্গে কথা বলেই মালুম হয়। “আই লিগে বেঙ্গালুরুকে আমরা দু’টো ম্যাচেই হারিয়েছি। সেটা আমাদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে। একটা ম্যাচ খারাপ হয়েছে বলে সব ম্যাচ খারাপ খেলব নাকি?” বলছিলেন ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক।
স্পোর্টিং ম্যাচে হারের পর ইস্টবেঙ্গলের যে ফুটবলারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন সতীর্থরা সেই মোগাকে এ দিন দেখা যায়নি লবিতে। কোচ অবশ্য তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। বরং চিডির ফর্ম নিয়ে কিছুটা হতাশ লাল-হলুদ কোচ। “চিডি-মোগা বোঝাপড়াটা ঠিক হচ্ছে না। এত গোলের সুযোগ আসছে কিন্তু কেন যে গোল হচ্ছে না বুঝছি না,” টিপিক্যাল কলকাতা কোচেদের কথাগুলোই শোনা যায় পাঁচ বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন গোয়ান কোচের গলায়। ডাকাবুকো আর্মান্দো কি সত্যিই চাপে? বুঝতে পারছেন এটা গোয়া নয়, কলকাতার টিম? ডেম্পো নয়, ইস্টবেঙ্গল!

সোমবারে ফেড কাপ

মহমেডান: ডেম্পো (মঞ্জেরি, ৭-৩০)
ভবানীপুর: ইউনাইটেড সিকিম (মঞ্জেরি, ৫-০০)
ইউনাইটেড স্পোর্টস: ঈগলস (কোচি, ৪-৩৫)
চার্চিল: পুণে এফসি (কোচি, ৭-০০)

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.