ছিন্নভিন্ন শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা
রও অন্তত চব্বিশ ঘণ্টা না-কাটলে তাঁকে পুরোপুরি বিপন্মুক্ত বলতে পারছেন না চিকিৎসকেরা।
ছিন্নভিন্ন যোনি থেকে ‘মিউকাস মেমব্রেন’ বাইরে বেরিয়ে এসেছে! সেলাইয়ের পরেও রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে যোনিদ্বার দিয়ে। জরায়ু-মুখ বা সার্ভিক্স যেখানে যোনির সঙ্গে যুক্ত, সেই অংশটিও (চিকিৎসা পরিভাষায়, ‘ভল্ট’) প্রবল আঘাতে ছিঁড়ে গিয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে ডাক্তারদের আশঙ্কা, ক্ষত তৈরি হয়েছে অন্ত্রেও।
সব মিলিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থাতেই হাওড়া হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন একুশ বছরের মেয়েটি, যিনি গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে প্রচণ্ড শারীরিক যন্ত্রণার পাশাপাশি মানসিক ‘ট্রমা’র সঙ্গেও তাঁকে যুঝতে হচ্ছে। তার উপরে বিপর্যস্ত দেহে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় থাকছে প্রতি মুহূর্তে।
সোমবার দুপুরে হাওড়া হাসপাতালের দোতলায় স্ত্রী-রোগ বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে শীর্ণকায়া তরুণীকে। শ্যামলা রং, কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুল। গলা অবধি সবুজ চাদর টানা। ঠোঁটের কোণে সামান্য রক্তের দাগ। হাসপাতাল-সূত্রের খবর, অবস্থা ওঁর এতটাই খারাপ যে, মেডিক্যাল টেস্টের জন্য অ্যানাস্থেশিয়া প্রয়োগ করে অজ্ঞান করতে হয়েছিল। অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ডাক্তারেরা তাঁকে পরীক্ষা করেন। রক্তে ভেজা পোশাক ও শরীর থেকে সংগৃহীত নমুনাদি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
হাসপাতাল-সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিক্যাল পরীক্ষায় যোনিদ্বারে বীভৎস অত্যাচারের চিহ্নের পাশাপাশি মেয়েটির দেহের বেশ কিছু জায়গায় কালশিটে ধরা পড়েছে। তাঁর অন্ত্রে ক্ষত হয়ে থাকতে পারে বলেও চিকিৎসকদের প্রাথমিক অনুমান। তাঁদের বক্তব্য: অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষণের ফলে অন্ত্রে ক্ষত তৈরি হয়। গণধর্ষণ হয়ে থাকলে ভয়টা আরও বেশি। আর এই মেয়েটির শরীরে অত্যাচারের যে সব চিহ্ন মিলেছে, তাতে অন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টির সম্ভাবনাই জোরালো হয়েছে। এতে শরীরের ভিতরে সংক্রমণ ছড়ানোর প্রভূত আশঙ্কা থাকছে। প্রসঙ্গত, দিল্লির গণধর্ষণ-কাণ্ডে নিগৃহীতা ‘নির্ভয়া’রও তা-ই হয়েছিল। উপরন্তু এই তরুণীর মলদ্বারেও ক্ষত হয়েছে বলে ডাক্তারেরা জানিয়েছেন। ফলে শরীরের ভিতরে আরও একাধিক সমস্যা সৃষ্টির যথেষ্ট সম্ভাবনা। কী রকম?
এক চিকিৎসকের ব্যাখ্যা, “মলদ্বার শিথিল হয়ে পড়তে পারে। তা হলে শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মে নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে যায়। যখন-তখন মল-মূত্র নির্গত হয়ে যায়। একটি অল্পবয়সী মেয়েকে আজীবন এমন সমস্যা বয়ে বেড়াতে হলে খুবই মর্মান্তিক। এটা মাথায় রেখে ওঁর যথাযথ চিকিৎসা হওয়া জরুরি।” শারীরিক ভাবে স্থিতিশীল হওয়ার পরে তরুণীর মানসিক ‘ট্রমা’ কাটাতে মনোবিদের সাহায্য নেওয়াও বিশেষ প্রয়োজন বলে চিকিৎসকেরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য-আধিকারিক দেবাশিস রায় জানিয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেরে চিকিৎসকেরা প্রাথমিক ভাবে মত দিয়েছেন, এটি গণধর্ষণেরই ঘটনা। মেয়েটির যোনিতে গভীর ক্ষত রয়েছে। ক্ষতস্থানে বেশ ক’টি সেলাই হয়েছে। “সম্ভবত রাতভর রক্তক্ষরণের দরুণ উনি নেতিয়ে পড়েছিলেন। সঙ্গে ছিল অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা। হাসপাতালে শুয়েও কাতরাচ্ছিলেন। ডাক্তারবাবুরা মেডিক্যাল পরীক্ষা করার জন্যও ওঁকে স্পর্শ করতে পারছিলেন না। তাই অজ্ঞান করে পরীক্ষা করতে হয়েছে,” বলেন দেবাশিসবাবু। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য-আধিকারিক দুপুরে এ-ও বলেন, “জ্ঞান ফিরলে ফের যন্ত্রণা শুরু হবে। তাই ওঁকে আপাতত ঘুমের ওষুধ দিয়ে রাখা হচ্ছে।” বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরের পরে রাতে অবশ্য মেয়েটির অবস্থা তুলনায় একটু স্থিতিশীল হয়। রাতের দিকে তিনি সামান্য কথাবার্তাও বলেছেন বলে ওই হাসপাতাল-সূত্রে জানা গিয়েছে।
রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় এ দিন দুপুরে হাওড়া হাসপাতালে মেয়েটিকে দেখতে যান। ওয়ার্ডে গিয়ে তাঁর শয্যার পাশে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। গিয়েছিলেন মহিলা কমিশনের প্রাক্তন সদস্যা আইনজীবী ভারতী মুৎসুদ্দিও। ডাক্তারদের সঙ্গে কথাবার্তার পরে সুনন্দাদেবীর মন্তব্য, “এমন নৃশংস ভাবে যে অত্যাচার হতে পারে, না-দেখলে বিশ্বাস করা যায় না!”

এই সংক্রান্ত আরও খবর...





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.