সবটাই পেটের টানে। সকাল ৮টা বাজতে না-বাজতেই বাড়ি থেকে কাজে বেরিয়ে যেতেন হাওড়া-উলুবেড়িয়ার ২১ বছরের তরুণীটি। ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা।
অত রাতে অটোরিকশা মেলে না। স্টেশন থেকে বাড়ি পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অনেক সময়েই হেঁটে আসতে হত তাঁকে। কয়েক দিন আগে রাতে ফেরার পথে মোটরসাইকেল আরোহী কয়েক জন যুবক তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছিল। পুলিশের কাছে যাননি তিনিনি। পরিবারের বক্তব্য, ওই তরুণী ভেবেছিলেন, পুলিশে অভিযোগ জানানোর ‘স্পর্ধা’ দেখালে বিপদ হয়তো আরও বাড়বে।
এই সব প্রতিকূলতা অবশ্য দমাতে পারেনি ছোটখাটো চেহারার ওই তরুণীকে। কারণ, সংসারে প্রবল অর্থাভাব। বাবা অসুস্থ, বেকার। মা নাম আয়া সেন্টারে সব দিন কাজ পান না। বাধ্য হয়ে রুজিরোজগারে নামতে হয়েছিল দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ওই তরুণীকে। কিছু দিন বিভিন্ন ধরনের টুকটাক কাজ করার পরে ছ’মাস ধরে তিনি কাজ করছেন শপিং মলে। তাঁর সামান্য রোজগারে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জুটত পরিবারের।
সোমবার দুপুরে ওই তরুণীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, অনটনের চিহ্ন সর্বত্র। দু’কামরার পাকা দেওয়াল আর টালির চালের বাড়িতে বসে ছিলেন মেয়েটির বাবা। ছোট তক্তপোশে পাতা জীর্ণ বিছানা। প্লাস্টিকের ছোট চেয়ারে টিভি সেট। সেটির ঢাকনাও মলিন। গৃহকর্তা জানান, পরিবারের ভরণপোষণের মূল ভরসা মেয়ের সামান্য রোজগার।
ওই তরুণীর বাবার কথায়, “কত বার বলেছি, বাড়ি ফিরতে বেশি রাত হয়ে যায়, এমন কাজ করিস না। কিন্তু মেয়ে বলত, ‘অন্য কাজ কোথায় পাব?’ সংসারকে দাঁড় করানোর জন্য অসুবিধে মাথায় করে কাজ করার পরে বিপদের ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরত ও।” তিনি জানান, দিন তিনেক আগে মেয়ে রাতে স্টেশন থেকে হেঁটে ফেরার সময়ে মোটরবাইক আরোহী তিন-চার জন যুবক পথ আটকায়। তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করে। পুলিশে অভিযোগ করা হয়নি কেন?
তরুণীর বাবা বলেন, “মেয়েই বারণ করল। বলল, ‘রাতবিরেতে বাড়ি ফিরতে হয়। থানায় অভিযোগ জানালে বিপদ বাড়বে বই কমবে না।’ তাই পুলিশে জানানো হয়নি।’’
এর আগেও দু’-এক বার কাজের চাপে রাতে বাড়িতে ফিরতে পারেননি ওই তরুণী। বাড়িতে বলতেন, অনেক সময়ে কর্মস্থলেই থাকতে হয় তাঁকে। হাওড়া শহরে মামার বাড়িতেও কয়েক বার রাত কাটিয়েছেন। রবিবার রাতে না-ফেরায় মা-বাবা ভেবেছিলেন, কর্মস্থলে অথবা মামার বাড়িতে থেকে গিয়েছেন তরুণী। বাবা বলেন, “এর আগেও এমনটা হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম, এ বারেও তা-ই হয়েছে। তাই রাতে বিশেষ খোঁজ করিনি।”
মেয়ের ভয়াবহ পরিণামের কথা সোমবার দুপুর পর্যন্ত জানতেন না বাবা। প্রতিবেশীরা জানান, ঘরে সংবাদমাধ্যমের আনাগোনা দেখেই বোঝা যায়, কিছু একটা ঘটেছে। এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ ওই তরুণীর বাবা বলেন, “এখনও পর্যন্ত আমি বুঝতে পারছি না, ঠিক কী ঘটেছে। আমার স্ত্রীও আমাকে কিছু জানাচ্ছেন না। বাড়িতে পুলিশ-প্রশাসনের কেউ আসেনি। তবে ভয় হচ্ছে, বোধ হয় খারাপ কিছু ঘটেছে।” |