মাঝেমধ্যে পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু হুগলির নানা এলাকায় অটোচালকদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হচ্ছে না।
দিন কয়েক আগেই খুচরো নিয়ে বিবাদের জেরে মহিলা যাত্রীকে মারধরের অভিযোগে কলকাতার এক অটো-চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। হুগলি জেলাতে এখনও মারধরের ঘটনা সামনে না এলেও প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে অটো-চালকদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে। কিন্তু সব ছাপিয়ে সাধারণ মানুষ বেশি বিরক্ত অটোতে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে বাড়তি যাত্রী বহন করা নিয়ে। এর সঙ্গে রয়েছে বে-রুটের অটোর দাপাদাপিও। সব মিলিয়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য অটোতে চড়েও স্বস্তি পাচ্ছেন না সওয়ারিরা। পুলিশকে জানিয়েও সব ক্ষেত্রে সুরাহা মিলছে না বলে অভিযোগ। শহর এবং গ্রামাঞ্চলে যাত্রী পরিবহণে অটো এখন গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু জেলা পুলিশের ঢিলেঢালা নজরদারি এড়িয়ে হুগলির বহু রুটেই নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে অটোতে ছ’জন বা তার বেশি যাত্রী বহন করা হচ্ছে। বিভিন্ন অটো সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষয়টি সমর্থন না করার কথা জানানো হলেও আইন ভাঙা চলছেই। |
রাস্তা জুড়ে অটোর সারি। শ্রীরামপুরে দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি। |
উত্তরপাড়া স্টেশন থেকে দিল্লি রোড, অফিসের সময়ে শ্রীরামপুর, চন্দননগর, এমনকী, চুঁচুড়া স্টেশন-ঘড়ির মোড়, চুঁচুড়া কোর্ট-ত্রিবেণী রুটেও প্রায় সব দিনই অটোতে বাড়তি যাত্রী দেখা যায়। একই ছবি দেখা যায় জেলার আরও কয়েকটি অটো-রুটেও। চুঁচুড়া কোর্ট-ত্রিবেণী রুটের যাত্রীদের বক্তব্য, ওই রুটে একে বাস নেই। তার উপর অটোও কম। অগত্যা, ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়।
এ নিয়ে তৃণমূল প্রভাবিত চুঁচুড়া অটোরিকশা সংগঠনের সম্পাদক গোবিন্দ দাশগুপ্ত বলেন, “অটো-চালকদের বলা আছে, অতিরিক্ত যাত্রী না তোলার জন্য। তা সত্ত্বেও কেউ যদি এমনটা করে, আমরা নিশ্চয়ই দেখব। ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।” শ্রীরামপুর-বাগখাল অটো সংগঠনের সভাপতি উত্তম রায় বলেন, “অটোতে বেশি যাত্রী তোলা আমরা সমর্থন করি না। যদি তেমন হয়, বিষয়টি নিশ্চয়ই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু বলেন, “ট্রাফিক পুলিশের তরফে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। কেউ অতিরিক্ত যাত্রী তুললে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
সম্প্রতি চুঁচুড়া শহরের অটো-চালকেরাই এলাকায় বে-রুটের অটো চলাচলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। অটো দিয়ে চুঁচুড়া থানা চত্বর ঘেরাও করা হয়। প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও সমস্যা এখনও মেটেনি। অটো-চালকদের অভিযোগ, এতে তাঁদের আয় কমছে। বে-রুটের অটো-চালকেরা যাত্রীদের থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া নিচ্ছে। একই সমস্যা রয়েছে রিষড়ার বাঙালপাড়া-দিল্লি রোড রুটের অটো-চালকদেরও। জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ কর্তা (আরটিও) সৈকত দাস সমস্যার কথা উড়িয়ে দেননি।
তিনি বলেন, “অটো-চালকেরা অনেক সময় নির্দিষ্ট রুট ছাড়া নিজেদের সুবিধা মতো অথবা বাড়ির সামনের রুটে অটো চালান। মাঝেমধ্যেই এই সব অটোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দিই।”
এ ছাড়াও খুচরো নিয়ে অটো-চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা তো লেগেই রয়েছে, সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা অটোস্ট্যান্ড নিয়েও। শ্রীরামপুরের মতো ব্যস্ত শহরের প্রাণকেন্দ্র এন এস অ্যাভিনিউ এবং বি পি দে স্ট্রিটে সকাল থেকেই অটোর লাইন লেগে যায়। ফলে, দু’টি রাস্তাতেই যানজট বাড়ে। গন্তব্যে পৌঁছতে নাকাল হন সাধারণ যাত্রীরা। জেলা সদর শহর চুঁচুড়ায় থানা লাগোয়া এলাকায় রাস্তার উপরেই গড়ে উঠেছে শহরের মুল অটোস্ট্যান্ড। এখানেও যানজট নিত্যদিন লেগেই রয়েছে। একই ছবি চন্দননগর মহকুমাতেও। সেখানে মহকুমাশাসকের অফিস থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অটোস্ট্যান্ড। সেটিও রাস্তার উপর।
উত্তরপাড়া স্টেশনের পূর্ব দিকে অটো দাঁড়ায় আরএস ভার্মা রোড এবং জ্ঞানেন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের মুখে। সেখানেও একই সমস্যা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, স্থানীয় পুরসভাগুলি বাসস্ট্যান্ড নিয়ে যতটা ভাবনা-চিন্তা করে, অটোস্ট্যান্ড নিয়ে ততটা ভাবে না।
এ নিয়ে শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল উত্তম রায় বলেন, “রাস্তার উপরে অটো দাঁড়ানোয় সমস্যা যে হয়, এটা মিথ্যে নয়। এখানে বাস টার্মিনাস গড়া হচ্ছে। সেই কাজ শেষ হলে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় আধুনিক মানের অটোস্ট্যান্ড তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
এ বিষয়ে তাঁর সংযোজন, “যানজট এড়াতে প্রয়োজনে ওয়ান-ওয়ে করে অটো চালানো হবে।” হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “অস্থায়ী অটোস্ট্যান্ডের জন্য অসুবিধা হয়, এটা বাস্তব। শহরে স্থায়ী অটোস্ট্যান্ড করার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যে পরিমাণ জায়গা দরকার, তা মিলছে না।”
সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন, অটোর দৌরাত্ম্য কবে কমবে। |