নবম ও দশম শ্রেণির দুঃস্থ পড়ুয়াদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা সহায়তা কেন্দ্র চালু করল বনগাঁ পুরসভা। সোমবার সকাল সাতটা থেকে স্থানীয় শিমুলতলায় পুরসভার একটি কমিউনিটি হলে ক্লাস শুরু হল। যোগ দিয়েছে নবম শ্রেণির ৭০ জন ও দশম শ্রেণির ৮০ জন পড়ুয়া রয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, ৬২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ওই কেন্দ্রে পড়ানোর জন্য পুরসভার কাছে আবেদন করেছেন। তাঁরা অধিকাংশই কর্মরত স্কুলশিক্ষক।
রবিবার ওই কেন্দ্রের উদ্বোধন করে পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “অনেক অভিভাবক বই কেনা ও টিউশনের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। তাই এই কেন্দ্র চালু করা হল। স্বেচ্ছায় আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য শিক্ষকদের ধন্যবাদ।” পুরসভার মধ্যে অন্য এলাকায় আরও দু’টি শিক্ষা সহায়তা কেন্দ্র করার পরিকল্পনা আছে, জানান তিনি। |
সোমবার থেকে চালু হল ক্লাস। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক। |
শিমুলতলার এই কেন্দ্রটি চালু করার আগে পুরসভার পক্ষ থেকে কেব্ল টিভি, মাইক, লিফলেট বিলি করে প্রচার করা হয়। আবেদনের ভিত্তিতে যাচাই করে পড়ুয়াদের বেছে নেওয়া হয়েছে। বনগাঁ শহরের পড়ুয়াদের নিয়ে শুরু। তবে গ্রামের পড়ুয়ারাও আবেদন করলে সুযোগ পাবে। পারিবারিক অবস্থা খতিয়ে দেখে পড়ুয়াদের নেওয়া হচ্ছে।
সোমবার সকালে ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সকাল সাতটা থেকে পড়াতে শুরু করে দিয়েছেন শিক্ষকেরা। নবম শ্রেণির ছাত্র রণি অধিকারী, চাঁপা সরকারেরা বলেন, “আমাদের টিউশন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার পড়াশোনা শুরু হতে ভাল লাগছে।” এক পড়ুয়ার বাবা পেশায় কাঠমিস্ত্রি। ছেলেকে ওই সহায়তা কেন্দ্রে দিতে এসে তিনি বললেন, “সামনেই ওর মাধ্যমিক। পরীক্ষার আগে এমন সুযোগ পাওয়ায় ওর ভাল হবে।”
বনগাঁর কুমুদিনী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রিয়া প্রামাণিক এই কেন্দ্রে পড়তে এসেছিল সোমবার। তার বাবা শ্যামসুন্দরবাবু বিভিন্ন ভাজা খাবার ফেরি করেন। মেয়েকে নিয়মিত গৃহশিক্ষকের কাছে পাঠানোর সামর্থ্য তাঁর নেই। নবম শ্রেণির পড়ুয়া মিলন সরকারের বাবা মিহিরবাবু রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মিলনেরও পয়সা দিয়ে টিউশন পড়ার ক্ষমতা নেই। পুরসভার এই উদ্যোগে আশার আলো দেখছে রিয়া-মিলনের মতো অনেকে।
স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আগ্রহী শিক্ষক-শিক্ষিকারা কী বলছেন? বনগাঁ হাইস্কুলের শিক্ষক চন্দন ঘোষ বলেন, “সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পড়াতে এসেছি। যদি ওই পড়ুয়াদের লেখাপড়ায় কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারি।” বনগাঁর কবি কেশবলাল বিদ্যাপীঠের শিক্ষক চন্দন দাসও বলেন, “ছাত্রদের জন্য কিছু করতে পারার অনুভূতিটাই আলাদা।” |