যেন ‘চাকরির মেলা’!
ওঁরা এসেছিলেন কোন স্কুলে চাকরি পেলে সুবিধা হয়, তা জানাতে। বাড়ি ফিরলেন একেবারে চাকরির নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে।
হাওড়া জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য রবিবার যোগেশচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদ আয়োজন করেছিল কাউন্সেলিংয়ের। ‘টেট’ পরীক্ষায় ওই পদের জন্য যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের পছন্দমতো স্কুল বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা ছিল কাউন্সেলিংয়ে। কিন্তু এ দিন হাতে-গরম নিয়োগপত্রও সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন তাঁরা। বিকেল গড়িয়ে রাত হয়েছে। কিন্তু তখনও থামেনি নিয়োগপত্র বিলি। জেলায় এ ভাবে প্রাথমিকে নিয়োগপত্র দেওয়ার নজির এই প্রথম বলে জানিয়েছে সংসদই। এর আগে বরাবর রেজিস্ট্রি ডাকে নিয়োগপত্র পাঠানো হত। এ বারে ব্যতিক্রম হল কেন?
সংসদের সভাপতি পুলককান্তি দেব বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। তাই কাউন্সেলিং চলাকালীনই ঠিক করলাম আর দেরি নয়, এ দিনই নিয়োগপত্র দিয়ে দেব। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো দ্রুত কাজ করতে বলছেন। নিয়োগপত্র যখন দিতেই হবে, তা হলে আর চিঠিচাপাটি করে সময় নষ্ট করা কেন?”
সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন চূড়ান্ত সফল মোট ৮১৬ জন প্রার্থীকেই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। চাকরিপ্রার্থীরা কিন্তু জানতেন না যে এ দিনই তাঁদের নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। কাউন্সেলিং শুরু হয় বেলা সাড়ে ১০টা থেকে। প্রার্থীরা কড়া নিরাপত্তায় স্কুলে ঢোকেন। কাউন্সেলিংয়ের জন্য সংসদের আধিকারিক এবং কর্মী মিলিয়ে মোট ৩৫ জন ছিলেন। ছিলেন বিভিন্ন চক্রের স্কুল পরিদর্শকেরা। মোট ১৫টি টেবিলে কাজ চলে। এ দিনই যে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে তা চাকরিপ্রার্থীদের জানানো হয় বেলা তিনটে নাগাদ।
মাইকে ওই সুখবর শোনামাত্র তুমুল আনন্দে ফেটে পড়েন চাকরিপ্রার্থীরা। নিয়োগপত্র দেওয়া শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ। তখন স্কুলের মাঠে নেমেছে গাঢ় অন্ধকার। সংসদ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করে ফেলেন হ্যালোজেন আলোর। স্কুল চত্বর যেমন ঝলমল করে ওঠে, তেমনই চাকরিপ্রার্থীদের মুখেও ছড়িয়ে পড়ে একরাশ উচ্ছ্বাস।
একের পর এক প্রার্থীকে মাইকে নাম ধরে ডেকে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়। বিরামহীন ভাবে নিয়োগপত্রে সই করে যাচ্ছিলেন সংসদের সভাপতি এবং জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক। চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন বহু মহিলাও। তাঁদের সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই নিয়োগপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। শেষতম প্রার্থীকে যখন নিয়োগপত্র দেওয়া হয় তখন ঘড়ির কাঁটা ১১টা ছুঁই ছুঁই। সংসদের এক কর্মীর কথায়, “আমাদের যত কষ্টই হোক, চাকরিপ্রার্থীদের মুখের হাসি আমাদের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।”
অনেকে সঙ্গে করে এনেছিলেন নিজেদের অভিভাবকদের। নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে স্কুল চত্বরের বাইরে এসে তাঁদের প্রণাম করতেও দেখা গেল কয়েক জনকে। চলল মিষ্টিমুখও। চাকরি বলে কথা!
জয়পুরের ভাটোরা থেকে আসা কয়েকজন প্রার্থী নিয়োগপত্র নিয়ে দ্রুত ফিরছিলেন হাওড়া স্টেশন থেকে শেষ ট্রেন ধরর জন্য। তার ফাঁকেই বলে ফেললেন, “আর তর সইছে না। পছন্দমতো স্কুলে নিয়োগপত্র পেয়েছি। সোমবারেই কাজে যোগ দেব।”
বাস্তবিকই, দীর্ঘদিন পরে সোমবার হাওড়ার বহু প্রাথমিক স্কুল নতুন শিক্ষকের মুখ দেখল। |