এ বার রড মেরে তরুণীর মাথা ফাটালেন অটোচালক
দূরত্ব দু’পা-ও নয়। তার জন্য এত ভাড়া?
প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদ করেছিলেন অটো-যাত্রী তরুণী। পরিণামে লোহার রড মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিলেন অটোর চালক! সোমবার ভরদুপুরে, খাস কলকাতার কড়েয়া থানার কাছে বেকবাগানে। গত বুধবারই তারাতলায় এক অটোচালকের থাপ্পড়ে নাক ফেটেছিল এক মহিলার। তার পরে এ দিনের ঘটনায় নগর জুড়ে এক শ্রেণির অটোচালকের বেপরোয়া প্রতিপত্তির ছবিটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আহত মৌসুমি।
তারাতলা-কাণ্ডে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন অবশ্য মেয়েটির আর্তনাদ শুনে অটোর অন্যান্য যাত্রী, পথচারী ও পুলিশ মিলে অটোচালককে ধরে ফেলেছেন। মৌসুমি কুম্ভকার নামে নিগৃহীতা তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে অটোচালক আমির আলির বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার ধারা দিয়ে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। মৌসুমিকে রক্তাক্ত অবস্থায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মাথায় দু’টো সেলাই পড়েছে। পুলিশকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। এ দিন তাঁর কড়া প্রতিক্রিয়া: “ওই অটোচালক আগেও অনেক অপরাধ করেছেন। এটা ক্ষমার অযোগ্য।”
তবে এ দিন ভরা দুপুরে শহরের বুকে এক অটোচালকের ওই ‘দাদাগিরি’ অবশ্য নতুন কিছু নয়। বুধবারের ঘটনাটির সম্প্রসারণই বলা যেতে পারে। সে দিন তারাতলায় স্রেফ খুচরো নিয়ে বিতণ্ডার জেরে মহিলা যাত্রীর নাক ফাটাতে কসুর করেনি অটোচালক। পল্লবী চট্টোপাধ্যায় নামে ওই মহিলার অভিযোগ ছিল, অটো থেকে নেমে তিনি পঞ্চাশ টাকার নোট দিয়ে দশ টাকা ভাড়া কাটতে বলেছিলেন। চালক বচসা শুরু করেন। শেষে তাঁর নাকে-গালে থাপ্পড় মেরে, পঞ্চাশ টাকা না-ফিরিয়েই চম্পট দেন। মারের চোটে তাঁর নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। পরে অটোচালককে ধরে পুলিশ।
আপনার মোবাইলে QR Reader ডাউনলোড করে এই QR
কোডটি স্ক্যান করুন আর দেখে নিন আক্রান্ত মহিলার প্রতিক্রিয়া।
অটোর এ হেন দৌরাত্ম্যের পিছনে সরকারের বাসভাড়া-নীতির ছায়াও দেখছেন রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, সরকার বাসভাড়া না-বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় রাস্তা থেকে সরকারি-বেসরকারি বাস কার্যত উঠে যেতে বসেছে। গণ-পরিবহণের বেহাল দশায় মানুষের অটো-নির্ভরতা বেড়েছে, যার পুরো ফায়দা তুলছেন অটোচালকেরা। কোথাও তাঁরা মর্জিমাফিক রুট ভেঙে যাত্রী তুলছেন, কোথাও দেদার ভাড়া হাঁকছেন। তা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে ওঁদের বচসা লেগেই থাকছে, পরিণতিতে গায়ে হাত তুলতেও তাঁরা দু’বার ভাবছেন না। মন্ত্রী-সহ পরিবহণ-কর্তাদের হুঁশিয়ারিতেও কোনও হেলদোল নেই! বস্তুত অটোর উপরে সরকারের কার্যত কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই বলে আক্ষেপ শোনা যাচ্ছে পুলিশ-সহ প্রশাসনের নানা মহলে।
এবং বুধবারের থাপ্পড়ের পরে সোমবারের রডের বাড়ি তারই প্রমাণ। বেকবাগানে এ দিন ঠিক কী ঘটেছে?
মৌসুমি ও তাঁর সঙ্গী রাজু আহমেদের বয়ান অনুযায়ী, বেকবাগান যাওয়ার জন্য ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের দমকল অফিসের সামনে ওঁরা দু’জন অটো ধরেছিলেন। ভাড়া চাওয়া হয় বারো টাকা করে মোট ২৪ টাকা। বেকবাগানের মোড় আসতে তাঁরা চালককে বলেন একটি শপিং মলে যাওয়ার কথা। “আমরা মলটা চিনতাম না। চালককে জানানোয় উনি বললেন, সে তো অনেক দূর! যেতে হলে আরও তিরিশ টাকা লাগবে।” বলেন মৌসুমি। তাঁর দাবি, “আমরা রাজি হয়ে যাই। এমনকী, পুরো টাকাটা তখনই দিয়ে দিই।”
অভিযুক্ত অটোচালক।
দেখা যায়, বেকবাগান মোড় পেরিয়ে সামান্য এগোলেই শপিং মল। পুলিশি হিসেবে, দূরত্বটা বড়জোর পাঁচশো মিটার। এটুকুর জন্য বাড়তি তিরিশ টাকা নিলেন কেন?
অটো থেকে নামার সময়ে চালকের কাছে সেটাই জানতে চেয়েছিলেন রাজু। তাতেই বচসার সূত্রপাত। মৌসুমির কথায়, “কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। হঠাৎ দেখি, অটোচালক রাজুকে মারছেন! আমি প্রতিবাদ করে বলি, আপনি যে রকম অন্যায় ভাবে দাদাগিরি করছেন, তা ঠিক নয়। টাকা বেশি নিচ্ছেন। আবার মারধর করলেন!” এর পর অটোচালক সিটের পাশের রড খুলে তাঁর মাথায় মারেন বলে মৌসুমির অভিযোগ।
অটোর অন্য দুই যাত্রী এতক্ষণ বসে ছিলেন। রডের ঘায়ে একটি মেয়ের মাথা ফেটে রক্ত বার হচ্ছে দেখে তাঁরা এগিয়ে আসেন। পথচলতি কয়েক জন ছুটে আসেন। রাস্তার মাঝে জটলা ও চিৎকার শুনে আসে পুলিশও। ধরা পড়েন অটোচালক আমির। এক প্রত্যক্ষদর্শী কমর বক্স বলেন, “দূর থেকে দেখলাম, এক অটোচালক
এক মহিলার মাথায় রড দিয়ে মারল। কাছে গিয়ে দেখি, মহিলার মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে!”
বেসরকারি সংস্থার মার্কেটিং বিভাগের কর্মী মৌসুমি থাকেন ডানলপে। বাড়িতে দুই বোন, এক ভাই, মা ও প্রাক্তন পুলিশকর্মী বাবা। তিনি বললেন, “কেনাকাটা করতে মলে যাচ্ছিলাম। সব ওলোটপালট হয়ে গেল!” আপনি কী চান? তরুণীর জবাব, “অটোচালকেরা যাতে যাত্রীদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করেন, সরকার তা দেখুক।” অভিযুক্ত অটোচালকের কোনও অনুশোচনা নেই। তিনি আদৌ মনেও করেন না যে, ভুল কিছু করেছেন।

—নিজস্ব চিত্র।
পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.