দমদম এলাকায় গিয়ে রবিবারই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলে এসেছিলেন, মাতব্বরি-গুণ্ডামিতে অভিযুক্তদের কোনও জায়গা তাঁদের দলে হবে না। ঘটনাচক্রে, তার পর দিনই ওই এলাকার সিপিএমের এক সময়ের দাপুটে নেতা দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। যে জোড়া খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পেয়ে জেল খাটছেন দুলালবাবু, সেই একই মামলায় মাত্র দিনদশেক আগে তাঁর দুই সহযোগীর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত।
কাশীপুর থানার অধীন দমদম রোডের দুই যুবক চন্দন চক্রবর্তী (বাপি) ও সঞ্জয় গোস্বামীকে ২০০২ সালের ৪ মার্চ পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগে দুলালবাবু এবং তাঁর দুই শাগরেদ কৃষ্ণেন্দু ঘোষ ও সুশান্ত খাঁড়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আলিপুর আদালত। রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে তিন জনেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু গত ১২ বছরে সেই আপিল মামলার কোনও শুনানি হয়নি। এই অবস্থায় কৃষ্ণেন্দু ও সুশান্ত আদালতে জামিনের আবেদন করলে গত ১০ জানুয়ারি তা মঞ্জুর করেন বিচারপতি তপেন সেন। এই ঘটনার পরেই উৎসাহিত হয়ে প্রধান অভিযুক্ত দুলাল সোমবার হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান। বিচারপতি দু’পক্ষের সওয়াল শুনে তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
দমদম-কাণ্ডে জামিনের আবেদনের শুনানি শুরু হওয়ার পরে সিপিএমের অন্দরেও অবশ্য আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। ওই এলাকায় এখন তৃণমূলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে সরব বামেরা। এই অবস্থায় দুলাল বা তার শাগরেদেরা জামিনে ছাড়া পেলে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কায় ভুগছিলেন স্থানীয় সিপিএম নেতাদের একাংশই। তাঁদের ওই আশঙ্কার কথা আলিমুদ্দিনেও পৌঁছয়। সক্রিয় হন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দুলালদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে এক যুগ আগে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। দুলাল-সঙ্গী দু’জনের জামিনের মামলায় আইনজীবী ছিলেন সিপিএমেরই নেতা এবং প্রাক্তন আইনমন্ত্রী নিশীথ অধিকারী। এই ঘটনাকে মোটেই ভাল ভাবে নেননি বুদ্ধবাবুরা। এর পরে দুলালের জামিনের আবেদনের জন্য নিশীথবাবু আর লড়তে যাননি। ছিলেন অন্য আইনজীবী।
দুলালের আইনজীবী বলেন, ১২ বছর এঁরা আবেদন করেও বিচারের অভাবে কারাবাস করছেন। ইদানীং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ১০-১২ বছর বা তার বেশি সময় কারাদণ্ড ভোগ করার পরে হাইকোর্টে অভিযুক্ত নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার পাল্টা বলেন, দুলালের জামিনের আবেদন সুপ্রিম কোর্টও নাকচ করে দিয়েছে। তিনি জানান, এই মামলায় যে দু’জন হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন, তাঁদের জামিন খারিজ করার জন্যও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবে রাজ্য সরকার। তাঁর আরও বক্তব্য, ওই ঘটনায় নিহত দু’জনের স্ত্রী সন্ধ্যা ঘোষ ও নলিনী খাঁড়া জামিনের বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, দুলাল ছাড়া পেলে তাঁদের প্রাণ সংশয় হতে
পারে। দু’পক্ষের এই বক্তব্য শুনে বিচারপতি সেন বলেন, জামিনের আবেদন সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। এ ছাড়াও, তাঁদের বিরুদ্ধে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, তা তিনি দেখেছেন এবং সেখানে অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর করা যায় না।
আপাতত হাইকোর্টের সিদ্ধান্তে স্বস্তি সিপিএমেও। দলের কলকাতা জেলার এক নেতার কথায়, “যা হয়েছে, ভালই হয়েছে! মামলার ঘটনাকে জড়িয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ওই এলাকায় শাসক দল মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছিল।” |