ফের চুরি বিধাননগরে। এ বার এক প্রাক্তন সেনা অফিসারের বাড়িতে। তিন মাসের ব্যবধানে ওই এলাকায় এই নিয়ে দু-দু’বার চুরির ঘটনা ঘটল।
রবিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে।
পরপর চুরির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। বিশেষত এ দিনই বিধাননগর কমিশনারেটের দু’বছর পূর্ণ হল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগের থেকে পুলিশি পরিকাঠামো বেড়েছে, তৎপরতাও। কিন্তু তা সত্ত্বেও চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা যেমন থামানো যাচ্ছে না, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে সে সব ঘটনার কিনারাও করতে পারেনি পুলিশ। এই কারণেই ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দারাই উদ্যোগী হয়ে সিসিটিভি বসিয়েছেন।
যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ কমিশনারেটের পুলিশকর্তারা। তাঁদের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে কিনারা হয়নি মানেই পুলিশ নিষ্ক্রিয় নয়। কমিশনারেটের ৯টি থানা এলাকায় অনেক অপরাধের কিনারাই হয়েছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক ঘটনায় সফল হচ্ছে পুলিশ। তবে আরও নির্দিষ্ট করে তথ্য সংগ্রহ, নজরদারিতে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে মত তাঁদের। |
পুলিশ জানায়, রবিবার বিকেলে ডিএ ব্লকে এক প্রাক্তন সেনাকর্মীর বাড়িতে চুরি হয়েছে। একটি ল্যাপটপ ও দু’টি মোবাইল খোয়া গিয়েছে বলে খবর। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ঘটনার সময়ে ওই সেনাকর্মী তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখেন মূল ফটকটি খোলা, ঘর তছনছ। ওই রাতেই তাঁরা বিধাননগর উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
কিছু দিন আগেই কমিশনারেট ও দক্ষিণ থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে প্রাক্তন এক আমলার বাড়িতে চুরি হয়েছিল। যার কিনারা এখনও হয়নি। পাশাপাশি, দু’বছর আগে বিধাননগর এডি ব্লকের ডাকাতি থেকে গত বছর পুজোর সময়ে বিসি ব্লকে এক সাংবাদিকের বাড়িতে চুরি হয়। দুষ্কৃতীরা তাঁকে ও তাঁর মেয়েকে বেদম প্রহার করে চম্পট দেয়। তালিকায় সল্টলেকের বাইরে বাগুইআটিতে জোড়া খুনের ঘটনাও রয়েছে। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর রিভলভার চুরির ঘটনাতেও সাফল্য পায়নি পুলিশ।
যদিও সাফল্যের তালিকাও নেহাত কম দীর্ঘ নয় বিধাননগর পুলিশের। তিনটি ক্ষেত্রে অপরাধীদের দ্রুত সাজা দেওয়ার ঘটনাকে নিজেদের সাফল্য বলেই দাবি করেছেন পুলিশকর্তারা। সম্প্রতি বাগুইআটিতে এক বৃদ্ধকে খুনের ঘটনার দু’মাসের মধ্যেই তদন্তের কিনারা করা হয়েছে। এ ছাড়াও, বিধাননগরে প্রায় ১৪টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শৌভিক লাহা গ্রেফতার, দমদমে হরিজন কলোনিতে খুনের ঘটনায় কুখ্যাত দুষ্কৃতী রাজেশ নায়েকের গ্রেফতারের মতো একাধিক সাফল্যের দাবি অবশ্য করতেই পারে পুলিশ।
পাশাপাশি, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও সাফল্য এসেছে। বিশেষত বাগুইআটি মোড়-সহ একাধিক জনবহুল মোড়ে যানজটের সমস্যা আগের থেকে কমেছে বলেই মত বাসিন্দাদের। তবে বাসিন্দাদের দাবি, যে ভাবে অপরাধ বাড়ছে, একা পুলিশের পক্ষে তা মোকাবিলা করা মুশকিল। তাই মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়িয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জোর দিক প্রশাসন। ইতিমধ্যে বিধাননগর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে তাঁদের এলাকায় বিভিন্ন প্রবেশ পথে সিসিটিভি বসিয়েছেন। আজ, মঙ্গলবার সেই প্রকল্পের উদ্বোধন। স্থানীয় কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় জানান, ওয়ার্ড কমিটির এই কাজে অনুমোদন দিয়েছে পুলিশ।
এ দিকে, বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান অর্ণব ঘোষের দাবি, যে সব ঘটনার কিনারা হয়নি, সে বিষয়ে তাঁরা ওয়াকিবহাল। পাশাপাশি, অনেক ক্ষেত্রেই দ্রুত অপরাধের কিনারা হয়েছে। তবে আগামী দিনে আরও উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও ভাবা হচ্ছে। |