কলকাতায় কেউ তার গুণের কদর করছে না। তাই স্বপ্নপূরণ করতে নিজেই গল্প ফেঁদে পাড়ি দিয়েছিল মুম্বই। কিন্তু দু’দিনের মাথাতেই রায়পুর থেকে বাড়ি ফিরে এল বালিগঞ্জের নিখোঁজ কিশোর সুরজিৎ মণ্ডল।
শনিবার বিকেলে কোচিং ক্লাস থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় সুরজিৎ। কিছুক্ষণ পরে বাড়িতে ফোন করে সে জানায়, নাককাটা গলিতে কয়েক জন তাকে মারধর করছে। এর পর থেকে তার আর কোনও খোঁজ মেলেনি। অবশ্য সোমবার বাড়ি ফিরে আসার পরে ওই কিশোরকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, মারধরের গল্প ফেঁদে মুম্বই পালিয়েছিল সে। পুলিশের দাবি জেরায় সে জানিয়েছে, মুম্বই যাওয়ার জন্য আগেই সে ট্রেনের টিকিট কেটেছিল। সেইমতো শনিবার রাতে হাওড়া থেকে ট্রেনে চাপে।
কিন্তু মুম্বই যাওয়ার পরিকল্পনা কেন করেছিল সুরজিৎ? |
বালিগঞ্জের একটি ক্লাবে গোলকিপার হিসেবে খেলত সুরজিৎ। তার দাবি, ভাল কিপার হওয়া সত্ত্বেও কলকাতার কোনও বড় ক্লাব তাকে সুযোগ দিচ্ছে না। তাই মুম্বইয়ের একটি ক্লাবে খেলার সুযোগ পাওয়ার জন্যই সে পালানোর পরিকল্পনা করে। সুরজিতের বন্ধুরা অবশ্য তার এই ইচ্ছের কথা আগেই জানিয়েছিল পুলিশকে। শনিবার কোচিং ক্লাস থেকে বেরিয়ে পিছনে নাককাটা গলিতে গিয়ে সে ব্লেড দিয়ে নিজের বাঁহাত কাটে, জামা ছেঁড়ে এবং দেওয়ালে রক্ত মোছে বলে জানান তদন্তকারীরা। এত কাণ্ড ঘটিয়ে সে বাড়িতে ফোন করে তাকে মারধরের কথা জানায় বলে জেরায় স্বীকার করেছে সুরজিৎ। এ দিকে, ফোন পেয়ে বাড়ির লোকেরা নাককাটা গলিতে গেলেও সুরজিৎকে পাননি। রাত পর্যন্ত তার খোঁজ না পেয়ে শেষে তাঁরা পুলিশে খবর দেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ অফিসারেরা দেখেন, বাড়িতে ফোন করার সময়ে সুরজিৎ নাককাটা গলির কথা বললেও তার মোবাইলের লোকেশন ছিল ভবানীপুর। সন্দেহ হয় পুলিশের। এর পরে অবশ্য সুরজিতের ফোন ‘সুইচ্ড অফ’ হয়ে যায়। পুলিশের এক অফিসার জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ওর মোবাইল মাঝেমধ্যে খুলছিল। তখন ভিন্রাজ্যের বিভিন্ন লোকেশন দেখাচ্ছিল। তার গতিবিধির উপরে নজর রেখে রহস্যভেদের চেষ্টা চালাচ্ছিল পুলিশ। পরে অবশ্য তার প্রয়োজন হয়নি। সোমবার নিজেই ফিরে আসে সুরজিৎ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ট্রেনে এক মুসলিম ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাঁকেও সে মুম্বইয়ের বড় দলে খেলার ইচ্ছে জানায়। তখন ওই ব্যবসায়ী তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রায়পুরে নিজের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানকার খাবার পছন্দ না হওয়ায় সুরজিৎ ওই ব্যবসায়ীকে বলে, সে বাড়ি যেতে চায়। এর পরে ওই ব্যবসায়ী তাকে কলকাতায় ফিরে আসার জন্য আটশো টাকা দেন। তা নিয়ে সে কলকাতা ফিরে এসেছে।
সোমবার সকালে সুরজিৎকে প্রথম দেখতে পান তারই ফুটবল প্রশিক্ষক নারায়ণ জানা। তিনি সুরজিৎকে নিয়ে সোজা চলে যান বালিগঞ্জ থানায়। তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, নারায়ণবাবু এবং তাঁর ছেলে ভরতবাবু সোমবার সকালে সুরজিৎকে থানায় নিয়ে আসেন।
এ দিন পেয়ারাবাগান এলাকায় গিয়ে দেখা যায় একটি ঘিঞ্জি গলিতে ছোট্ট ঘরে বাবা, মা, বৌকে নিয়ে থাকে সুরজিৎ। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দশম শ্রেণিতে পড়লেও বছর দেড়েক আগে পাড়ারই একটি মেয়েকে বিয়ে করে সুরজিৎ। তার বাবা নিরঞ্জন এবং মা কল্পনা মণ্ডল বলেন, “ছেলে ফিরে এসেছে এটাই বড় পাওনা। এখন আর কেউ ওকে কিছু না করে সেটা দেখার জন্য প্রশাসনের সাহায্য চাই।” এ দিকে, তদন্তকারী জানান, এখনও আঠোরো বছর হয়নি সুরজিতের। তাই জুভেনাইল আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। |