|
|
|
|
ইস্টবেঙ্গল: হেরেও থাকছে ক্ষীণ আশা |
হেরেও থাকছে ক্ষীণ আশা
রতন চক্রবর্তী • মঞ্জেরি
স্পোর্টিং ক্লুব: ২ (ভিক্টোরিয়ানো,বিভান)
ইস্টবেঙ্গল: ১ (সুয়োকা পেনাল্টি) |
ড্রেসিংরুমে ঢোকার মুখে জলের বোতল মাটিতে আছড়ে ফেলে চিৎকার করে উঠলেন উগা ওপারা। “মোগা কিল আস, মোগা কিল ইস্টবেঙ্গল টু ডে।”
সামান্য পিছনে হাঁটতে থাকা চিডি সম্মতিসূচক মাথা নাড়তে নাড়তে যোগ করলেন, “মোগা গোলগুলো করলে আমরা হারতাম না। রাবিশ।”
ফেড কাপ থেকে কার্যত ছিটকে যাওয়ার জন্য অভিযোগের আঙুল যাঁর দিকে সেই মোগা ফিরলেন সবার শেষে। লম্বা পেটানো চেহারাটা নুইয়ে গিয়েছে যেন। চোখ দু’টো লাল। ড্রেসিংরুমে ফিরে কেঁদেই ফেললেন।
কলকাতা নয় বলেই আর্মান্দোদের নিয়ে টিমবাস বেরিয়ে গেল নিশ্চিন্তে। ডার্বি হারের পর ফেড কাপেও ব্যর্থ। তা-ও আবার বহু দিন পর গ্রুপ লিগ থেকে। যুবভারতীর বদলে ভাগ্যিস কেরলের মঞ্জেরি স্টেডিয়ামে লজ্জাজনক ঘটনাটা ঘটেছে। না হলে এত নিশ্চিন্তে কি শনিবার বেরিয়ে যেতে পারতেন অর্ণব-ডিকারা।
কার্যত বিদায় কথাটা লিখতে হচ্ছে কারণ, এ দিনই গ্রুপের পরের ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি জিততে না পারায়। রাংদাজিদের সঙ্গে সুনীল ছেত্রীরা ১-১ করলেন। ফলে দু’ম্যাচে এক পয়েন্ট নিয়েও সেমিফাইনালে যাওয়ার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ইস্টবেঙ্গলের। তবে সেটা শুধু চিডিদের দলের হাতে নেই। যা অবস্থা, ‘গ্রুপ অব ডেথ’ থেকে এখনও চারটে দলের যে কেউ যেতে পারে শেষ চারে। মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল-বেঙ্গালুরু এবং স্পোর্টিং ক্লুব-রাংদাজিদ ম্যাচের পর জানা যাবে কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল। সেখানে অবশ্য প্রচুর অঙ্ক। দু’ম্যাচ করে খেলার পর চার দলের পয়েন্ট- বেঙ্গালুরু ৪, স্পোর্টিং ক্লুব ৩, রাংদাজিদ ২, ইস্টবেঙ্গল ১। গোলপার্থক্য বড় ফ্যাক্টর হতে পারে শেষ পর্যন্ত। তবে যে অঙ্কই কষা হোক, বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলকে জিততেই হবে। কিন্তু বেঙ্গালুরুর চেয়ে কম শক্তিধর দু’টো দলের বিরুদ্ধেই তো মুখ থুবড়ে পড়লেন খাবরা-সৌমিকরা। |
|
আর্মান্দোও আর আশা দেখছেন না। শনিবারের হারের পর ধরেই নিচ্ছেন, আর হল না। “টিমের খেলায় আমি খুশি। ছেলেরা জেতার চেষ্টা করেছে। মনে হচ্ছে আমার উপর থেকে জুনিয়র-অভিশাপ এখনও নামেনি। আমার ব্যাডলাকের জন্যই হয়তো ইস্টবেঙ্গলকে বিদায় নিতে হল। না হলে ফেড কাপে কেন আমি বারবার ব্যর্থ হই,” বলার সময় ঈশ্বরভক্ত গোয়ান কোচের গলায় হতাশা।
কান্না, হতাশা, দোষারোপ, গালাগালি এ সব তো কোনও ব্যর্থ দলের ড্রেসিংরুমে চলবেই। এ দিনও চলল। পাশাপাশি প্রশ্নও উঠল, যে ম্যাচটা জিততে না পারলে টুর্নামেন্ট টিঁকে থাকা কঠিন, সেখানে দল নিয়ে এত পরীক্ষানিরীক্ষা কেন? কেন লং বল স্ট্র্যাটেজিতেই পড়ে থাকল লাল-হলুদ? কেন নেই ‘প্ল্যান-বি’? কেন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ এত খারাপ খেলছে?
রাজু গায়কোয়াড় রাইট ব্যাকে! লালরিন্দিকা সেন্ট্রাল মিডিও! খাবরা, লোবোদের পজিশন বলে কিছু নেই। চিডি-মোগাদের সঙ্গে সুয়োকাকে মাঝেমধ্যে জুড়ে দিয়ে আক্রমণে ঝাঁঝ আনার চেষ্টা (যাতে অফসাইড হচ্ছিল বারবার)---গোয়ান কোচের এত পরীক্ষা করতে যাওয়াটা ভুল। মাটিতে বল রেখে উইং দিয়ে আক্রমণ করতেই তো ভুলে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল! এক সঙ্গে চার-পাঁচ-ছটা পাস আর পরিকল্পিত আক্রমণতা-ও তো উধাও। টিমটা জিতবে কি করে?
স্পোর্টিংয়ের স্পেনীয় কোচ অস্কার ব্রুজো বুদ্ধি করে স্ট্র্যাটেজি করেছিলেন। জানতেন পজিশন অনুযায়ী ওয়ান-টু-ওয়ান ধরলে কলকাতার টিমের তুলনায় স্পোর্টিংয়ের শক্তি কম। সে জন্য মাঠকে ছোট করে ফেললেন তাঁর ফুটবলারদের দিয়ে। যাতে পায়ের জঙ্গল এবং অফসাইড ট্রাপে বারবার আটকে পড়ে ইস্টবেঙ্গল। ব্রুজো সফল। এটা ভাঙার জন্য প্রয়োজন ছিল মাঠ বড় করে উইং দিয়ে আক্রমণ। সেটা আর্মান্দোর টিম করল কোথায়?
তবু ম্যাচ বক্স-টু-বক্স হল। প্রচুর সুযোগ পেল দু’দলই। স্পোর্টিংয়ের বৈমা, বিভান যেমন হ্যাটট্রিক করতে পারতেন, তেমনই মোগা একাই করতে পারতেন তিন গোল। তাঁর দুটো শট পোস্টে লাগল। চিডি-সুয়োকাও গোল পেতেন। নোটবই বলছে, সহজ সুযোগগুলো থেকে গোল হলে স্কোরলাইন হতে পারত টেনিসের সেটের মতো। স্পোর্টিংয়ের পক্ষে ৭-৫। ম্যাচটা ইস্টবেঙ্গল হারল মাঝমাঠ খুইয়ে। লাইবেরিয়ান বৈমাকে সামনে রেখে দু’পাস দিয়ে দুই উইংকে হঠাৎ-হঠাৎ কাট করিয়ে উগা-অর্ণবদের বেসামাল করে দিলেন স্পোর্টিং কোচ। মাঝমাঠে সুয়োকার পিছনে লাগালেন কালুকে। ফসল শুরুতেই পেল গোয়ার ক্লাব। ভিক্টোরিয়ানো হেডে গোল করে গেলেন ফাঁকায়। বিভানের ক্রস যখন তাঁর কাছে এল, আশেপাশে লাল-হলুদের কেউ নেই। ইস্টবেঙ্গল ১-১ করল পেনাল্টি থেকে। চিডিকে বক্সে পা টেনে ফেলেন স্পের্টিং কিপার রবি কুমার। চিডি আর ঝুঁকি নেননি। সুয়োকা পেনাল্টি মারলেন। কিন্ত তার পরেও খেলাটা মুঠোয় পুরতে পারল না ইস্টবেঙ্গল। শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচ আগে ২-১ করে জেতালেন স্পোটির্ংয়ের বিভান। গোয়ার এই ভূমিপুত্রই এ দিনের ম্যাচের সেরা। তবে তাঁর গোলটার জন্য ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার গুরপ্রীত দায়ী। গোলটা খেলেন প্রথম পোস্টে দাঁড়িয়ে। হাতের পাশ দিয়ে।
ফেড কাপে ইস্টবেঙ্গল সুতোর উপর ঝুললেও এখনই টিমের বিশ্রাম চাইছেন আর্মান্দো। বলে দিলেন, “কলকাতায় ফিরে কর্তাদের অনুরোধ করব আইএফএ শিল্ড না খেলতে।” ডেম্পোকে অসাধারণ সাফল্য দেওয়া আর্মান্দো বুঝে গিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে মর্গ্যান-জমানার তুলনা ইস্টবেঙ্গলে শুরু হল বলে। গত তিনটি ফেড কাপের দুটিতেই চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন মর্গ্যান। একটা রানার্স। ফেড কাপ হল না। মর্গ্যানের সঙ্গে তুলনা থামাতে তাই আই লিগ জেতা ভীষণ জরুরি। যা মর্গ্যান পাননি, বহু দিন পায়নি ইস্টবেঙ্গলও।
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, রাজু, অর্ণব, উগা, সৌমিক, খাবরা, ডিকা, লোবো (তুলুঙ্গা), সুয়োকা, চিডি, মোগা।
|
দুই প্রধানের শেষ চারের অঙ্ক |
মোহনবাগান
১) শেষ ম্যাচে সালগাওকরের সঙ্গে ড্র করলেই হবে।
২) সালগাওকরের কাছে হেরে গেলেও অন্য ম্যাচে মুম্বই এফসি-কে লাজং হারালে গোলপার্থক্যে শেষ চারে যাবেন ওডাফারাই।
৩) শেষ ম্যাচে মোহনবাগান হারলে আর লাজং জিততে না পারলে বিদায় নেবে বাগান। |
ইস্টবেঙ্গল
১) শেষ ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-কে দু’গোলের ব্যবধানে হারাতে হবে।
২) রাংদাজিদ-স্পোর্টিং ম্যাচ ড্র হতে হবে। |
|
পুরনো খবর: জীবনের জন্য খেলব, বলছেন চিডিরা |
|
|
|
|
|