|
|
|
|
মোহনবাগান: জিতেও শেষ চার অনিশ্চিত |
তিন বিদেশির দাপটে গোলের সুনামি আছড়ে পড়ল পাহাড়ে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা
মোহনবাগান: ৬ (ওডাফা-২, ক্রিস্টোফার-২, কাতসুমি, উজ্জ্বল)
লাজং: ০ |
প্রথম গোলটা করেই আকাশের দিকে হাত তুলে দৌড় লাগালেন। চোখ দুটোও চিকচিক করছিল ওডাফার। ব্যাকভলিতে নিজের দ্বিতীয় গোল করার আর উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারলেন না। মোহনবাগানের স্কোরলাইন তখন ৫-০। টগবগ করে ফুটছেন কাতসুমি, ডেনসনরা। ম্যাচের পর ওডাফা কোচি থেকে ফোনে বলছিলেন, “প্রথম গোলটা করে স্বস্তি এসেছিল। দ্বিতীয় গোলটা তৃপ্তি দিয়েছে।”
যে ক্রিস্টোফারের নামের পাশে খেপ খেলার ট্যাগ-লাইন এখনও ঝোলানো, সেই নাইজিরীয় স্ট্রাইকার কিন্তু ফেড কাপের দু’ম্যাচে তিন গোল করে ফেললেন। লাজং এফসি-র বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে এই মুহূর্তে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। মোহন-ফরোয়ার্ড ফোনে বললেন, “প্রথম ফেড কাপ খেলছি। দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারলে তবেই সেলিব্রেট করব।”
ডার্বিতে গোল করার পর থেকেই দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন কাতসুমি। ফেড কাপে বাগানের গ্রুপ লিগের দু’টি ম্যাচেই জয়ের প্রধান কারিগর তিনিই। |
|
|
|
শৃঙ্গ জয়ে করিমের তিন তাস। ওডাফা-কাতসুমি-ক্রিস্টোফার |
|
এই তিন যোদ্ধাকে নিয়েই শনিবার ত্রিমুখী আক্রমণ সাজিয়েছিলেন করিম। বাগানের তিন বিদেশির দাপটেই সুনামি আছড়ে পড়ল পাহাড়ে। চুরমার হয়ে গেলেন আগের ম্যাচেই সালগাওকরকে চার গোলে হারানো সৈনিকরা।
চলতি মরসুমে এটাই বাগানের সবচেয়ে বড় জয়। শুধু তাই নয়, জাতীয় স্তরের টুর্নামেন্টে এত বড় ব্যবধানে সবুজ-মেরুনের জয়ের নজির হাতেগোনা। হাফডজন গোলে তারা শেষ জিতেছিল ২০১১-১২ আই লিগে। লাজংকেই যুবভারতীতে ৬-১ হারিয়ে। করিম অবশ্য এই জয় নিয়েও উচ্ছ্বসিত নন। এ দিনই মুম্বই এফসি-র বিরুদ্ধে সালগাওকর জেতায় মোহনবাগানের সেমিফাইনালে যাওয়া এখনও ঝুলে রইল। ডেরেক পেরেরার দলের সঙ্গে অবশ্য ড্র করলেই শেষ চারে যাবেন ওডাফারা। তবে মরক্কান কোচ সতর্ক। “ছ’গোল করে দলের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আরও তিনটে মাইলস্টোন এখনও পেরোতে হবে। প্রথমটা সালগাওকর। এখন আমার ফোকাস শুধুমাত্র পরের ম্যাচেই।” ফুটবলারদেরও সাবধান করে দিয়েছেন এই বলে, “এই জয় থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়াও। কিন্তু আত্মতুষ্ট হওয়া চলবে না।”
করিমের দু’টি চাল এ দিন বাজিমাত করল। এক) ওডাফা-ক্রিস্টোফার-কাতসুমি দিয়ে আক্রমণের ঝড় তোলা। যা সামলানোর ডিফেন্ডার এ দিন লাজংয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুই) ব্লকার হিসেবে খেলা ডেনসনকে দিয়ে আটকে দিলেন লাংজয়ের ব্রহ্মাস্ত্র কর্নেল গ্লেনকে। এমনকী একটা সময় হতাশ গ্লেনকে নিজের জার্সি ছিঁড়ে ফেলতেও দেখা যায়। কাতসুমি-ওডাফা-ক্রিস্টোফারদের দাপট দেখে উদ্বুদ্ধ বাগানের তরুণ ব্রিগেডও। সবুজ-মেরুন জার্সিতে প্রথম নামা উজ্জ্বল হাওলাদারও ইনজুরি টাইমে গোল করে ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখলেন।
মোহনবাগানের পারফরম্যান্সে খুশি হলেও ব্যাক ভলিতে ওস্তাদ শ্যাম থাপা ওডাফার এ দিনের দ্বিতীয় গোলটাকে ব্যাক ভলি মানতে নারাজ। “ভাল গোল করেছে ওডাফা। কিন্তু ওটাকে ঠিক ব্যাক ভলি বলা যায় না। অনেক সময় এ ভাবে ডিফেন্ডাররাও বল বার করে দেয়।”
সবমিলিয়ে অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো মোহনবাগান এখন শুধুই ছুটে চলেছে। লক্ষ্য একটাই। ফেড কাপ জয়।
মোহনবাগান: শিল্টন, প্রীতম, ইচে, আইবর, শৌভিক, পঙ্কজ (রাম), ডেনসন, জাকির (উজ্জ্বল), কাতসুমি, ক্রিস্টোফার (শঙ্কর), ওডাফা।
|
বাগানের হাফ ডজন
(ছয় বা তার বেশি গোল করে জাতীয় স্তরের টুর্নামেন্টে বাগানের জয়) |
ফেড কাপে
বনাম ডেম্পো ৬-৩ (১৯৭৭, এরনাকুলাম)
বনাম হ্যাল ৮-১ (১৯৭৮, কোয়েম্বাটোর)
বনাম আইসিএফ ৭-০ (১৯৮৫, বেঙ্গালুরু)
বনাম চার্চিল ৬-০ (১৯৯৭, গুয়াহাটি)
বনাম সালগাওকর ৬-১ (২০১০, কটক) |
আই লিগে
বনাম মহীন্দ্রা ৬-০ (যুবভারতী, ২০০০-’০১)
বনাম লাজং ৬-১ (২০১১-’১২, যুবভারতী) |
তথ্য: হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় |
|
পুরনো খবর: গতির অঙ্কেই পাহাড় জয় করতে চাইছে বাগান |
|
|
|
|
|