|
|
|
|
সুনন্দার শরীরে আঘাতের দাগ |
আকস্মিক-অস্বাভাবিক মৃত্যু, মত চিকিৎসকদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৮ জানুয়ারি |
তিনতলার কালো কাচের জানলার ও পাশেই কি ৩৪৫ নম্বর স্যুইট! চাণক্যপুরীর দ্য লীলা প্যালেস হোটেলের সামনে সকাল থেকে জমে থাকা কৌতূহলী ভিড় আর পথচলতি মানুষের মুখে প্রশ্ন এটাই। কারণ, ওই ৩৪৫ নম্বর স্যুইট থেকেই কাল রাতে উদ্ধার হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শশী তারুরের স্ত্রী সুনন্দা পুষ্করের মৃতদেহ।
দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েনের মধ্যেই এই মৃত্যু ঘিরে রহস্য আজ আরও বেড়েছে। ময়নাতদন্তের পরে এইমস হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সুনন্দার মৃত্যু ‘আকস্মিক এবং অস্বাভাবিক’। কেন এই অস্বাভাবিক মৃত্যু, তা স্পষ্ট নয়। আরও তদন্তের প্রয়োজন। তবে বিষক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়নি। এইমসের ফরেন্সিক সায়েন্স বিভাগের প্রধান সুধীর গুপ্ত বলেন, “টক্সিকোলজিক্যাল অ্যানালিসিস ও ভিসকো-প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টগুলি আসার পরে চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরি হবে। তার পরেই মৃত্যুর কারণ নিয়ে মত জানাব।” একটি সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, অবসাদ কাটানোর ওষুধ বেশি পরিমাণে খাওয়ার জন্য সুনন্দার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
কিন্তু সুনন্দার শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্নও মিলেছে। কী ধরনের আঘাত, তা নিয়ে চিকিৎসকেরা মুখ খুলতে চাননি। সুধীর গুপ্ত অবশ্য বলেন, “আঘাতের চিহ্ন থাকাটা বড় কথা নয়। দেখতে হবে, সেই আঘাতের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না।” কিন্তু পরিস্থিতি জটিল করেছে সুনন্দার পরিবারের একাংশের তরফে তোলা সিবিআই তদন্তের দাবি।
আইপিএল-বিতর্ক পিছনে ফেলে মন্ত্রিত্বে ফেরা শশী তারুরের রাজনৈতিক জীবনে স্ত্রীর মৃত্যু আবার বড়সড় ধাক্কা দেবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কংগ্রেস মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে তারুরকে আপাতত স্বস্তি দিয়ে এই বিপর্যয়ে দল তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছে। আজ সন্ধ্যায় তারুরের বাড়ি গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে আসেন খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। যান প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি, দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। এইমসেও গিয়েছিলেন কংগ্রেসের অনেক নেতা-মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ গত কাল রাতেই ফোনে তারুরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আজ চিঠি লিখেও সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। |
শেষ দেখা। এইমসে ময়নাতদন্তের পরে শশীর হাতে এল স্ত্রী সুনন্দার দেহ।
সঙ্গে সুনন্দার ছেলে শিব মেনন। ছবি: পিটিআই। |
তবে পাকিস্তানি সাংবাদিক মেহর তারারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক থেকে শুরু করে সুনন্দার অস্বাভাবিক মৃত্যু একের পর এক ঝড় যে শশী তারুরকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। বুকে ব্যথা নিয়ে গত কাল রাতেই এইমসে ভর্তি হন তিনি। আজ দুপুরে ছাড়া পাওয়ার পরে বিকেলে যোগ দেন সুনন্দার অন্ত্যেষ্টিতে। এই সুনন্দা পুষ্করকে ঘিরেই তারুরের আইপিএল বিতর্কে জড়িয়ে পড়া এবং বিদেশ প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো। ২০১০-এর এপ্রিলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে অগস্টে ৪৮ বছর বয়সি সুনন্দাকে বিয়ে করেছিলেন ৫৩ বছরের তারুর। দু’জনেরই সেটা ছিল তৃতীয় বিবাহ।
প্রায় চার বছরের বিবাহিত জীবনে মেঘ ঘনায় সম্প্রতি, মেহরকে কেন্দ্র করে। মনস্তত্ত্ববিদদের একাংশের মতে, একাধিক বিয়ে ভাঙা, শশী তারুরের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ট্যুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় কেচ্ছা এবং তার সঙ্গে আর্থিক অবস্থার ওঠা-পড়া সুনন্দার মনে অবসাদ ডেকে এনে থাকতে পারে। মেহরকে নিয়ে টানাপোড়েনের মাঝে ক’দিন আগে ট্যুইটারে শশী-সুনন্দা একযোগে জানিয়েছিলেন, তাঁরা ‘সুখী দম্পতি’ তবু সবটা ঠিক ছিল না বলেই জানাচ্ছেন অনেকে। বৃহস্পতিবার তিরুঅনন্তপুরম থেকে দিল্লি আসার পথে বিমানে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। এমনকী, হোটেলেও দু’জনের মধ্যে বচসা হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। প্রাথমিক তদন্তের সময়ে হোটেল কর্মীরাই পুলিশকে এ কথা জানিয়েছেন।
তারুরের সরকারি আবাসে মেরামতির কাজ চলছে। তাই তিরুঅনন্তপুরমে সুনন্দার চিকিৎসা সেরে দিল্লি ফিরে হোটেলে উঠেছিলেন তাঁরা। কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন সুনন্দা। ট্যুইটারে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে শশী তারুরকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন মেহর। পরে এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যক্ষায় ভুগছেন তিনি। তবে তিরুঅনন্তপুরমের যে কেরল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স হাসপাতালে ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারি ভর্তি ছিলেন সুনন্দা, সেখানকার চিকিৎসকেরা এমন কোনও কথা বলেননি। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক জি বিজয়রাঘবন জানান, সুনন্দাকে সাধারণ কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই ক’দিন তারুর সব সময় স্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাঁরা এক সঙ্গে শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরে ‘লক্ষদীপম’ উৎসবে যান। তার পরে ফেরেন দিল্লি। গত কাল সকাল আটটায় হোটেল থেকেই তালকাটোরা স্টেডিয়ামে এআইসিসি-র অধিবেশনে যোগ দিতে চলে যান তারুর। ফেরেন রাত আটটা নাগাদ। ফিরে দেখেন স্যুইটের শোওয়ার ঘরের দরজা বন্ধ। তারুরের ব্যক্তিগত সচিব অভিনব কুমার জানিয়েছেন, প্রথমে ভাবা হয়েছিল সুনন্দা ঘুমোচ্ছেন। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষণ ডাকাডাকির পরেও সাড়া না-মেলায় হোটেলের কর্মীদের সাহায্যে দরজা খোলা হয়।
গত কাল রাত থেকেই লীলা প্যালেস হোটেলের তিনতলা সিল করে দেওয়া হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি। শুক্রবার সারা দিনে কেউ সুনন্দার সঙ্গে দেখা করেছিলেন কিনা, তিনি কী কী খাবার অর্ডার করেছিলেন, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারেও। পাশাপাশি, সুনন্দার ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ট্যুইটারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ।
সুনন্দার মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে সম্ভবত সোমবার তারুরের বয়ান নথিভুক্ত করা হবে। যে হেতু তারুরদের বিয়ে হয়েছিল মাত্র তিন বছর আগে, তাই পণপ্রথা প্রতিরোধ আইনেও এই মৃত্যুর তদন্ত হচ্ছে।
|
পুরনো খবর: হোটেল থেকে উদ্ধার তারুর-পত্নীর দেহ |
|
|
|
|
|