হিন্দুত্বকে দূরে রেখেই মোদী বার করলেন সুশাসনের তাস

১৮ জানুয়ারি
ক্ষমতায় এলে কী হবে তাঁর সুশাসনের রূপরেখা হিন্দুত্ব, রাম মন্দিরকে শিকেয় তুলে নরেন্দ্র মোদী আজ সেই ছবিটাই তুলে ধরলেন দলের কর্মসমিতির বৈঠকে।
লোকসভা ভোটের আগে এটাই দলের শেষ কর্মসমিতির বৈঠক। আগামিকাল তার শেষ দিনে বলার জন্য নিজের আগামী কর্মসূচির যে রূপরেখাটি মোদী তৈরি করেছেন, তাতে ফের স্পষ্ট, ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ থেকে সুশাসনের ‘পোস্টার বয়’ হয়ে উঠতে চাইছেন তিনি। যে কারণে মোদীর মুখে আর হিন্দুত্ব নেই। তাঁর ভবিষ্যতের মানচিত্রে শুধুই সুশাসনের প্রসঙ্গ। একই ভাবে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহের মুখে ৩৭০ ধারার উল্লেখ থাকলেও রামমন্দির নিয়ে টুঁ শব্দটি নেই।
এত দিন কংগ্রেসের দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, নীতিপঙ্গুত্বের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার সময় প্রতিপক্ষ শিবির থেকে প্রশ্ন উঠে আসত, ক্ষমতায় এলে মোদী কী করবেন? এর জবাবে বিভিন্ন সভায় বিচ্ছিন্ন ভাবে কখনও-সখনও গুজরাত মডেলের কথা তুলে ধরতেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। কিন্তু আজ মোদী ছকে ফেললেন সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতির সম্ভার। কংগ্রেসের মুখ রাহুল গাঁধী কাল আশ্বাস বিলি করে জনপ্রিয়তার পথে হেঁটেছেন। মোদীও পিছিয়ে থাকতে নারাজ এই ক্ষেত্রে। আগামিকাল বৈঠকের শেষ দিনে এ ব্যাপারে বলার আগে আজ তৈরি করে ফেললেন রূপরেখাটি।
নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে মোদী। পিটিআইয়ের ছবি।
কী সেই প্রতিশ্রুতি?
এক, মোদী সব থেকে বেশি জোর দিচ্ছেন হতাশার পরিবেশ কাটানোয়। রাহুল যুবকদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। মোদীও সমাজের এই শ্রেণির হতাশা দূর করে গুরুত্ব দিতে চাইছেন উৎপাদন শিল্প, পর্যটন, রফতানি-আমদানি, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি ও স্বনির্ভর প্রকল্পে। এর মাধ্যমে যথাসম্ভব বেশি রোজগার তৈরি করাই তাঁর লক্ষ্য। আয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন মনমোহনও। মোদীর দাবি, মনমোহন ব্যর্থ হলেও ক্ষমতায় এলে তিনি এই কাজ করে দেখাবেন। শিল্প উৎপাদনকে জিডিপি অর্থাৎ মোট দেশীয় উৎপাদনের কুড়ি শতাংশের উপরে নিয়ে যাওয়া তাঁর লক্ষ্য।
দুই, পরিকাঠামোয় দ্বিগুণ বিনিয়োগ করে দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চান মোদী। বন্ড বাজারকেও জোরদার করা হবে। চালু খাতায় লেনদেনের ঘাটতি ও আর্থিক ঘাটতি কমানোর চেষ্টা হবে অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করতে। তার জন্য অবাঞ্ছিত আমদানি বন্ধ করে বরং রফতানির উপরেই বেশি জোর দিতে চাইছেন মোদী। দেশের সস্তা শ্রমকে কাজে লাগিয়ে চিনের মডেল অনুসরণ করতে চান তিনি। মোদী-ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, বিদেশে বসবাসকারী চিনারাই দেশের লোকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চিনের উন্নতি ঘটাচ্ছেন। অথচ মনমোহন জমানায় আন্তর্জাতিক দুনিয়ার আস্থা কমেছে ভারতের উপরে। এই অবস্থায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এনে ও অনাবাসী ভারতীয়দের সাহায্য নিয়ে অর্থনীতির মোড় ঘোরানোই হবে মোদীর লক্ষ্য।
তিন, মধ্যবিত্তের উপর করের বোঝা কমাতে কর কাঠামোকে আরও সরলীকরণ করা হবে। যাতে সৎ করদাতাদের উপরে বোঝা কমে। বিদেশি ব্যাঙ্কে কালো টাকা উদ্ধার করা নিয়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী রথযাত্রা করেছিলেন। রামদেব, অণ্ণা হজারেও এই নিয়ে আন্দোলন করেছেন। মোদী সেই পথে হেঁটেই সেই অর্থ সামাজিক খাতে ব্যয় করতে চান।
চার, কৃষক-স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেই কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যেমন জোর দেওয়া হবে, তেমনই কৃষি ক্ষেত্রের উপরে অর্থনীতির বাড়তি নির্ভরতাও কমাতে চান মোদী। তাঁর প্রতিশ্রুতি, প্রতিটি কৃষক পরিবারের এক জনকে বিকল্প রোজগার দেওয়া হবে। পাশাপাশি যাঁর কাছে যত জমি আছে, সেই অনুপাতে বিমার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে ফি-বছর নিয়মিত রোজগারের ব্যবস্থা থাকে কৃষকদের। এর সঙ্গেই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতার অবস্থান বজায় রেখে ‘কৃষক-বাজার’ চালু করা হবে। যাতে কৃষকরা বেশি দাম পান ও ফড়েরা না থাকাও গ্রাহকরাও সস্তায় পণ্য পেতে পারেন।
পাঁচ, কাল রাহুল খাদ্য ও কাজের সঙ্গে স্বাস্থ্যের অধিকার সুনিশ্চিত করার কথা বলেন। গরিবদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে মোদীর প্রতিশ্রুতির তালিকায় থাকছে স্বাস্থ্যের অধিকার বিল আনার কথা। জোর থাকবে দারিদ্রসীমার নীচের মানুষদের রোজগার তৈরির উপরে। দশম শ্রেণির পর থেকেই ঝোঁক বুঝে কারিগরি শিক্ষায় পাঠানো হবে তরুণ-তরুণীদের।
ছয়, দশ বছরের মধ্যে খেলার জগতে ভারতকে সুপার পাওয়ার তৈরি করতে চান মোদী। তার জন্য আনা হবে নতুন ক্রীড়া নীতি। সর্বোপরি গোটা প্রশাসনকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ। প্রাকৃতিক সম্পদ বণ্টনে স্বচ্ছতা আনা।
এ ব্যাপারে মোদীর কৌশল রচনার অন্যতম রূপকার অরুণ জেটলির বক্তব্য, “অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহের জমানায় যাবতীয় নীতিপঙ্গুত্বের মূল উৎস চারটি। এক, নেতৃত্বের অভাব। দুই, দ্বৈত ক্ষমতাকেন্দ্র। তিন, নতুন ভাবনার অভাবে ভয়াবহ নীতি। আর চার, দুর্নীতি। যার ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি ও প্রশাসনের অবক্ষয় ঘটেছে। ক্ষমতায় এলে মোদী এই সব কিছুই দূর করে নতুন আশার সঞ্চারে সক্ষম হবেন।”

মোদীর সুশাসন-সূচি
• রোজগার বাড়াতে শিল্প উৎপাদন জিডিপির ২০%-এর উপরে তোলা।
• চিনা মডেলে দেশের সস্তা শ্রম ও অনাবাসীদের কাজে লাগানো।
• কর সরলীকরণ, বিদেশের কালো টাকা এনে সামাজিক খাতে ব্যয়
• কৃষিতে নির্ভরতা কমানো। কৃষক পরিবারে এক জনের বিকল্প আয়
• গরিবদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে স্বাস্থ্যের অধিকার আইন করা।
• দশ বছরের মধ্যে খেলায় ভারতকে সুপার পাওয়ার করা।
• প্রশাসন ও প্রাকৃতিক সম্পদ বণ্টনকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.