|
|
|
|
রাহুলের আড়ালে আপ-ও নিশানা
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৮ জানুয়ারি |
এক ঝলক দেখলে মনে হবে আম আদমি পার্টির সভা। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আদলে টুপি পরা সার সার মাথা।
আসলে কিন্তু এটা বিজেপির জাতীয় পরিষদের বৈঠক! আর অরবিন্দ-মার্কা টুপি পড়ে আছেন গোটা দেশ থেকে আসা হাজার দশেক বিজেপি নেতা-কর্মী! ফারাক শুধু দু’টো। ‘ম্যায় হু আম আদমি’র বদলে লেখা ‘মোদী ফর পিএম’। আর সাদার বদলে টুপির রং গেরুয়া।
লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ জাতীয় পরিষদের বৈঠকে টুপির এমন বহর দেখেই বোঝা যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল কতটা রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলেছেন বিজেপি শিবিরের। যে কারণে আপ-এর নাম না করেও বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ নিজের বক্তৃতায় বারবার বোঝালেন, শুধু মাত্র নরেন্দ্র মোদীকে রুখতে কংগ্রেস কী ভাবে নানা শক্তিকে ব্যবহার করছে। এখানেই শেষ নয়। সভায় আচমকাই গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীকে সম্বর্ধনা দিয়ে রাজনাথ সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হয়েও মনোহর পারিক্কর কত সাদামাটা জীবনযাপন করেন। অলক্ষ্যেই যেন উচ্চারিত হল কেজরিওয়ালের নামটা!
হাবেভাবে, অনুকরণে অনেক কথা বোঝালেও কপালে ভাঁজ ফেলে দেওয়া আম আদমি পার্টি বা কেজরিওয়ালের নাম কিন্তু উচ্চারণও করছেন না বিজেপি নেতারা। বরং কৌশলগত ভাবেই তাঁদের লক্ষ্য কংগ্রেস ও তার প্রধান মুখ রাহুল গাঁধী। যাতে রাহুলকে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা না করলেও লড়াইটা ‘মোদী বনাম রাহুলে’ই পর্যবসিত হয়। তাই আজ জাতীয় পরিষদের মঞ্চ থেকে রাহুলের দিকেই ছুটে এল বাছাই করা শব্দগুচ্ছ। অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহ মায় মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান, আক্রমণ শানালেন সকলেই। তাঁদের বক্তৃতার পরতে পরতে মেশানো রইল আপ-এর প্রতি কটাক্ষ।
গত কালই কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে রাহুল গাঁধী একাধারে মোদী ও কেজরিওয়ালকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করে বলেছিলেন, “বিপণনে ওঁরা খুবই দক্ষ। যাঁদের চুল নেই, তাঁদের কাছেও চিরুনি বেচছে ওরা! এখন তো কিছু লোক তাঁদের চুলের ছাঁটও বাতলে দিচ্ছে!” আজ এক মোক্ষম জবাবের প্রত্যাশা ছিল সভায় হাজির সকলেরই। সেই জবাব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে মোদীর কৌশল রচনার রূপকার অরুণ জেটলি বললেন, “কাল একজন এই বক্তব্য বলতে গিয়ে ভুলে গিয়েছেন, সেখানে আর একটি তৃতীয় দলও আছে। যাঁদের মাথায় চুল নেই, তাঁদের চুল ছাঁটার সময়ও যারা কমিশন নেয়! তাদের দুর্নীতির জন্যই আজ গোটা দেশকে খেসারত দিতে হচ্ছে।”
বিজেপির কৌশল এখন মূলত পাঁচটি। এক, নাম মুখে না আনলেও তৃণমূল স্তরে আম আদমি পার্টির মতোই জনসংযোগ বাড়িয়ে জনভিত্তি বাড়ানো। দুই, প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী না হলেও রাহুল এবং তার সঙ্গে গাঁধী পরিবারকে নিশানা করে মোদীকেই এক মাত্র বিকল্প হিসেবে তুলে ধরা। যাতে পুরো লড়াইটা আগের মতোই ‘মোদী বনাম রাহুল’-এ আটকে থাকে। এতে অপ্রাসঙ্গিক করা যাবে আপ-কেও। তিন, মনমোহন সিংহ যতই যাবতীয় ব্যর্থতার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে রাহুলের জন্য নিরাপদ জমি তৈরির চেষ্টা করুন, তা ভেস্তে দেওয়া। মনমোহন-সরকারের দুর্নীতির দায় রাহুলের ঘাড়েও চাপানো। আজও আদর্শ কেলেঙ্কারিতে অশোক চহ্বাণের প্রসঙ্গ টেনে রাহুলকেই নিশানা করেছেন রাজনাথ। চার, কংগ্রেস যতই মোদীর সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতাকে জুড়ে দিক, সুশাসন ও স্থায়িত্বের অস্ত্রেই তার মোকাবিলা করা। আর পাঁচ, দলের নেতাদের দ্বন্দ্বকে ধামাচাপা দিয়ে যে কোনও মূল্যে ঐক্য ধরে রাখা।
সঙ্ঘের নির্দেশে তাই শিবরাজ সিংহ চৌহানও আজ মোদীর হয়েই গলা ফাটালেন। তাঁর কথায় “কংগ্রেসে না কি প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণার পরম্পরা নেই! আসলে গাঁধী পরিবারের সাহস নেই মোদীর সামনে দাঁড়ানোর। তাই হারের আঁচ যাতে পরিবারের উপরে না আসে, তাই ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল।” গত কাল মোদীর জন্য একটি চায়ের দোকানের ব্যবস্থা করার কথা বলে বিজেপিকে কার্যত লোপ্পা বল উপহার দিয়েছিলেন মণিশঙ্কর আইয়ার। আজ সেই বল লুফে নিয়ে রাজনাথ বলেন, “গাঁধী পরিবারের সামন্ততান্ত্রিক মনোভাবের প্রমাণ এটাই। ওই পরিবার থেকেই কংগ্রেসের সভাপতি হন, ওঁরাই প্রধানমন্ত্রী হন। অথচ বিজেপিতে চা বিক্রি করেও প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়, জমিতে চাষ করেও সভাপতি হওয়া যায়।” কংগ্রেসের সংখ্যালঘু-নীতিকে আক্রমণ করে তাদের সবথেকে বেশি সাম্প্রদায়িক দলও বলেন রাজনাথ। অন্য দিকে দারিদ্র দূরীকরণ নিয়ে রাহুলের প্রতিশ্রুতিকে কটাক্ষ করে জেটলি বলেন, “তালকাটোরা স্টেডিয়ামে বসে কংগ্রেসের নীতিতে দারিদ্র ঘুচবে না। কোনও সম্প্রদায়ের নিরিখে বিভাজন নয়, গরিবের হাতে যখন অধিকার আসবে, তখনই দেশের মঙ্গল হবে।” |
|
|
|
|
|