বুঝছি সরকার চালানো কত শক্ত, কবুল অরবিন্দের

১৮ জানুয়ারি
দেশীয় রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে আম আদমি পার্টি (আপ) সরকারকে ঘিরে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ল আন্তর্জাতিক স্তরে। আপ সমর্থকদের হাতে আফ্রিকান মহিলাদের হেনস্থা হওয়ার অভিযোগ নিয়ে আফ্রিকার কূটনীতিকদের একটি দল আজ সরকারি ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে।
অস্বস্তিতে পড়ে এই ঘটনার নিন্দা করেছে বিদেশ মন্ত্রকও। বিভিন্ন মহল থেকে চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও জানিয়েছেন, “উগান্ডা-নাইজেরিয়া, কোনও দেশের নাগরিকদের প্রতি আমাদের ক্ষোভ নেই। তাঁরা সকলেই আমাদের দেশের অতিথি।” যদিও বিতর্ক তাতে থামছে না। কারণ, এক দিকে কেজরিওয়াল আজ স্বীকার করেছেন, “ক্ষমতায় আসার পর বুঝছি, সরকার চালানো কতটা বড় চ্যালেঞ্জ।” আবার তারই সঙ্গে তিনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়া আইনমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের দফতরের সামনে ধর্নার বসার হুমকি দিয়েছেন এ দিনও।
বস্তুত, দিল্লিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আপ নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে বিতর্ক বাড়ছে। রাজনীতির অনেকেই মনে করছেন, দিল্লিতে স্বচ্ছ প্রশাসন ও ভিন্ন ধারার রাজনীতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও আপ নেতৃত্ব ক্রমশ সেই দাবি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। আর পাঁচটা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের মতোই একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে ক্রমেই ভাবমূর্তি খোয়াচ্ছে দল। বিদেশি মহিলাদের হেনস্থার অভিযোগ নতুন মাত্রা যোগ করল বিতর্কে। অস্বস্তি বাড়ল মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের।
বিতর্কের সূত্রপাত দিন দুই আগে। উগান্ডা ও নাইজেরিয়ার জনা চারেক মহিলা মাদক ও যৌন ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলে দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতী দলের কিছু কর্মীকে নিয়ে মালব্যনগর থানার খিড়কি এলাকায় চড়াও হন। অভিযোগ, তাঁরা বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করা শুধু নয়, ওই মহিলাদের শারীরিক ভাবেও হেনস্থা করেছেন। কেন মন্ত্রীর দাবি মেনে দিল্লি পুলিশ ওই বিদেশিনিদের বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে না বাতাঁদের গ্রেফতার করছে না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী সোমনাথ। জড়িয়ে পড়েন বচসায়। চাপ দেন সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীর বদলির জন্যও।
আপ সমর্থকদের চাপে পড়ে ওই দিন মাঝরাতেই পুলিশ ওই মহিলাদের আটক করে। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর পরেও আপ নেতৃত্ব কেন্দ্রের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মন্ত্রীর আদেশ অমান্য করার অপরাধে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের বরখাস্ত করারও দাবি জানান কেজরিওয়াল। তা না করা হলে আগামী সোমবার সকাল দশটা থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরের সামনে ধর্নায় বসবেন বলে আজ ফের জানিয়েছেন তিনি। তবে বিদেশি কূটনীতিকদের সমালোচনা ও সরকারি ভাবে তাদের অভিযোগ দায়েরে কেজরিওয়াল প্রশাসন খানিকটা হলেও ব্যাকফুটে। মাঝরাতে যে ভাবে আফ্রিকার দু’টি দেশের মহিলাদের হেনস্থা করা হয়েছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে আফ্রিকী দলটি। গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়ে যাওয়া বিদেশ মন্ত্রকও আজ জানিয়েছে, এই ধরনের ঘটনা অবাঞ্ছিত ও নিন্দনীয়। কোনও ভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর পরেই বিবৃতি দিয়ে সাফাই দেন মুখ্যমন্ত্রী।
ক্ষমতায় এসে নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়ে এখন প্রতি পদে জট পাকিয়ে ফেলছেন আপ নেতৃত্ব। এখন আবার তাদের কাজকর্ম বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তিক্ততা তৈরি করায় বিজেপি ও কংগ্রেস মনে করছে, যত দিন যাচ্ছে ততই কেজরিওয়াল প্রশাসনের অনভিজ্ঞতা সামনে এসে পড়ছে। দলে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না থাকার অভাবে ভুগতে হচ্ছে আপ শিবিরকে। বিরোধী আসনে বসে এক নিমিষে সব পাল্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সহজ। কিন্তু সরকারে থেকে তা করে দেখানো যে শক্ত কাজ, সেটা নিজেই আজ কবুল করেছেন কেজরিওয়াল।
ইতিমধ্যেই সরকারি ডুপ্লে ফ্ল্যাট নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় তা ফিরিয়ে দিয়েছেন কেজরিওয়াল। শুরু করেও বন্ধ করে দিতে হয়েছে জনতার দরবার। বিদ্রোহ করেছেন একাধিক দলীয় বিধায়কও। তবু মচকাতে রাজি নন কেজরিওয়াল। এখনও তাঁর দাবি, “তিন সপ্তাহে আমরা লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক বেশি কাজ করেছি।”
বিদেশিনিদের হেনস্থার পিছনে অভিযুক্ত মন্ত্রী সোমনাথকে আজ ক্লিনচিট দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “আমার মনে হয় না সোমনাথ ভারতী কোনও বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন।” উল্টে গোটা ঘটনাটির জন্য আজ ফের এক বার দিল্লি পুলিশকেই দায়ী করেছেন তিনি। কেজরিওয়ালের কথায়, “দিল্লি পুলিশের অধিকাংশই অসৎ। তার দায় তাদেরই নিতে হবে।”
পটনায় শিন্দে এ দিন বলেন, “দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জং ইতিমধ্যেই ওই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তা-ও কেজরিওয়াল যখন অনুরোধ করেছেন, আমি বিষয়টি দেখব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.