জোটে আপত্তি, দায় এড়ালেন রাহুল

১৮ জানুয়ারি
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে যে তাঁরা জোট চান না, রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে আজ সমস্বরে তা জানিয়ে দিয়ে এলেন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্ব। গত সপ্তাহেই এ বিষয়ে সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল প্রদেশ কংগ্রেস। রাজ্য সফরে আসা এ কে অ্যান্টনিকেও জোটে আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। সেই দাবিই এ বার তাঁরা সোজাসুজি জানালেন দলের নতুন কাণ্ডারী রাহুলের খাস দরবারে। প্রদেশ নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূলের সঙ্গে যে জোট হবে না, তা দ্ব্যর্থহীন ভাবে ঘোষণা করুক হাইকম্যান্ড।
কিন্তু জবাবে রাহুল কী বললেন? প্রদীপবাবু বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বের তরফে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরী ও দীপা দাশমুন্সি তাঁদের মতামত আজ রাহুলকে জানান। প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি মানস ভুইঞাও তাতে সায় দেন। সব শুনে রাহুল বলেন, আপনাদের মনোভাব যখন এমনই, তখন তা-ই হবে। আপনাদের বক্তব্য সভানেত্রীকে জানিয়ে দেব।”
প্রদীপবাবু এই দাবি করলেও রাহুল শিবিরের তরফে কিন্তু বলা হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট কোনও আশ্বাস দেননি তিনি। উল্টে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বকে প্রশ্ন করেছেন, “আপনারা যে একলা লড়াইয়ের কথা বলছেন, পারবেন তো!” রাহুল এ-ও জানিয়ে দেন, জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সনিয়া গাঁধীই নেবেন।
বিহারের কংগ্রেস নেতৃত্বও এ দিন রাহুলের সঙ্গে দেখা করে দাবি করেন, সে রাজ্যে লালু বা নীতীশের সঙ্গে জোট করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যেন রাজ্যে কংগ্রেস কর্মীদের মনোভাবের বিষয়টি বিবেচনায় রাখেন। জোট যেন হয় সম্মানের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের দাবিটি রাহুল সনিয়ার কোর্টে ঠেলে দিয়ে দায় এড়ালেও, বিহারের ক্ষেত্রে কিন্তু তা করেননি। স্পষ্ট আশ্বাস দিয়েছেন রাহুল সম্মান বিকিয়ে বিহারে কংগ্রেস কারও সঙ্গে জোট করবে না।
গত কাল কংগ্রেসের অধিবেশন ছিল দিল্লিতে। তাতে যোগ দিতেই প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা দিল্লি এসেছেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের জোট-বিরোধী মনোভাব কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা তাঁরা কাল থেকেই করছেন। কংগ্রেসের অধিবেশনে বক্তৃতার সময় পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ শোহরাব এবং কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হন। দীপা এ-ও বলেন, তৃণমূলের মতো আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট করে কংগ্রেসের ক্ষতিই হয়েছে।
আজ রাহুল রাজ্যওয়াড়ি কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখনই প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা একজোট হয়ে তাঁকে একটি স্মারকলিপি দেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই প্রথম এ ব্যাপারে রাজ্য কংগ্রেস নেতারা এককাট্টা। তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়-সহ রাজ্য থেকে লোকসভার ৬ জন কংগ্রেস সাংসদের প্রত্যেকেই ওই স্মারকলিপিতে সই করেছেন।
সূত্রের খবর, অধীরবাবু রাহুলকে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের উচিত আরও জোরদার ভাবে মাঠে নামা। জোট হলে দীর্ঘমেয়াদে রাজ্য কংগ্রেসের জন্য তা ভালো হবে না। তৃণমূলের অধীনস্থ একটি দল বলে কংগ্রেসকে মনে হবে। রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীরা এটা চাইছেন না।” আবার দীপা দাশমুন্সি রাহুলকে বলেন, “লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রীই যেন এখন রাজ্য সফরে না যান। ক’দিন আগে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ কলকাতা সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসেছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীকেও সেখানে ডাকা হয়নি। ভোটের আগে এমন যেন না হয়।” রাজ্যের নেতারা রাহুলকে এ কথাও বলেন তৃণমূলের সঙ্গে জোট হলেই যে কংগ্রেস তাদের বর্তমান সব ক’টি আসনে জিতবে, এমন গ্যারান্টি দেওয়া যায় না। তৃণমূল অন্তর্ঘাতও করতে পারে।
প্রশ্ন বল, তা হলে কি জোট হচ্ছে না!
অনেকের মতে, সে ব্যাপারে লিটমাস পরীক্ষা হয়ে উঠতে পারে আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচন। রাজ্যসভা ভোটে কংগ্রেস যে প্রার্থী দেবেই এমন ঘোষণা এখনও হয়নি। প্রদেশ সভাপতি আজও বলেন, “আমরা প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছি।” কংগ্রেস প্রার্থী দিলে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই হবে। তাতেই লোকসভা ভোটের আগে জোট হওয়া না-হওয়ার ইঙ্গিত মিলতে পারে।
অনেকের মতে, রাজ্য নেতৃত্বের আপত্তি সত্ত্বেও জোট প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি সনিয়ার হাতে ছেড়ে দিয়ে রাহুলও সম্ভাবনার দরজা খোলা রাখলেন। কারণ, লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস যখন সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ দলকে এক ছাতার তলায় আনার ডাক দিচ্ছে, তখন তৃণমূলের জন্য এখনই দরজা বন্ধ করে দেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত নয়। এ কথাও মনে করা হচ্ছে, ‘জোট চাই না’ বার্তা দিয়ে আসলে তৃণমূলকে চাপে রাখাই লক্ষ্য কংগ্রেসের। কারণ, কংগ্রেসের অনেকে বিশ্বাস করেন জোট না হলে তৃণমূলেরও ক্ষতি হবে। তাই তাঁরা চাইছেন, সে কথা বুঝে তৃণমূলই আগে জোটের প্রস্তাব দিক। সে ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে দর কষাকষির জন্য কংগ্রেসের পায়ের তলায় তবু জমি থাকবে। কংগ্রেস নিজে থেকে জোটের কথা বললে, তৃণমূল কম আসন ছাড়তে চাইবে।
এই অবস্থায় কংগ্রেস সূত্রে এ-ও বলা হয়েছে, সোমবার প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। যে বৈঠকে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনা হবে। এ-ও বলা হচ্ছে, এ বার যথাসম্ভব তরুণ এবং মুসলিম প্রার্থী বাছবে কংগ্রেস। সুতরাং লোকসভা ভোটে জোট না-করার যে বার্তা প্রদেশ কংগ্রে স দিচ্চে, তা মনের কথা না রাজনৈতিক কৌশল, সময়েই তা পরিষ্কার হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.