|
|
|
|
এ বার সাংসদ মিঠুন, সৌজন্যে মমতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বড় চমক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার পাঁচটি আসনের মধ্যে একটিতে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে তৃণমূলের তরফে প্রার্থী করা হচ্ছে বলে শনিবার ফেসবুকে ঘোষণা করেছেন মমতা। তৃণমূল একটি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও বাকি আসনগুলির জন্য কোনও দলই তাদের প্রার্থীর নাম জানায়নি। ওই সব আসনে ভোট হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। পরশু, মঙ্গলবার থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হবে।
মিঠুনের নাম ঘোষণা করে ফেসবুকে মমতা লিখেছেন, “শ্রীচক্রবর্তী এক জন সুপরিচিত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তিনি নিজের জীবন সফল ভাবে উৎসর্গ করেছেন। তিনি শুধু পশ্চিমবঙ্গের নন, সারা দেশের সম্পদ। তাঁকে প্রার্থী করতে পেরে আমরা গর্বিত।’’
প্রয়াত সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন মিঠুন। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। ২০০৯ সালে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে কংগ্রেস প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারেও মিঠুনকে দেখা গিয়েছিল। লোকসভা ভোটের আগে সেই মিঠুনকেই রাজ্যসভায় প্রার্থী করে মমতা ‘মাস্টার স্ট্রোক’ দিয়েছেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাদের অনেকেই। তাঁদের ধারণা, মিঠুনকে প্রার্থী করায় জাতীয় স্তরেও তৃণমূলের ব্যাপক প্রচার হবে। লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে এই প্রচারটা দরকার ছিল দলের। তৃণমূলের অনেকে বলছেন, বাংলার স্বার্থে মিঠুনের আগাগোড়া সক্রিয় ভূমিকার কথা মাথায় রেখেই মমতা তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানোর কথা ভেবেছেন।
প্রতি বছর এই সময়টা অর্থাৎ ২৬ জানুয়ারির ঠিক আগের এই দিনগুলো মিঠুনের পরিবার ও বন্ধুদের কাছে বেদনার এক অনিবার্য বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। কারণ, পদ্মসম্মানের প্রাপকদের নাম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে ঘোষণা করা হয় এবং এ পর্যন্ত কখনওই সেই তালিকায় মিঠুনের নাম ওঠেনি। অথচ বলিউডের অনেকেই মনে করেন, অভিনয় বাদ দিয়ে শুধু সমাজসেবার জন্যই তাঁর পদ্মসম্মান পাওয়া উচিত ছিল। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে মিঠুনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও তাঁর নাম কখনও পদ্মশ্রীর জন্য প্রস্তাব করা হয়নি। মিঠুন নিজে প্রকাশ্যে না হলেও ঘনিষ্ঠ মহলে অভিমান করে বলতেন, “এ নিয়ে আর ভাবি না।” এ বছর ২৬ জানুয়ারির আট দিন আগে মিঠুন পেয়ে গেলেন অন্য রকম এক সম্মান!
রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব মিঠুনকে আগেও দিয়েছিলেন মমতা। এ দিন মিঠুন বলেন, “সে সময় ৩৬৫ দিনে, ৪১৫ দিন আমায় কাজ করতে হতো। উনি আমাকে ভেবে দেখতে বলেছিলেন। আমিও ওঁকে বলেছিলাম, আপনিও ভেবে দেখুন, আমাকে দিয়ে কাজ হবে কি না!” এ বার রাজ্যসভার ভোটের দিন ঘোষণার পরে তাঁর সঙ্গে মমতা আবার যোগাযোগ করেন। মিঠুন বলেন, “এ বার বলার পর আমি আবার ওঁকে বলেছিলাম, আমি কি পারব ওই দায়িত্ব সামলাতে? উনি বলেছিলেন, ‘কেন মিঠুনদা তুমি বারবার না বল? যেখানে লতাজি, রেখাজি, সচিন তেন্ডুলকর রাজ্যসভায় আছেন! এটা তো একটা সম্মানের ব্যাপার!’ উনি আমাকে প্রার্থী
হওয়ার জন্য তৈরি থাকতে বলেছিলেন।” সুচিত্রা সেনের অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিতে শুক্রবারই কলকাতায় এসেছিলেন মিঠুন। তখনই মমতা তাঁকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। তার পর আজ ফেসবুকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
এ দিন দুপুরে মিঠুনকে তাঁর মেয়ে যখন মোবাইলে খবরটা দেন, তখন তিনি কলকাতা বিমানবন্দরে, মুম্বইয়ের উড়ান ধরার অপেক্ষায়। অভিনেত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে গল্প করছিলেন। যিনি আবার শিলিগুড়ির বিমান ধরার অপেক্ষায় ছিলেন। আপ্লুত মিঠুন সন্ধ্যায় মুম্বই থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, “আমার অভিজ্ঞতা হয়তো এই সব ব্যাপারে কম। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য তো পরিষ্কার। বাংলার জন্য চিরকাল লড়াই করে এসেছি। এ বার দিল্লিতে রাজ্যের হয়ে বলতে চাই।”
আর যিনি তাঁকে এই সুযোগ করে দিলেন, সেই মমতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক? মিঠুনের কথায়, “ভাইবোনের মতো।” মিঠুন বলেন, “আমি ভাবতে পারিনি, আমাদের এই সম্পর্ককে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত সম্মান দেবেন।” বলার সময়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন মিঠুন। বললেন, “আমার স্ত্রী বলেছেন, আর যা-ই করো, এই সম্পর্কে কখনও অকৃতজ্ঞ হয়ো না।”
রাজ্য বিধানসভায় শক্তির নিরিখে পাঁচটি আসনের মধ্যে নিজের ক্ষমতায় তৃণমূল তিনটি এবং বামেরা একটি আসনে জিততে পারবে। পঞ্চম আসনে কে জিতবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। বাকি আসনগুলিতে দলীয় প্রার্থী কারা হবেন, তা নিয়ে আজ রবিবার তৃণমূল ভবনে দলের নির্বাচন কমিটির বৈঠক হবে।
সিনেমার পর্দায় প্রথমে এমএলএ, পরে মিনিস্টার হয়েছিলেন ‘ফাটাকেষ্ট’ মিঠুন। এ বার তিনি চললেন সংসদে। |
|
|
|
|
|