শেষ পর্যন্ত তিনি এলেন না। তাঁর ছবিতেই মালা দিলেন সাধারণ মানুষ।
সকালে মৃত্যুর পরে খবর ছিল শেষযাত্রায় সুচিত্রা সেনের মরদেহবাহী শকট শ্মশানে যাওয়ার পথে এক বার এসে থামবে রবীন্দ্র সদন প্রাঙ্গণে। সেই আশায় আয়োজন শুরু করেছিলেন সদনের কর্মীরা। সকাল গড়িয়ে দুপুর। ওই কর্মীদের মতো আরও অনেকেই তখনও আশা ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত খবর এল বালিগঞ্জের বাড়ি ‘বেদান্ত’ থেকে মরদেহ যাচ্ছে কেওড়াতলা শ্মশানে। হতাশা গোপন করেননি অনেকেই। তাঁর দেহ আসছে না ঠিক হওয়ার পরে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, রবীন্দ্র সদনে প্রয়াত অভিনেত্রীর ছবি ও পোস্টারের সমন্বয়ে একটি প্রদর্শনী হবে। সেখানে মালা দিতে পারবেন সাধারণ। সদন চত্বরে বড় পর্দায় দেখানো হবে তাঁর ছবির অংশবিশেষও।
এই সিদ্ধান্তের পরে দুপুর ৩টেয় সুচিত্রা সেনের ছবিতে মাল্যদান করেন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্য এবং অধিকর্তা রীতেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। তার পরই তা খুলে দেওয়া হয় আম-জনতার জন্য। প্রশাসন সূত্রের খবর, রবিবার অবধি চলবে প্রদর্শনী। সাধারণ মানুষ এসে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। শুক্রবার বিকেলে রাজ্যের নবান্নে সুচিত্রা সেনের ছবিতে মাল্যদান করেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রও।
টিভিতে শেষযাত্রার টাটকা ছবি দেখে এ দিন অনেকেই শেষ বিকেলে সুচিত্রা সেনকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন রবীন্দ্র সদনে। সোনারপুরের সুমিতা ঘোষ, নাকতলার সুস্মিতা ঘোষ, গিরিশ পার্কের বিপুল বসাক কিংবা তমলুকের মেঘনাদ সামন্ত এঁরা অবশ্য দুপুর থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন যদি এক বার দেখা যায় মহানায়িকাকে। সুস্মিতার আক্ষেপ, “খবরটা পেয়ে হাসপাতালে দৌড়ে গিয়েছিলাম। দেখা পেলাম না। ভেবেছিলাম, এখানে দেখতে পাব। এটা খুব অন্যায়। এখানে এক বার নিয়ে আসতে পারত। ওঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারতাম।” খবর পেয়ে তমলুক থেকে সটান কলকাতা রওনা দিয়েছিলেন মেঘনাদবাবু। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ট্রেন-বাসের ধকল সামলে রবীন্দ্র সদনে এসে একেবারে হতাশ। বিপুলবাবু, মেঘনাদবাবুরা অবশ্য সিনেমা হলেই দেখেছেন সুচিত্রাকে। বিপুলবাবুর কথায়, “ওঁর কী কী ছবি হলে গিয়ে দেখিনি, সেটাই বরং সহজে বলতে পারব।”
সিনেমা হলে গিয়ে নয়, সুচিত্রাকে বাড়িতে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছেন এ প্রজন্মের অনেকেই। ‘সুচিত্রা ম্যাজিক’ তাঁদের কাছেও একই রকম আকর্ষণীয়। তাই তাঁর মৃত্যুর খবরে কলেজ কেটে রবীন্দ্র সদনে হাজির হয়েছিলেন সোমদত্তা, নবনীতা, রোমিলারা। অফিসের ফাঁকে বন্ধুদের সঙ্গে রবীন্দ্র সদনে এসে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলেন দ্বিজু চট্টোপাধ্যায়ের মতো অসংখ্য মানুষ। মৌসুমী মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে আবার গোখেল মেমোরিয়ালে পড়ে। মেয়েকে স্কুল থেকে আনার পথে এক বার ঘুরে গেলেন রবীন্দ্র সদন। সবার মুখে একটাই কথা, “সুচিত্রা সেন মানে একটা উন্মাদনা। ওরকম নায়িকা বাংলা সিনেমায় হয়নি, হবেও না।” |