যুদ্ধ সাঙ্গ, কফিনে বেলভিউ ছাড়লেন সুচিত্রা
বেলভিউয়ের সামনে গত কয়েক দিনের মতোই শুরু হয়েছিল শুক্রবার সকালটা। গুটিকয়েক সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি দাঁড়িয়ে। উৎসাহী জনতা তখনও ভিড় করতে শুরু করেনি। নার্সিংহোমের সামনে কর্তব্যরত পুলিশদের জটলা। তবে বৃহস্পতিবার রাতেই খবর ছড়িয়েছিল, ভাল নেই তিনি। তাই শুক্রবার সকালে নার্সিংহোমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে সে বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন পথচলতি কেউ কেউ। রোজকার মতোই ডাক্তারদের গাড়ির আনাগোনা ছিল সকাল থেকে।
সকাল সাতটা নাগাদ দেখা গেল, নার্সিংহোম থেকে পায়ে হেঁটে বেরিয়ে সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটি ট্যাক্সি ধরলেন মুনমুন সেন। তাঁর চোখ-মুখে রাতজাগা ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার রাতে নার্সিংহোমে মায়ের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। রাতে কেমন আছেন মা, তা নিয়ে অবশ্য কিছু বলেননি। মুনমুন সেনকে চলে যেতে দেখে অনেকেই ভাবলেন, আগের থেকে নিশ্চয় অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করল সকাল আটটার পর থেকে। হঠাৎ নার্সিংহোমের সামনে তৎপরতা। সাড়ে আটটার পরে খবর ছড়াতে শুরু করল, মারা গিয়েছেন সুচিত্রা সেন! নার্সিংহোমে পৌঁছলেন রাইমা ও রিয়া। মোতায়েন হল অতিরিক্ত পুলিশ। খবর এল, কিছু ক্ষণের মধ্যে চলে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাড়ে ন’টায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় এলো। মিনিট দশেক আগেই এসেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। মুখ্যমন্ত্রী আসার কিছু ক্ষণের মধ্যে এলেন মুকুল রায়, অরূপ বিশ্বাস-সহ বেশ কয়েক জন নেতা-মন্ত্রীও। এলেন রামকৃষ্ণ মিশনের প্রবীণ সন্ন্যাসীরাও।
তত ক্ষণে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। ভিড় বাড়ছে নার্সিংহোমের সামনে। পুলিশি ব্যারিকেড নার্সিংহোমের সামনের চত্বরে। কিন্তু ভিড় সামলানো যাচ্ছিল না। দশটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের জানালেন সুচিত্রা সেনের জীবনাবসানের খবর। পৌনে এগারোটায় মুনমুন সেন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে হাতজোড় করে বললেন, “আমার মায়ের তরফ থেকে আপনাদের নমস্কার জানাচ্ছি।”
নার্সিংহোমের সামনে তিলধারণের জায়গা নেই। সওয়া এগারোটা নাগাদ এলেন প্রসেনজিৎ। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও পৌঁছলেন। আশপাশের বহুতলগুলোর ছাদে ও ব্যালকনিতে তত ক্ষণে ভিড় জমে গিয়েছে। বিনোদন ও অন্যান্য জগতের তারকাদের ভিড় বাড়ছে নার্সিংহোম চত্বরে। কিন্তু আম-জনতা তাঁদের দেখতে আগ্রহী নন। তাঁদের চোখ শুধু খুঁজছে, শেষযাত্রায় যদি এক বার অন্তত দেখা যায় তাঁকে। এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন হাওড়ার বাসিন্দা চিত্রা সাহা নাগ। তিনি বললেন, “জানতাম উনি অসুস্থ। তবু মনের কোণে আশা ছিল, এ বারও হয়তো ভাল হয়ে বাড়ি ফিরবেন।” ওই নার্সিংহোমে চোখ দেখাতে এসেছিলেন সোমনাথ দত্ত। তাঁর শুধু একটাই প্রশ্ন, “শববাহী গাড়ি বেরোনোর সময় মোবাইলে ছবি তোলা যাবে কি?”
অনেকেই সামনে আসার চেষ্টা করছিল। যাতে আরও কাছ থেকে দেখার সুযোগ মেলে। কিন্তু বাধা ব্যারিকেড। ভবানীপুরের অজিত কুণ্ডু রজনীগন্ধার দু’টো মালা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন। বললেন, “ভারতী সিনেমা হলে ‘আঁধি’ দেখতে গিয়ে এক বার দেখা হয়েছিল। ‘দিদি’ বলে ডাকতে হাতও নেড়েছিলেন তিনি।” সুচিত্রা সেনের চিকিৎসা চলাকালীনও কয়েক বার এসেছেন। মৃত্যুর পরেও ‘মহানায়িকা’কে দেখতে পাবেন না, এটা মানতে পারছিলেন না অজিতবাবু। বারবার জিজ্ঞাসা করছিলেন, কী ভাবে মালাটা দেবেন? বেহালার স্বাতী কর্মকার হাঁটুর ব্যথার জন্য বেশি ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। কিছু ক্ষণ পর পরই বসে পড়ছিলেন রাস্তায়। জলভরা চোখে তিনি বললেন, “মনে হচ্ছে আমার মা মারা গেলেন।” এক বার চোখে দেখার আশায় এসেছিলেন দমদমের সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, বাড়িতে কেউ নেই, ছোট ছেলেকে সঙ্গে করেই চলে এসেছেন।
ঘড়ির কাঁটা বারোটা চল্লিশ ছুঁল। ফুলে ঢাকা শববাহী গাড়ি বেরিয়ে এল নার্সিংহোম থেকে। তার পিছনেই ছিল মুনমুন সেনের গাড়ি। তাতেই ছিলেন রাইমা ও রিয়া। কালো কাচ আর পুরো ফুলে মোড়া থাকায় গাড়ির ভেতরের কফিনটাও দেখা যাচ্ছিল না, ভেতরের শরীরটাকে দেখা তো দূর অস্ৎ। কাছে যেতে পারছিলেন না কেউ। তাই গাড়ির উদ্দেশে অনেকেই ফুল-মালা ছুড়তে থাকেন। সকাল থেকে অপেক্ষমান সুচিত্রা-ভক্তেরা মোবাইল দিয়ে ছবি তুলতে লাগলেন শুধু ওই শববাহী গাড়িটারই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.