সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগ
ছড়াচ্ছে আলুর ধসা রোগ, ঘুম উড়েছে চাষিদের
জেলায় জেলায় আলুর ধসা রোগ ছড়িয়ে পড়ায় রাতের ঘুম উড়েছে আলু চাষিদের।
পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি, গড়বেতা, গোয়ালতোড়ের পর নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার কিছু অংশে এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে বর্ধমান ও হুগলিতেও ধসা রোগ ছড়িয়েছে। কুয়াশায় ধসা রোগের জীবাণু বেশি ছড়ায়। অনেক বেলা পর্যন্ত মেঘলা আকাশ আর কুয়াশার পর দিনের তাপমাত্রা আচমকা বেড়ে যাওয়াতেই এই সমস্যা বলে জানিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। ধসা রোগের প্রকোপের জন্য আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেই দায়ি করেছেন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী। কৃষি বিজ্ঞানীরাও এ নিয়ে সহমত পোষণ করেছেন। এই অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। অনেকেই আলুর রোগমুক্তির আশায় স্থানীয় সার ব্যবসায়ীদের পরামর্শে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ শুরু করেছেন। আর এতে হিতে বিপরীত হয়েছে আরও বেশি করে।
উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর-২ ব্লকের বিলকান্দার সুভাষ সরকার, অজিত সাউ, প্রফুল্ল নস্কর ছ’বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। নতুন বছরের গোড়াতেই কিছু গাছের পাতায় কালো ছোপ পড়তে দেখে স্থানীয় সার ও ওষুধ বিক্রেতার পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক স্প্রে করেছিলেন যাতে বাকি গাছগুলোতে রোগ না ছড়ায়। সাত দিন কাটতে না কাটতেই তাঁদের মাথায় হাত। বিঘার পর বিঘা জমিতে আলু গাছ নুইয়ে পড়েছে।
নদিয়ার শিমুরালি, বিরহী বা বীরনগরেও ভুল পরামর্শের শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন আলু চাষি। গঙ্গার ধারে মাঝের চরের আলু চাষি অনন্ত মণ্ডল বলেন, “প্রতি বছর দু’বিঘা জমিতে ধান করতাম। এ বার বোরো চাষ বন্ধ রেখে আলু করলাম। ধসা রোগ ধরেছে দেখে আমিও দোকান থেকে ওষুধ এনে জলে গুলে স্প্রে করেছিলাম কিছু গাছে। পরে দেখি সেগুলি আরও নেতিয়ে যাচ্ছে। এর পর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করি। ওই গাছগুলো উপড়ে বাকি গাছগুলোতে কৃষি বিজ্ঞানীদের পরামর্শমতো ওষুধ স্প্রে করে ভাল ফল পেয়েছি।”
ফি বছর শীতের মরশুমে আলু চাষে ধসা রোগের প্রকোপ স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে চাষি, বিজ্ঞানী বা সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিকদের কাছে। তা সত্ত্বেও এই রোগের প্রতিকারে সচেতনতা আর সমন্বয়ের ফাঁকটা রয়েই গিয়েছে। প্রতি বছর যাঁরা জ্যোতি আলু চাষ করছেন বেশি ফলন আর সামান্য লাভের আশায় কেন বারবার তাঁরা প্রকৃতির রোষে বলি হবেন তার সঠিক উত্তর অবশ্য কারও কাছে নেই। কিছুদিন আগেই আলু অগ্নিমূল্য হওয়ায় সরকার আলুর বীজ তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। সেই বীজ এই রাজ্যের আলু চাষিদের কতটা উপকৃত করবে তা এখনও কারও জানা নেই কারণ বীজ আলুর উৎপাদনই আশানুরূপ হয়নি। কারণ ধসা রোগের শিকার এই বীজ আলুও।
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক ধসা রোগ নিয়ে গত সোমবার দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, “আমরা চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় সমস্যা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সবরকম চেষ্টা করছি।” কি বলছেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা? বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব্জিরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “গত দু’ বছর ধরে কুয়াশা, আর্দ্রতা আর ঠান্ডা-গরমের ক্রমাগত ওঠানামায় ধসা রোগ এমন হচ্ছে যে চিরাচরিত ফেনামিডন, ম্যানকোজেব-এর মতো ওষুধ আর এই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে না। অন্য কম্পোজিশনের ওষুধের কথা ভাবতে হচ্ছে আমাদের।” সমন্বয়ের ঘাটতির কথা মেনে ইন্দ্রব্রতবাবু বলেন, “চাষিদের অনেকেই ভুল পরামর্শে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা জানতেও পারছি না। যদিও রাজ্যের সব চাষি যাতে সঠিক পরামর্শ পান সে জন্য রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় কৃষক সহায়তা কেন্দ্র করা হয়েছে।”
পরবর্তী সময়ে ক্ষতি এড়াতে কৃষিবিজ্ঞানীরা চিরাচরিত জ্যোতি আলুর চাষ ছেড়ে শৈলজা, হিমলিনীর মতো সহনশীল জাতের আলু চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন। তা ছাড়া চাষে একই বীজ বারবার ব্যবহার হওয়ায় তাতে জীবাণুর মাত্রাও বেশি থাকছে বলে তাঁদের অভিমত। আপাতত ধসা রোগের প্রতিকারে রিডোমিল জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.