|
|
|
|
এক নজরে |
সবার উপরে |
মহানায়িকা শুধু নন, আজকের নিরিখেও বাংলার সর্বকালের হায়েস্ট পেড তারকা হলেন সুচিত্রা সেন। সেই ষাটের দশকেও তিনি ছবি পিছু নিতেন ৭০-৮০ হাজার টাকা। ‘হার মানা হার’ আর ‘নবরাগ’-এ সেটা বাড়িয়ে করেন এক লক্ষ টাকা। সেই প্রথম ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও তারকা নিয়মিত ভাবে লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিতে আরম্ভ করেন। ১৯৬৭-তে ‘গৃহদাহ’ করার সময় ছায়াবাণী পিকচার্স দেয় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। ‘দত্তা’র সময়ও পান সমপরিমাণ টাকা। সেই সময় মাধবী মুখোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া দেবী বা কাবেরী বসুর মতো নায়িকাদের পারিশ্রমিক ছিল ৩০ হাজার টাকার আশপাশে। অর্থাৎ সুচিত্রার মার্কেট রেট সব সময় প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি থেকেছে। ইন্ডাস্ট্রিতে পুরুষ তারকারা মহিলাদের চেয়ে বেশি পাবেন এটাই দস্তুর। কী টালিগঞ্জে, কী বলিউডে। সুচিত্রা কিন্তু উত্তমকুমারের চেয়েও বেশি পেতেন। উত্তমের সে সময় রেট ছিল এক লাখ ১০ হাজার টাকা। যদিও সুচিত্রা অভিনয় ছাড়ার শেষ দিকে উত্তমের পারিশ্রমিক বেড়েছিল। ‘অমানুষ’ আর ‘আনন্দ আশ্রম’-এ তাঁকে আড়াই লাখ টাকা দেওয়া হয়। তবে বাড়তি রেটটা ডাবল ভার্সন ছবি বলে। ৪৭ বছর আগে সুচিত্রার ছবি পিছু যা রোজগার ছিল, এখনকার হিসেবে তা দাঁড়ায় অন্তত ৮০ লাখের কাছাকাছি। আজকের দিনে যে রেট বাংলা ছবির তিন মহারথী প্রসেনজিৎ-জিৎ-দেব, সবার চেয়ে বেশি। |
|
রইল পড়ে স্মৃতি। রিয়ার জন্মদিনের আনন্দে মুনমুন, রাইমা, রিয়া এবং ভরতের সঙ্গে। ছবি: সাত্যকি ঘোষ। |
যদি শুনতেন রিংটোন |
শ্মশানে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার রাতের কথা বলছিলেন সুচিত্রা-কন্যা। মায়ের রক্তে তখন কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। আর কথাই বলতে পারছেন না তিনি। পাশে বসে শুধু মুনমুন। এমন সময় এক নার্স আসেন রক্তচাপ মাপতে। হঠাৎ সেই নার্সের ফোনটা বেজে ওঠে। মুনমুন বলছিলেন, “মা এমনিতে ঠাকুরের রিংটোন পছন্দ করতেন। কিন্তু সেই নার্সের ফোনে বাজছে দেখলাম ‘তুমি যে আমার...’ নার্স তাড়াতাড়ি ফোন বন্ধ করে দিলেন। মা তখন আর কিছু বুঝতে পারছেন না। কিন্তু আমার খালি মনে হচ্ছিল ইস্, এক বার যদি মা শুনতে পেতেন, ভাল লাগত।” |
দেখা হবে ও-পারে |
হাসপাতাল লাগোয়া রাস্তার পাশে রেলিং ধরে বসেছিলেন বৃদ্ধা। বিড়বিড় করছিলেন, “কৃষ্ণাকে নিয়ে চলে গেল! এক বার চোখের দেখা দেখতে পারলাম না!” অবিভক্ত বাংলাদেশের পাবনায় সুচিত্রা সেনের সহপাঠিনী ছিলেন তিনি, ফুলরানি কাঞ্জিলাল। সুচিত্রার নাম তখন কৃষ্ণা। ১৯৮৬ পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধুর। ফুলরানি ২০০৪ সালে বই লেখেন, ‘আমার বাল্যবন্ধু মহানায়িকা সুচিত্রা সেন’। সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘এ জগতে তো আর হল না। হয়তো ও-পারে আবার হবে।” |
মনে রেখে |
কেওড়াতলা মহাশ্মশানের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মেমোরিয়াল পার্কে দাহ করা হল সুচিত্রা সেনকে। চিত্তরঞ্জন, যতীন দাস, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিসৌধ দিয়ে ঘেরা জায়গাটি। দাহকার্য শেষের পরে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, সুচিত্রার চিতা যেখানে সাজানো হয়েছিল, সেখানেই তৈরি হবে তাঁর স্মৃতিসৌধ। এর পাশাপাশি, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি হবে সুচিত্রা সেন স্কোয়ার, নায়িকার বাড়ি সংলগ্ন বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের নতুন নাম হবে সুচিত্রা সেন সরণি। পুর প্রশাসনকে দ্রুত এ সংক্রান্ত কাজকর্ম সেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। |
সেলাম
|
অভিনব সুচিত্রা-স্মরণ এক অনুরাগীর। —নিজস্ব চিত্র। |
বইমেলাতেও |
আসন্ন ৩৮তম আর্ন্তজাতিক কলকাতা বইমেলায় স্মরণ করা হবে সুচিত্রা সেনকে। মেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান, বইমেলায় এ বার তিন দিন ধরে ভাষা সাহিত্য উৎসব হওয়ার কথা। তার মধ্যে এক দিন হবে প্রয়াত নায়িকার স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠান। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে কাজের স্মৃতিচারণ করবেন শিল্পীরা। থাকবে সিনেমার কোলাজ, সুচিত্রাকে নিয়ে লেখা নানা বইয়ের হদিস। |
হাজার পুলিশ |
বেলভিউয়ে ২০০, কেওড়াতলায় ২০০, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়ির সামনে ১০০ এবং মৃতদেহ যে সব রাস্তা দিয়ে গিয়েছে, সেই সব জায়গায় মোট ৫০০ জন পুলিশকর্মী। এই মোট হাজার পুলিশের তত্ত্বাবধানে এক জন স্পেশ্যাল কমিশনার, দু’জন অতিরিক্ত কমিশনার,
তিন জন যুগ্ম কমিশনার এবং আট জন ডেপুটি কমিশনার। আর খোদ পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ হাসপাতাল থেকে কেওড়াতলাসারাক্ষণই ছিলেন। নায়িকার মৃত্যুর অব্যবহিত পর থেকে তাঁর শেষকৃত্য পর্যন্ত পুলিশি বন্দোবস্ত শুক্রবার ছিল
এই রকমই। |
একই দিনে |
মৃত্যুদিনটা এক করে দিল দু’জনকে। জ্যোতি বসু এবং সুচিত্রা সেন। টানা ১৭ দিন লড়াইয়ের পরে ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে প্রয়াত হয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। |
|
বিকেল পর্যন্ত টিভিতে সুচিত্রা সেনের শেষকৃত্য দেখে ভিতরটা কেমন ফাঁকা লাগছে। কথা বলতে পারছি না। অথচ ওঁর সঙ্গে আমার যে খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল তেমন নয়। মাত্র দুটো ছবিতে অভিনয় করেছি একসঙ্গে। ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’ আর ‘গৃহদাহ’। প্রথম ছবিটার সময় তখনও উনি মহানায়িকা হননি, আর আমিও সাবিত্রী হিসেবে পরিচিত হইনি। প্রথম দেখা হতেই খুব আন্তরিক ভাবে হেসে বলেছিলেন, “শোনো আমি তোমার থেকে অনেক বড়। আমাকে দিদি বলে ডাকবে।” তার পর ‘গৃহদাহ’। অনেক বছর বাদে। মাত্র চার দিনের শ্যুটিং।
আমার শুধু আশ্চর্য লাগে, এমন একজন শিল্পী কেন পঁয়ত্রিশ বছর ধরে আড়ালে রয়ে গেলেন!
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় |
সুচিত্রাকে আমার মনে পড়ে একজন নিপাট চুপচাপ মেয়ে হিসেবে। কিন্তু ক্যামেরা ফোকাস করামাত্র একেবারে অন্য মানুষ। বিশেষত গভীর আবেগের দৃশ্য অসাধারণ করত। ওর মধ্যে একটা সহজাত টাইমিং আর লয়ের বোধ ছিল। আমার সঙ্গে ওয়েভলেংথেও খুব মিল ছিল। একটা চরিত্র করার আগে দীর্ঘ মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার অভ্যাস ছিল আমাদের দুজনেরই। এমনিতে সুচিত্রা বেশি কথা বলত না ঠিকই। কিন্তু তারই মধ্যে একেক বার ওর রসবোধের পরিচয় পেয়েছি। তখন খুব একচোট হাসাহাসি হয়েছে। ওর অসুস্থতার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু নিজের শরীর খারাপ থাকায় খবর নিতে পারিনি। এখন অপরাধবোধ হচ্ছে।
দিলীপ কুমার |
|
মনে আছে, ‘গাইড’ আর ‘মমতা’র জন্য একসঙ্গে সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পেয়েছিলাম আমরা। শেষ পর্যন্ত আমি জিতে যাই। উনি খুব খুশি হয়ে আমাকে বলেছিলেন, রোজি-র চরিত্রটা একেবারে জ্যান্ত করে তুলেছো তুমি। কিন্তু আমি জানতাম, উনি আসলে আমার চেয়ে কত বড় অভিনেত্রী। ‘খামোশি’ করার আগে পাঁচ বার ‘দীপ জ্বেলে যাই’ দেখেছিলাম। তবু ওঁর ধারেকাছে পৌঁছতে পারিনি।
ওয়াহিদা রহমান |
আমেরিকায় বসে খবরটা পেলাম। আমাকে খুব স্নেহ করতেন, ডার্লিং ডি বলে ডাকতেন। আবার একটা দূরত্বও বজায় রাখতেন। ব্যক্তিগত জীবনে কাউকে ঢুকতে দিতেন না। মনে আছে, ‘মমতা’ হওয়ার সময় ১৯৬৫ সালে ওঁর সঙ্গেই প্রথম বার কালীঘাটে গিয়ে পুজো দিয়েছিলাম।
ধর্মেন্দ্র |
|
কাজে যাওয়ার পথে গাড়িতেই খবরটা শুনলাম। আরও এক জন আইকন চলে গেলেন। প্রতিভা আর আভিজাত্যের সমার্থক ছিলেন উনি। সুচিত্রা মানেই রূপ, গুণ আর রহস্যময়তা...একের পর এক বাংলা ছবিতে কী সব অভিনয়! হিন্দিতেও তার স্বাক্ষর আছে।
অমিতাভ বচ্চন |
ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনবদ্য স্থানে অধিষ্ঠিতা ছিলেন সুচিত্রা সেন। প্রকৃতপক্ষে অভিনয়দক্ষতায় একটা দীর্ঘ সময় উনি ছিলেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
|
|
প্রণব মুখোপাধ্যায়
দশকের পর দশক বাংলা ছবির কিংবদন্তি অভিনেত্রী হয়ে ছিলেন। আন্তর্জাতিক
চলচ্চিত্র উৎসবে তিনিই প্রথম বাঙালি, যিনি সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। |
|
আপনার মোবাইলে QR Reader ডাউনলোড করে এই QR
কোডটি স্ক্যান করুন আর দেখে নিন এই প্রসঙ্গে টলিউডের প্রতিক্রিয়া। |
|
|
|
|
|
|