কান্তি একটা লাউ পেড়ে দে ভাই, বলতেন রাঙাদি
গাড়িটা সটান এসে থামত মরচে ধরা টিনের চালার বাড়িটার সামনে। শাড়ির আঁচলে মুখটা আড়াল করে গাড়ির বাইরে পা রেখে প্রায় এক ছুটে রাঙাদি চলে যেতেন ভিতরে।
এক দিন সেই ফাঁকেই এক ঝলক দেখে ফেলেছিল ষোড়শী অশোকা হাজরা। বয়স গড়িয়ে অশোকা এখন সত্তর পেরিয়েছেন। শান্তিনিকেতনের ভুবনডাঙার সুধাসাগর পাড়ের সেই বিকেলটা এখনও অবশ্য অবিকল মনে আছে তাঁর।
সে বাড়ির মালিক ছিলেন সুচিত্রা সেনের বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত। ষাটের দশকের গোড়ায় স্থানীয় পুরসভার স্যানিটেশন ইনস্পেক্টর করুণাময়বাবু সদ্য এসেছেন বোলপুরে। ভুবনডাঙার পাড়ে সুধাসাগরে আটপৌরে বাড়িটা কিনেছেন সবে। বাবা-মা মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওই বাড়িতে কলকাতা ফেরত মহানায়িকার নিয়মিত যাতায়াত ছিল সে সময়ে। সে বাড়ি হাত বদল হয়ে এখন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীর।
পাড়ার সেই মেয়েটিকে সে সময় যাঁরা দেখেছিলেন, তাঁদের স্মৃতি এখন ফ্যাকাশে। সুচিত্রার আনাগোনা এখনও আবছা মনে পড়ে তাঁদের। এক সময়ে দাশগুপ্ত পরিবারটাই ঠিকানা বদলে চলে গিয়েছিল কলকাতায়। শুক্রবার বিকেলে, সেই দাশগুপ্ত পরিবার আর তাঁদের হারানো রাঙাদিকে (ভুবনডাঙা এ নামেই চিনত সুচিত্রাদেবীকে) খুব মনে পড়ছে সুধাসাগর পাড়ের।
বোলপুরে বদলি হয়ে আসার পরে করুণাময়বাবুর প্রথম ঠিকানা অবশ্য ছিল উকিলপট্টি। মাস কয়েকের মধ্যেই অবশ্য ভুবনডাঙার ওই বাড়িতে উঠে এসেছিলেন তাঁরা। পাড়ার পুরনো বাসিন্দা কৃষ্ণগোপাল রায়ের মনে আছে, “রাঙাদি তখনই ডাকসাইটে নায়িকা। গাড়ি থেকে নামার সময়ে এক চিলতে কিংবা বারান্দায় আনমনা দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে দু-এক বার দেখেছি। এখনও চোখের ফ্রেমে সে দৃশ্য স্পষ্ট।” পাড়ার পুরনো সেই সব মানুষ জন জানাচ্ছেন, কলকাতা থেকে আসা যাওয়া ক্রমেই কমে এলেও বোলপুরে এলেই পাড়া পড়শি সকলের খোঁজ নিতেন। কখনও বা সন্ধে নামলে গাড়ি হাঁকিয়ে চলে যেতেন তারাপীঠ।
বোলপুর হাইস্কুলে সুচিত্রার ছোট ভাই গৌতমের সহপাঠী ছিলেন কৃষ্ণগোপাল। বোলপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মী বলেন, “১৯৬৪ সালে বোলপুর কলেজে বিএ ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময়ে গৌতম মারা গেল। বিড়ালের কামড় থেকে সংক্রমণ হয়েছিল। শান্তিনিকেতনেই সৎকার হয়েছিল। ছোটভাইয়ের শ্রাদ্ধে এসে রাঙাদি সবাইকে নিজে হাতে পরিবেশন করেছিলেন।” মনে পড়ছে, “আমার বিয়ের দিন রাঙাদি কলকাতা থেকে আসতে পারেননি। দিন কয়েক পরে বোলপুরে এসেই বাড়িতে চলে এলেন, ‘কী রে নতুন বউকে দেখাবি না!”
সুচিত্রা বাড়ি এলেই ডাক পড়ত বছর ষোলোর কান্তির। পেশায় ছুতোর কান্তি বিশ্বাস বলেন, “রাঙাদি লাউ খেতে খুব ভালবাসতেন। বাড়িতে এলেই আমাকে বলতেন, ‘কান্তি দে না ভাই একটা লাউ পেড়ে।” টিনের চালা থেকে লাউ পাড়লে তাঁর জন্য বরাদ্দ থাকত ‘সুগন্ধী চা’। সুচিত্রার পরিবারের কাছ থেকে আঠারো বছর আগে সে বাড়ি কিনে নেন সরকারি কর্মী বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বাড়িটা কেনার পরে একটু সংস্কার করেছি ঠিকই কিন্তু মেঝেটা আগের মতোই রয়েছে। ওই মেঝেতে পা ফেলেই এক দিন তিনি হেঁটে গিয়েছিলেন কিনা!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.