|
|
|
|
আমার সঙ্গে খাবে, বলেছিলেন সুচিত্রা
নুরুল আবসার • কলকাতা |
শ্বশুরমশাইয়ের আদেশ হল, “মা, তোমাকে ক’দিনের জন্য ঘরখানা ছেড়ে দিতে হবে।” বউমা সলজ্জ বদনে জানতে চাইলেন, “বিশেষ কেউ আসছেন কী আমাদের অতিথি হয়ে?” উত্তর মিলল, “হ্যাঁ, বিশিষ্ট তো বটেই। সুচিত্রা সেন আসবেন। থাকবেন ক’দিন। সঙ্গে উত্তমবাবুও নাকি উঠবেন এ বাড়িতে।”
১৯৭১ সাল নাগাদ সে দিনের প্রসঙ্গ উঠতেই এখনও শিহরিত মৃদুলা খান। তত দিনে সুচিত্রার বেশ কিছু ছবি দেখে ফেলেছেন সদ্য তরুণী মৃদুলা। সেই স্বপ্নের নায়িকা আসছেন তাঁর বাড়ি এবং শুধু আসছেন না, থাকবেন তাঁর নিজের ঘরটিতে এ আনন্দ কোথায় লুকোবেন খান বাড়ির নববধূটি! তিন দিন তাঁর সেই ঘরেই ছিলেন সুচিত্রা।
হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের গোহালপোতা গ্রামের সত্যনারায়ণ খান ছিলেন ছবি পরিবেশক সংস্থা চণ্ডীমাতা ফিল্মস-এর কর্ণধার। মৃদুলা তাঁরই পুত্রবধূ। নিজের গ্রামে বহু শ্যুটিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন সত্যনারায়ণ। বাংলা রূপোলি পর্দার তাবড় নায়ক-নায়িকারা সেই সূত্রেই এসেছেন তাঁর বাড়িতে। ‘হার মানা হার’ ছবির শ্যুটিংয়ে তিন দিন সেই বাড়িতেই মৃদুলার ঘরে উঠেছিলেন সুচিত্রা। ছোটদের আশ্রমে শিক্ষিকার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল কিংবদন্তী নায়িকাকে। আশ্রমের দৃশ্যটি শ্যুট করা হয়েছিল গোহালপোতায়। বাড়ির সামনেই মাঠে তৈরি হয়েছিল সেট।
মৃদুলাদেবী জানালেন, শ্যুটিং শুরুর আগের সন্ধ্যায় উত্তমকুমার এবং সুচিত্রা সেন দু’টি আলাদা গাড়িতে গোহালপোতায় পৌঁছন। সুচিত্রার সঙ্গে ছিল সদ্য কিশোরী মুনমুন, একজন পরিচারিকা এবং পরিচারক। উত্তমকুমারের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল দোতলায়। সুচিত্রার জন্য রাখা হয়েছিল তিনতলার একটি ঘর। মৃদুলাদেবী বলেন, “ওই ঘরটি আমি ব্যবহার করতাম। শ্বশুরমশাই যখন জানালেন ওখানে সুচিত্রা থাকবেন, গর্বে আমার বুক ভরে গিয়েছিল।” |
এই বাড়িতেই উঠেছিলেন মহানায়িকা। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়। |
মৃদুলার স্মৃতিতে সেই তিন দিনের ঘটনা এখনও স্পষ্ট। জানালেন, তাঁর উপরে ছিল উত্তমকুমারকে খাওয়ানোর দায়িত্ব। সুচিত্রার জন্যও রান্না করতেন তাঁরাই। কিন্তু পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলেন নায়িকার পরিচারিকা-পরিচারক। প্রথম দিন শ্যুটিং সেরে দুপুরে খেতে এসেছিলেন সুচিত্রা। মৃদুলাদেবী বলেন, “আমাকে উনি বললেন, তুমি এ বেলা আমার সঙ্গেই খাবে। আমার তো খুশি আর ধরে না।” বুক ঢিপঢিপ নিয়েই মেঝেতে বসে মুনমুন আর তার মায়ের সঙ্গে খেতে বসলেন মৃদুলা। কিন্তু খাবেন আর কী! সুচিত্রার অনুরোধেই রান্না হয়েছিল নেহাতই ঘরোয়া মাছ ভাজা, মাছের ঝোল, সুক্তো, ডাল, চাটনি। কিন্তু সুচিত্রা খেলেন নেহাতই সামান্য। অল্প ক’টা ভাত সামান্য তরকারি দিয়ে মেখে খেয়ে উঠে পড়লেন। মৃদুলা বলেন, “আমি বাড়ির বউ। উনি অতটুকু খেয়ে উঠে পড়ায় আমিও লজ্জায় আর খেতে পারলাম না।” আবছা মনে পড়ে মৃদুলার, একটা বড় পুঁটি মাছ ভাজা সে দিন গোটাটাই বেশ তৃপ্তি করে খেয়েছিল মুনমুন।
তিন দিনে কী কথা হয়েছিল নায়িকার সঙ্গে? মৃদুলা বলেন, “উনি খুব বেশি কথা বলতে না। তবে আমার বাপের বাড়ির কথা টুকটাক জিজ্ঞেস করেছিলেন। বাপের বাড়িতে কে আছে, কবে বিয়ে হয়েছে, কয় ভাইবোন এই সব ঘরোয়া প্রশ্ন।”
আর একটা কথা মৃদুলাদেবীর স্মৃতিতে এখনও অমলিন। বিছানায় পাতা সুতোর কাজ করা চাদরটি দেখে বড় পছন্দ হয়েছিল নায়িকার। তারিফ করেছিলেন। ওই রকম একটি চাদর মুখ ফুটে চেয়েওছিলেন সুচিত্রা। পাড়ার যে মহিলা বুনে দিয়েছিলেন চাদরটি, মৃদুলা তাঁর কাছ থেকেই ওই রকম একটি চাদর তৈরি করিয়ে শ্বশুরমশাইয়ের হাত দিয়ে পাঠিয়েছিলেন মহানায়িকাকে।
খুশি হয়েছেন তিনি, এই খবরটুকু তারিয়ে তারিয়ে কত মানুষকে যে পরে গল্প করেছেন মৃদুলা। |
|
|
|
|
|