|
|
|
|
|
তখন ড্রিমগার্ল, আর এখন?
দেব |
|
আমি আর বুম্বাদা শ্মশান থেকে ফিরছিলামও ওঁর ছবি নিয়ে আলোচনা করতে করতে! বুম্বাদা বলছিল অমুক ছবিটায় ওঁকে খুব ভাল লেগেছে। আমি বলছিলাম, না না। ওটা নয়। ‘সপ্তপদী’-তে বেস্ট। বা ‘আঁধি’-ও হতে পারে।
শ্মশান থেকে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাত্তিরে ঘুম থেকে উঠে ফ্ল্যাশব্যাকের মতো কেমন দৃশ্যগুলো ফিরে ফিরে আসছে। এখন অবাক হয়ে ভাবছি, কী অসাধারণ এই মহিলা! যিনি গত পঁয়ত্রিশ বছর জনসমক্ষে আসেননি। অথচ এখনকার দু’জন নায়ক তাঁকে নিয়েই কি না আলোচনা করে যাচ্ছে!
ধন্য এই স্টারডম! এটা পেতেই মানুষ স্টার হয়। আর তার পর সেটাকে হারিয়ে ফেলে। যেটাকে উনি অক্ষত রেখে চলে গেলেন। ঈশ্বর ওঁকে মহানায়িকা করেই ওপর থেকে পাঠিয়েছিলেন। নইলে এত কমপ্লিট প্যাকেজ সম্ভব নয়। হাসি, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানো, সৌন্দর্য। বাকি কাজটা ছিল এর পর ওঁর। যেটা অসাধারণ ভাবে করে উনি আবার মহানায়িকা হিসেবেই ওপরে ফেরত গেলেন।
সকালে মা মুম্বই থেকে ফোন করে বলল, শ্মশানে যাস কিন্তু। আমি বললাম নিশ্চয়ই যাব। কিন্তু তখনও ভাবিনি ওঁকে দেখতে পাব। রাইমাদের বাড়িতে এর আগে অনেক বার গেছি। কখনও ওঁকে দেখার সুযোগ হয়নি। ইন ফ্যাক্ট দেখার চেষ্টাও করিনি। ‘বুনো হাঁস’-এর শুটিংয়ের সময় মুনমুনদি বলল, মা তোমার নাচ টিভিতে দেখেছেন। রাইমাকে এক বার বলেওছেন, “এই ছেলেটি ভাল নাচে। তুই ওর সঙ্গে সিনেমা করিস।”
ফিল্মে আসার পর থেকে আমার বারবারই মনে হত, ইস আমাদের সময় যদি সুচিত্রা সেন থাকতেন! টিভিতে সুচিত্রার ছবি-টবি দেখলে মনে হত, ওরে দেব তোর তো ফোর্থ হিরো হলেও চলত। কোনও ভাবে যদি স্ক্রিন শেয়ার করতে পারতিস।
মুখাগ্নির সময় যখন বডিটা কফিন থেকে নামাচ্ছে, আচম্বিতে ওঁকে দেখার সুযোগ হয়ে গেল। টিভির পর্দায় দেখা আর এই সামনে থেকে দেখা, দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। ওটা ছিল থার্ড পার্সন। এটা ফার্স্ট পার্সন। ভাবতেই পারিনি আশি বছরের ওপর যাঁর বয়স, তাঁর মুখে এতটা মানসিক দৃঢ়তা অবশিষ্ট থাকতে পারে। নিজেকে নিজে বললাম, মাই গড! দেব অধিকারী, এখনও মুখের স্ট্রেংথটা দেখেছ? খুব শার্প ফিচার্স। মুখটা অসুস্থতায় ফুলে গেছে। কিন্তু প্রেজেন্সটা রাজরানির মতো।
রিয়া-রাইমার কাছে শুনেছি ওদের দিদিমা খুব স্ট্রং। খুব মুডি। খুব রাগি। দারুণ প্রেজেন্স। আজ কেওড়াতলায় সামনে থেকে দেখে আন্দাজ পেলাম, ওরা কী বলতে চেয়েছিল। আমার মনে হয় আজকের জেনারেশনের অভিনেত্রীদের ওঁর কাছ থেকে এই একটা জিনিস অবশ্য শিক্ষণীয়। নিজেকে কী ভাবে ঠিক রেখে প্রেজেন্ট করা উচিত। কী ভাবে ইমেজকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।
আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, স্টারডমের ‘অরা’টা কী! এত কাতারে কাতারে মানুষ, সব ওপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চ্যানেলে-চ্যানেলে ওঁকে নিয়ে আলোচনা। যাঁর জীবনের শেষ ছবি হয়ে গিয়েছে আমার জন্মের আগে, তিনি কী করে আজও এত প্রাসঙ্গিক থাকতে পারেন?
এত দিন মনে হত আহা উনি যদি আমার নায়িকা হতেন! ‘পাগলু’-তে আমার বিপরীতে উনি থাকলে আমি নির্ঘাত পাগলু হয়ে যেতাম। কিন্তু শ্মশান থেকে ফেরার পর আমার চিন্তাকেই উনি অন্য খাতে বইয়ে দিয়েছেন। এখন মনে হচ্ছে, আমাদের স্টারদের সবার ওঁকে অনুসরণ করা উচিত। এই যে ইমেজ রেখে চলে যাওয়া, এর জন্যই তো এত পরিশ্রম, এত সাধনা। ওঁর শবদেহের সামনে দাঁড়িয়ে একটা নীরব প্রতিজ্ঞা করলাম। চামড়া ঝুলে যাওয়া, ভুঁড়ি হয়ে যাওয়া, হাঁটতে না পারা অশক্ত চেহারা নিয়ে ফ্যানদের সামনে কখনও আসব না। তার চেয়ে তার আগে আমার মৃত্যু হয়ে যায়, তা-ও ভাল। |
|
|
|
|
|