এ উওম্যান স্যাট, ইন আনউওম্যানলি র্যাগস
প্লায়িং হার নিড্ল এন থ্রেড স্টিচ! স্টিচ! স্টিচ!
টমাস হুডের ‘দ্য সং অফ শার্ট’ স্কুলে আবৃত্তি করেছিল কৃষ্ণা। প্রায় সত্তর বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মডিউলেশনে কৃষ্ণার ‘স্টিচ-স্টিচ-স্টিচ’ বলার ভঙ্গি ভুলতে পারিনি।
কখনও খোলা চুলে, কখনও বা বেণীতে হাসিখুশি, শান্ত স্বভাবের কৃষ্ণার মুখটাও এখনও মনে আছে। স্কুলের সেলাই ক্লাসের দিদিমণি ছিলেন ওরই পিসি বাণী দাশগুপ্ত। থান কাপড় থেকে বেবি ফ্রক কাটার ক্লাস হচ্ছিল। আর আমি ছিলাম সেলাইয়ে বরাবরই মহাপণ্ডিত। কিছুতেই ফ্রক কেটে উঠতে পারছিলাম না। পিসির চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমার ফ্রক কেটে দিয়েছিল ও।
পাবনা শহরের স্টেশন বলতে ছিল ঈশ্বরডিহি। একমাত্র স্টেশনে যাওয়ার রাস্তা ছিল পাকা। বাকি সব রাস্তাই মোরামের। ওই রাস্তা দিয়েই আমরা স্কুলে যেতাম। ১৯৪২ সালে পাবনা গার্লস হাইস্কুলে ভর্তি হই। তখন অবশ্য আমার নাম ছিল আরতি। কৃষ্ণা ছিল আমার ক্লাসে।
আমি ক্লাস ফাইভে বাবা-মার সঙ্গে চলে গিয়েছিলাম দেহরাদূনে। ফিরে আসি আবার ক্লাস সেভেন-এ। তখনও ও আমার ক্লাসে। তখনই ভাল ভাবে পরিচয় হয়েছিল। ওরা ছিল পাঁচ বোন। তার মধ্যে মনে আছে চার বোনই পড়ত আমাদের স্কুলে। বোনেদের মধ্যে খুব ভাব ছিল। আর সবাই বড়বোন উমার কথা শুনেও চলত।
স্কুল থেকেই অভিনয়ের দিকে ঝোঁক ছিল কৃষ্ণার। স্কুলে আমরা একসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘পিঠে খেলে পিঠে সয়’ কিংবা ‘বসন্ত’ নাটকে অভিনয়ও করেছি। স্কুলের সব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও করত।
গানের গলাও ছিল খুব সুন্দর। স্কুলে ওর প্রিয় বন্ধু ছিল মলয়া রায়, বাসন্তী বসাক বা সুনন্দা লাহিড়ী। সব সময়ে এক বেঞ্চে বসত। স্কুলের পাঠ শেষ করার আগেই চলে গিয়েছিল সুনন্দা। বিদায়ী অনুষ্ঠানের দিন খালি গলায় গান গেয়েছিল কৃষ্ণা, ‘ভরা থাক স্মৃতিসুধায়...’। সেই শুনে ছাত্রী থেকে দিদিমণি সব্বাই চোখ মুছেছিলাম।
দেখতে তো সুন্দরী ছিলই। তখনকার আন্দাজে ‘স্টাইলিশ’-ও ছিল। কিন্তু তার চেয়েও বেশি কৃষ্ণার ছিল সেলাইয়ের হাত। ওর এমব্রয়ডারির কাজ স্কুলে নামকরা ছিল। তখনকার দিনে সেলাইয়ে ‘লেডি ব্র্যাবোর্ন’ ডিপ্লোমা ছিল খুবই নামকরা। সেই ডিপ্লোমা পরীক্ষাতেও সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছিল কৃষ্ণা।
আমার পাবনায় ম্যাট্রিক অবধি আর পড়া হয়নি। তার আগেই ১৯৪৭ সালে বাবা চলে এলেন কলকাতায়। আমিও এলাম বাবার সঙ্গে। পরে ১৯৫৩ সালে তখন প্রেসিডেন্সিতে পড়ছি। সে সময়েই পাবনার বন্ধু রেখা এক দিন ডেকে বলল, ‘শুনেছিস! কৃষ্ণা সিনেমায় নেমেছে। নতুন একটা সিনেমা বেরিয়েছে, সাড়ে চুয়াত্তর। তাতে ও অভিনয় করেছে।’ তখনকার দিনে সিনেমায় নামাটা খুব ভাল চোখে দেখা হত না। আমরাও দেখিনি।
তার পরে অবশ্য যত ওর অভিনয় দেখেছি তত মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। কী সুন্দরী, কী স্মার্ট! তবে স্কুলের সেই কৃষ্ণাকে কিন্তু সিনেমায় তেমন করে খুঁজে পাওয়া যায় না। স্কুলের কৃষ্ণাকে খুঁজে পেয়েছি ওর নাতনি রাইমার মধ্যে। প্রথম যে দিন রাইমার ছবি দেখেছিলাম কাগজে, চমকে উঠেছিলাম। এ যে এক্কেবারে চল্লিশ দশকের কৃষ্ণা!
|