সাজার মেয়াদ উত্তীর্ণ বাংলাদেশী বন্দি প্রবালচন্দ্র রায়ের বৃহস্পতিবার রাতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। শুক্রবার তাঁর দেহ ময়না তদন্ত হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্টে বহরমপুরের কেন্দ্রীয় সংশোধাগারের ওই কয়েদি ‘আত্মঘাতী’ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মাস খানেক আগে সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রবালচন্দ্রের। বাংলাদেশের দিনাজপুরের বাড়িতে তাঁকে পাঠানোর ব্যাপারে জেল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে উদ্যোগী হয়েছিল। এই অবস্থায় কেন সে আত্মঘাতী হল তিনি প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
এ দিন রাতে সংশোধনাগারের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে ওই রাতে ২৫২ জন আবাসিকের সঙ্গে ওই কয়েদিও ছিলেন। মাঘের কনকনে ঠাণ্ডায় আপাদমস্তক কম্বল মুড়ে শুয়ে ধারালো ধারালো কোনও কিছু দিয়ে তিনি নিজের শ্বাসনালী কাটেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ওই কয়েদি আচমকা বিকট চিৎকার করে। শব্দে শুনে অন্যান্য বন্দিদের ঘুম ভাঙে। দেখা যায় প্রবালবাবুর গলা থেকে গলগল করে রক্ত ঝরছে। তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে জানান। ধারালো কোনও কিছু দিয়ে শ্বাসনালি কেটে ওই কয়েদি আত্মঘাতী হয়েছে বলে জানানো হয়েছে জেল কর্তৃপক্ষের তরফে।
তবে সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে সংশোধানাগারের মধ্যে ধারালো ওই ‘অস্ত্র’ কী ভাবে এল? জেলের সুপার অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আবাসিকরা অনেক সময়ে স্টিলের বা অ্যালোমিনিয়ামের চামচ এবং থালাকে ঘষে ঘষে ধারালো করে তোলে। পরে তা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখনও ওই অস্ত্রের খোঁজ মেলেনি। তবে যেখানে ওই কয়েদি যেখানে ছিল, ওয়ার্ডের সেই অংশটুকু ঘিরে রাখা হয়েছে। গোটা বিষয়টি কোনও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে তদন্তের জন্য বলা হয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।”
শুক্রবার দুপুরে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কল্লোল ভট্টাচার্য বহরমপুর পুলিশ মর্গে গিয়ে মৃতদেহের সুরতহাল করেন। জেল সুপার অরিন্দমবাবু বলেন, “মৃত কয়েদির বাড়ি বাংলাদেশের দিনাজপুরে। মাস খানেক আগে তার সাজার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তাকে বাড়ি পাঠানোর জন্য সরকারি স্তরে অনুমতি নেওয়ার কাজ চলছিল। কিন্তু তার আগেই ওই বিপত্তি ঘটে গেল। এখন তার মৃতদেহ বাড়ি পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ হাই কমিশনারের সঙ্গে কথা চলছে।” |