ইমামরা উদ্যোগী হয়েছিলেন আগেই। এবার নাবালিকা বিয়ে রুখতে এগিয়ে এল মুর্শিদাবাদের সুতিঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়ারা। নিজেদের পরিবারের পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে তারা বেছে নিয়েছে নাটককে। স্কুলের প্রাক্তন এক ছাত্রের লেখা সেই নাটক তারা মঞ্চস্থও করছে। পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন শিক্ষকরা। সম্প্রতি রবিবার সর্বশিক্ষা মিশনের পক্ষ থেকে ওই পড়ুয়াদের হাতে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কারের পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে নগদ পাঁচ হাজার টাকা, মানপত্র ও ট্রফি।
বেলডাঙা ১ ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম সুতিঘাটা। জনসংখ্যা প্রায় ১২০০। শিক্ষার হার মেরেকেটে তিরিশ শতাংশ। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই গ্রামে এখনও কোনও স্নাতক নেই। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ দিনমজুর। নাবালিকার বিয়ে পরিচিত ঘটনা। গত দু’ বছরে এ গ্রামে অন্তত তিরিশটি নাবালিকা বিয়ে হয়েছে।
|
চলছে মহড়া। —নিজস্ব চিত্র। |
কিন্তু খুদে পড়ুয়ারাদের মাথায় এরকম ভাবনা এল কীভাবে? শিক্ষকরা জানিয়েছেন, নাবালিকার বিয়ের খবর পেলে মাঝেমধ্যে গ্রামে পুলিশের গাড়ি আসত। একদিন স্কুলের কয়েকজন পড়ুয়া স্কুলের শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করে— ‘গ্রামে গোলমাল নেই। তবুও পুলিশ আসে কেন?’ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বাল্যবিবাহ ও তার কুফল নিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করেন শিক্ষকরা। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ হিলালউদ্দিন বলেন, “মানুষকে সচেতন করার অন্যতম মাধ্যম নাটক। আমাদের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র, সাদ্দাম হোসেন লিখে ফেলে একটা ছোট নাটকও। নাটকে অভিনয় করছে পড়ুয়ারা।” নাটকের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের স্কুলব্যাগকেও ব্যবহার করা হচ্ছে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে। নীল রঙের ব্যাগের উপর সাঁটানো হয়েছে স্টিকার। সেখানে স্কুল ও পড়ুয়ার ছবি সহ নামের সঙ্গে লাল কালিতে লেখা রয়েছে‘উচ্চ শিক্ষা এগিয়ে যাক বাল্য বিবাহ নিপাত যাক’ এর মতো কিছু স্লোগান।
গত ২ জানুয়ারি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিদর্শক রাখী মণ্ডল স্কুলে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “শিক্ষকদের মুখ থেকে বিষয়টি শোনার পর খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। পুরস্কারটা ওদের প্রাপ্য।” তৃতীয় শ্রেণির নাসিমা খাতুন, চতুর্থ শ্রেণির পারভিনা খাতুনদের কথায়, “মাস্টারমশাইরা বলেছেন যে আমরাই পারি নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে। তাই মন দিয়ে নাটক করছি।” গ্রামের করিমা বিবি, জামিরুল হকরা সমস্বরে বলছেন, “ওদের নাটকটা দেখতে দেখতে চোখে জল চলে এসেছিল। ঢের হয়েছে, নাবালিকা বিয়ে আর নয়।”
সুতিঘাটার সাদ্দাম বেলডাঙা কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি বলেন, “গ্রামে নাবালিকা বিয়ের চল রয়েছে। রয়েছে সচেতনতার অভাবও। তাই এতদিন ধরে দেখা ঘটনাগুলোকে এক জায়গায় করে নাটকটা লিখেছি।” বেলডাঙা ১ বিডিও শুভ্রাংশু মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি অভিনব তো বটেই। স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও প্রশংসনীয়।” |