ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুক্রবারও অব্যাহত থাকল ছাত্র সংঘর্ষ। এ দিন কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়ার সুধীরঞ্জন লাহিড়ি কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে ব্যাপক গণ্ডগোল হয়। হয় বোমাবাজিও। এ দিন এসএফআই সমর্থকরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তাদের মারধর করে হঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। এসএফআইয়ের অভিযোগ, তারা ওই কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। ঘটনার প্রতিবাদে এসএফআই সমর্থকরা বেশ কিছু সময় মাজদিয়ার ভাজনঘাট মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের হঠিয়ে দেয়।
বৃহস্পতিবারও এসএফআই সমর্থকরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তাদের মারধর করে হঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। এ দিনও সেই ঘটনার পুরনরাবৃত্তি হয়। শুরু হয় বোমাবাজি। কলেজের সামনে পুলিশকে মাঝখানে রেখে দু’পক্ষই পরস্পরের দিকে ইট ছুড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত এসএফআই মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারায় তারা ভাজনঘাট মোড়ে গিয়ে পথ অবরোধ করলে ছুটে আসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কয়েকজন সমর্থক। |
পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তাজা বোমা উদ্ধার করে। এসএফআই-এর জেলা সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, “ওরা গতকালকের মতই আমাদের বাধা দিল। মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে আমাদের বোমা মেরে হঠিয়ে দেয়।”
অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অয়ন দত্ত বলেন, “ছাত্ররা আমাদের পাশে রয়েছে। তাই আমাদের বোমা মারার প্রয়োজন হয় না।” কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনে ৫৪ আসনে ৫৮টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। কৃষ্ণনগর (সদর) মহকুমাশাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছে। উভয় পক্ষকে সংযত হতে অনুরোধ করেছি।”
অন্য দিকে, শুক্রবারও করিমপুর পান্নাদেবী কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ঘিরে গণ্ডগোল বাধে। এসএফআইয়ের অভিযোগ, মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার ছিল কলেজের ৪৯ টি আসনে লড়াইয়ের জন্য বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন। প্রথম দিন ছাত্র পরিষদকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কয়েকজন বাধা দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদে শুক্রবার ১২ ঘণ্টা করিমপুর বনধে্র ডাক দিয়েছিল কংগ্রেস। |
১২ ঘণ্টার বনধে সুনসান করিমপুর। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক। |
শুক্রবার ফের এক অভিযোগ তোলে এসএফআই। তাদের দাবি, মনোনয়নের আগেই রাস্তায় বোমা ছুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাড়া করা হয় তাদের। স্থানীয় বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘গতকালের পরিস্থিতির কথা ভেবে এ দিন সংগঠিত হয়ে কলেজে যাচ্ছিলাম। কলেজের রাস্তায় পা রাখতেই আমাকে লক্ষ করে বোমা ছোড়ে তৃণমূলের গুন্ডারা।
অন্য কোনও ছাত্র সংগঠন মনোনয়নপত্র জমা না দিতে পারায় এ দিন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ছাত্র সংসদ দখলে নিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা চিররঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা আগেই জানতাম এখানে অন্যদের অস্তিত্ব নেই। নিজেদের নিশ্চিত পরাজয় বুঝে বিরোধীরা এমন করছে।’’ কংগ্রেসের ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধের পাশাপাশি এ দিন বামেদের পক্ষ থেকে করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয়। অভিযোগ, স্থানীয় বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ-সহ এসএফআই সমর্থক ছাত্রছাত্রীরা এ দিন মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তৃণমূল বাধা দেয়। এমনকি বিধায়ককে লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। তৃণমূলের দাবি মিছিল করে বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে ঢুকতে গেলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে ওদের তাড়া করে। সে সময় এসএফআই সমর্থকরাই বোমা ছোড়ে। কলেজের অধ্যক্ষ অবাদুল হক বলেন, “কলেজ চত্বরে কোনও গণ্ডগোল হয়নি। কলেজের বাইরে কোনও সমস্যা হলে তা নিয়ে আণার কিছু বলার নেই।” তেহট্টের এসডিপিও সুনীল সিকদার বলেন, ‘‘বোমা পড়েছে বলে শুনেছি। ওই ঘটনায় কোনও অভিযোগ হয়নি কেউ গ্রেফতারও হয়নি।’’ |