একই পরিবারের তিন মহিলা খুনের ঘটনায় ‘জ্যোতিষী’ নিত্যানন্দ দাস গ্রেফতার হওয়ার পরে নড়ে বসলেন শহরের হোটেল মালিকরা। ওই ঘটনার পরে শহরের বিভিন্ন হোটেলে ‘চেম্বার’ খুলে জ্যোতিষ চর্চায় নিয়ন্ত্রণ চাইছে বহরমপুর হোটেল মালিক সংগঠন। বহরমপুর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুর্যান্ট ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোজ সরকার বলেন, “ওই ঘটনার পরে বিভিন্ন হোটেল মালিক এখন জ্যোতিষীদের ঘর ভাড়া দিতে চাইছেন না।”
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ‘জ্যোতিষী’ নিত্যানন্দ দাস গত ডিসেম্বর থেকে বহরমপুর গ্রান্ট হল লাগোয়া একটি হোটেলের ঘর ভাড়া নিয়ে ‘কোষ্ঠী বিচার’ শুরু করে। গত ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে তার কাছে কোষ্ঠী বিচারের জন্য বিজয়াদেবী ওই হোটেলে গিয়েছিলেন। হোটেলের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থেকে পুলিশ ওই তথ্য জানতে পারে। ওই হোটেল মালিক তথা হোটেল মালিক সংগঠনের সম্পাদক সঞ্জীব সিংহ বলেন, “ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সব জ্যোতিষীদের ঘর ভাড়া দেব না।”
সম্প্রতি শহরের হোটেল মালিক সংগঠনের ১৭জন সদস্যকে নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত জ্যোতিষী ছাড়া কোনও ভুঁইফোঁড় তান্ত্রিক বা গণককে হোটেলে ঘর ভাড়া দেওয়া হবে না।
দীর্ঘদিন ধরে বহরমপুরের হাতে গোনা কয়েকটি হোটেল ছাড়া অধিকাংশ হোটেলে জ্যোতিষীদের রমরমা ব্যবসা রয়েছে। বহরমপুর গ্রান্ট হল লাগোয়া ওই হোটেল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুরুতে ৮০০ টাকা দরের ঘর ভাড়া নিত নিত্যানন্দ। কখনও কখনও ওই ঘর ফাঁকা না পেয়ে ৪০০ টাকার ঘরও ভাড়া নিয়েছে সে। সঞ্জীববাবু বলেন, “জ্যোতিষীদের ঘর ভাড়া দিয়ে বাড়তি কোনও রোজগার হয় না। সেই সঙ্গে গ্রাহক এলে তাঁদের জ্যোতিষীর ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আলাদা করে হোটেল কর্মী নিয়োগও করতে হয়। ওই ঝামেলা এড়াতেই এখন জ্যোতিষীদের ঘর দেব না বলেই ঠিক করেছি।”
বহরমপুরের একটি হোটেলে প্রায় পাঁচ বছর ধরে ‘চেম্বার’ চালান জ্যোতিষী কমল শাস্ত্রী। তিনি বলেন, “খুনের ঘটনায় নিত্যানন্দের জড়িত থাকা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা সততার সঙ্গে কাজ করি। এই সিদ্ধান্তে আমাদের খুবই অসুবিধা হবে।” এই শহরেই দীর্ঘদিন ধরে জ্যোতিষ চর্চা করছেন অমিত শাস্ত্রীও। তিনি বলেন, “কিছু কিছু মানুষ অন্যায় করে। আর তার ফল ভোগ করতে অন্যদের। বহরমপুরের হোটেল কর্তৃপক্ষ যদি এ জাতীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তা হলে আমরা সমস্যায় পড়ব।”
এ দিকে ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, ২০০৭ সালে শান্তিপুরে মাসির বাড়িতে গিয়ে মাসিকে মাদক খাইয়ে প্রায় ১০ ভরি সোনার গয়না চুরি করে পালিয়েছিল নিত্যানন্দ। ওই মহিলা পরে শান্তিপুর থানায় নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেন। কিন্তু তখনও ধরা পড়েনি নিত্যানন্দ। ওই ঘটনায় পুলিশের খাতায় নিত্যানন্দকে এখনও ‘ফেরার’ বলে দেখানো হয়েছে।
গত ৪ জানুয়ারি বহরমপুরের একটি আবাসনের একটি ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে বৃদ্ধা প্রভা দাস, তাঁর মধ্য-চল্লিশের ভাইঝি বিজয়া বসু ও বিজয়াদেবীর মেয়ে আত্রেয়ী বসুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত জ্যোতিষী নিত্যানন্দ দাস এখন পুলিশ হেফাজতে। |