দিন্দার জন্মদিনের পার্টিতেও বাংলার চিন্তা বাইশ গজ
১৭ জানুয়ারি
নীল জার্সি পরা চেহারাগুলো ভিড় করে দাঁড়িয়ে। মধ্যমণি ততক্ষণে ছুরি হাতে একটা প্রমাণ-সাইজ কেকের দিকে এগোচ্ছেন। তাঁর স্বভাবসিদ্ধ অফুরন্ত এনার্জি-সাইক্লোন দেখে কে বলবে, সাড়ে তিন ঘণ্টার প্র্যাকটিস পর্ব মিটিয়ে সবে টিম বাস থেকে হোটেল লবিতে। জার্সি পাল্টে ঘরোয়া বেশভূষার ব্যাপার নেই, ক্রিকেট-ট্রলিটাও একপাশে দাঁড় করানো। বরং কেকের প্রথম টুকরোটা কোচ অশোক মলহোত্রের মুখে গুঁজে দিয়ে আচমকা একটা বার্তা দিয়ে বসলেন অশোক দিন্দা।
“চলো, আমরা একটা প্রতিজ্ঞা করি। আজ যেমন আমরা কেক কাটলাম, ঠিক তেমনই আবার একটা কাটব। সেমিফাইনালটা জিতে।”
মহানায়িকার প্রয়াণের দিনে বঙ্গ পেস-নায়কের তিরিশে পা। দিন্দা এখন অনেক পাল্টে গিয়েছেন। আগে ‘বিতর্ক’ শব্দটা তাঁর নামের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই জুড়ে যেত, বর্তমানে সেটা অতীত। ভারত কম, বেঙ্গল এক্সপ্রেসের মস্তিষ্কের অধিকাংশে এখন বাংলা। কেক মাখা অবস্থাতেও অস্ফুটে বলতে বলতে যান, “জন্মদিন আরও আসবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগটা নয়।” বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ড করার কথাও আর ভাবতে পারেন না দিন্দা। টিমের বর্তমান বোলিং ক্যাপ্টেন তিনি, সার্কলে থাকলে ব্যাটসম্যানের ভুল ধরা পড়ে ভাল, বাকিদেরও বলা যায়, তাই।

আজ শুরু রঞ্জি সেমিফাইনাল। প্র্যাকটিসে ক্যাপ্টেনের কাঁধে
আশ্বাসের হাত কোচের। শুক্রবার ইনদওরে।
এবং আজও অশোক দিন্দা ম্যাচের প্রাক্-মুহূর্তে প্রতিপক্ষকে ‘ঝাঁঝরা’ করে দিতে বড় ভালবাসেন! বিজয় জোল বনাম বেঙ্গল এক্সপ্রেসের বাগ্যুদ্ধ তো এ দিনই চালু হয়ে গেল।
শনিবাসরীয় ইনদওরে বাংলা যে সেমিফাইনালটা খেলতে নামছে, তার ট্যাগলাইন আবিষ্কার করেছে জাতীয় মিডিয়া। বাংলা বোলিং বনাম মহারাষ্ট্র ব্যাটিং। টিম দিন্দা বনাম টিম জোল। বাংলার পেস ব্যাটারি যদি সম্মিলিত ভাবে চলতি রঞ্জিতে আটাত্তর উইকেট নিয়ে থাকে, তা হলে কেদার যাদব-হর্ষদ খাড়িওয়ালে-জোল মিলে রান করেছেন আড়াই হাজার! আর ব্যক্তি-মাহাত্ম্য বর্জিত মরাঠা সংসারে অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস ধরা পড়ছে জাহির খানের মুম্বই-বধের পর।
অনূর্ধ্ব উনিশ ভারত অধিনায়ক জোল শুক্রবার দু’টো কথা বললেন। দিন্দা ভাল। কিন্তু জাহিরকে খেলার পর অসুবিধে হবে না। আর স্লেজিং করে লাভ নেই, ক্ষতি আছে।
শুনে আবার দিন্দার পাল্টা, দু’টোর উত্তরে তিনটে।
জাহির আমার গুরু। গুরুকে সামলেছে বলে শিষ্যকেও সামলে দেবে, মানে নেই। যাদবরা বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকবে না!
ব্যাটসম্যানের এক দিন ভাল যায়। রোজ নয়।
শনিবার থেকে তিনি মাঠে নামবেন ব্যাটসম্যানকে ‘হিট’ করার মানসিকতা নিয়ে। মানে, ধ্বংস!
এত পর্যন্ত কাঁটার খোঁজ নয়, শিরশিরে উত্তেজনাটা চোখে পড়বে শুধু। কিন্তু আছে। দিন্দা নিয়ে আনন্দ-যজ্ঞেও কাঁটা আছে। ইন্দওরের পিচ।

সেমিফাইনাল শুরুর আগে অন্য মেজাজ। দিন্দার জন্মদিনে
তাঁকে কেক খাওয়াচ্ছেন লক্ষ্মী। শুক্রবার ইনদওরে।
এমনিতেই স্লো ওভার রেটের প্রকোপ থেকে লক্ষ্মীকে ‘বাঁচাতে’ দিন্দাকে দিয়ে টস করানোর কূটবুদ্ধি কাজে আসছে না। বোর্ডের নিয়ম: স্লো ওভার রেটের জন্য নির্বাসন-দণ্ড হলে তা বর্তাবে যাঁকে মরসুমের গোড়া থেকে অধিনায়ক করা হয়েছে তাঁর উপর। অস্থায়ী ক্যাপ্টেনের উপর নয়। বাংলা সেটা পরে জানল। তার উপর সকালে প্র্যাকটিসে বাংলা দেখতে পায় যে, মোটা দাঁড়ার ব্রাশ চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘাসের উপর! যা দেখে কারও কারও মেজাজ বিক্ষিপ্ত। ঘাস ছাঁটা হয়েছে, সবুজ আভা ব্যাপারটাও মরে এসেছে অনেকটা। টস জিতলে ফিল্ডিং এখনও নেওয়া হবে। কিন্তু বঙ্গ শিবির বুঝেছে, উইকেট এখন ততটাই পেসারদের নিশ্চিন্ত বিচরণভূমি, যতটা ব্যাটসম্যানের।
যার পরপরই ব্যাটসম্যানদের নিয়ে পড়লেন অশোক। নেটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মিনিটে-মিনিটে গর্জন।
“সেমিফাইনালে যদি পাঁচ ওভারের বেশি বাংলার ওভার রেট কম থাকে,
তা হলে লক্ষ্মী নির্বাসিত হবে। কিন্তু পাঁচ ওভার পর্যন্ত থাকলে ক্যাপ্টেনের একশো শতাংশ
ম্যাচ ফি-ই কাটা যাবে। নির্বাসন নয়।” —
লক্ষ্মী একবার ডিফেন্স করলেন। প্রায় তেড়ে এলেন বঙ্গ কোচ— করছ কী, তুমি কেন ডিফেন্স করবে? ওপেনার অরিন্দম দাসের ব্যাট থেকে একটা কভার ড্রাইভ এবং অশোকের হুঙ্কার, “কভার ড্রাইভ নয়, তুমি উইকেটে থাকো। বাংলাও তা হলে ম্যাচে থাকবে!’’
প্রত্যাশার অন্তহীন চাপ?
কে জানে। শোনা গেল, রোজই কেউ না কেউ ফোন করছেন বঙ্গ কোচকে। মেসেজে উপচে পড়ছে ইনবক্স। সাধারণ, নামী-দামি। একজন যেমন মেসেজ করেছেন: এত দূর গিয়েছ যখন, সেমিফাইনাল জিতে ফিরো।
ভদ্রলোকের নাম? বিষেণ সিংহ বেদী!

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.